সমৃদ্ধি অর্জন করতে গিয়ে সমুদ্রের পরিবেশে বিঘ্ন নয়: প্রধানমন্ত্রী
শান্তি, নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে গিয়ে যেন সমুদ্রের সুস্থ পরিবেশ বিঘ্নিত না হয় সেজন্য সুনীল অর্থনীতির পাশাপাশি সুনীল চিন্তাও করতে হবে আমাদের।
ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ)এর তৃতীয় মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী বক্তব্যে এ কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সম্মেলন শুরু হয়।
ব্লু-ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি নিয়ে ভারত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক জোটের তৃতীয় এ সম্মেলনে অংশ নিতে বিশ্বের ৩০টির বেশি দেশের মন্ত্রী-উপমন্ত্রী সচিবসহ উচ্চ পর্যায়ের শতাধিক প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সমুদ্রের পরিবেশ রক্ষা করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা সুনীল অর্থনীতির (ব্লু ইকোনমি) জন্য সমন্বিত, লাভজনক ও সমুদ্র সংরক্ষণমূলক নীতি নির্ধারণ ও সে অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে।
তিনি বলেন, “সাগর-মহাসাগর গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রায় ৩০ শতাংশ এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯০ শতাংশ শোষণ করে। সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র (মেরিন ইকোলজি) ধ্বংস হলে মানবজাতির অস্তিত্বও ধ্বংসের মুখে পড়বে। আর তাই অতিসত্বর সকলে মিলে এই বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।”
মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সুনীল অর্থনীতির গুরুত্ব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ও তেল পরিবহনের ৬০ শতাংশ এই সাগর-মহাসাগর দিয়েই হচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে সমুদ্র-বাণিজ্যের পরিমাণ ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ৯০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৯ বিলিয়ন মানুষের জীবনধারণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এই সুনীল অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।”
সুনীল অর্থনীতি নিয়ে সম্মিলিত কর্মকাণ্ড ও সচেতনতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, “সমুদ্রকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সকল প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও আমাদের সচেতন হতে হবে। মহাসাগর ও তার বিপুল সম্পদ সংরক্ষণে আমরা যত বেশি বিনিয়োগ করব, যত বেশি পদক্ষেপ নিব, তা সামগ্রিকভাবে দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে আনবে।”
বাংলাদেশ ১ অক্টোবর দু’বছরের জন্য আইওআরএএর সহ-সভাপতি এবং ২০২১ সালের ১ অক্টোবর পরবর্তী দু’বছরের জন্য সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অবসরপ্রাপ্ত) এম খোরশেদ আলম।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ বন ও মৎস্যমন্ত্রী মাখোত্সু মাগদিলিন-সাথিউ, আইওআরএএর সেক্রেটারি জেনারেল রাষ্ট্রদূত ড. নমভোয় এন নকওয়ে এবং ইন্টারন্যাশনাল সি বেড অথরিটির সেক্রেটারি জেনারেল মাইকেল ডব্লুও লজ।
ভারত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক জোট বা ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ)এর আইওআরএর সদস্য দেশগুলো এশিয়া, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া এই তিনটি মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো হল, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, কোমোরোস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, মরিশাস, মোজাম্বিক, ওমান, সিসিলি, সিঙ্গাপুর, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন।