লেবাননে স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল
হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে 'সীমিত' স্থল অভিযান শুরু করার ঘোষণা দেওয়ার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের সেনারা লেবাননে প্রবেশ করেছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে চালানো এই স্থল অভিযানের পর লেবাননে তারা দীর্ঘমেয়াদে দখল ধরে রাখবেন না। তবে তারা অভিযানটির নির্দিষ্ট সময়সীমা সম্পর্কে কিছু জানায়নি।
সীমান্ত এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা হামলা এবং গোলাবর্ষণের পর এই অভিযান শুরু হয়।
আইডিএফের বরাতে সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যস্থল ও অবকাঠামোর বিরুদ্ধে সীমিত ও লক্ষ্যভেদী স্থল হামলা শুরু করেছে। এ হামলায় সীমান্তের কাছে অবস্থিত 'ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে থাকা' বেশ কিছু লেবাননি গ্রামকে টার্গেট করা হয়েছে।
এর আগে লেবাননে স্থল হামলা চালানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রকে জানায় ইসরায়েল। সোমবার রাতে লেবাননে স্থল হামলার অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের নিরাপত্তা পরিষদ।
এছাড়া ইসরায়েল দক্ষিণ বৈরুতের উপশহরগুলোতে আরও বিমান হামলা চালিয়েছে। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর বেশ কয়েকটি এলাকায় বোমাবর্ষণ করা হয়েছে।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, মুখে সীমিত আকারে বললেও ইসরায়েলের স্থল হামলা আদতে সীমিত নয়।
ব্রাসেলসভিত্তিক সামরিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এলিজা ম্যাগনিয়ার আল-জাজিরাকে বলে, লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর সেনাসংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সীমিত স্থল অভিযান না চালিয়ে ইসরায়েল সম্ভবত দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর বিশেষ বাহিনীকে ঘিরে ফেলে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছে।
ম্যাগনিয়ার আল জাজিরাকে বলেন, 'ঘটনা আসলে ইসরায়েলিরা যা বলছে, সেরকম নয়। ওপেন সোর্সের [তথ্য] ভিত্তিতে আমরা যা বুঝতে পারছি সেটা হচ্ছে, ইসরায়েল অন্ততত ১৮টি ব্রিগেড প্রস্তুত করেছে। অর্থাৎ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ সেনা।'
তিনি বলেন, হিজবুল্লাহর মূল সামরিক শক্তি হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট এবং বিশেষ বাহিনী। ইসরায়েলের ধারণা, তারা হিজবুল্লাহর বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট ধ্বংস করেছে—কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ। এখন ইসরায়েলের লক্ষ্য হিজবুল্লাহর বিশেষ বাহিনীকে ঘিরে ফেলা—যাদের মধ্যে দুটি ইউনিট লিতানি নদীর দক্ষিণে এবং একটি ইউনিট উত্তরে মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৯৫ জন নিহত হয়েছেন।
সোমবার ভোরে বৈরুতের ভেতরে প্রথমবারের মতো বিমান হামলা চালানো হয়েছে, যা ৭ অক্টোবরের পর প্রথম।
কয়েকদিন আগে ইসরায়েল হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করেছে। যুদ্ধের এই উত্তেজনা বাড়ার ফলে লেবাননে বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা শিগগিরই নাসরুল্লাহর উত্তরসূরি নেতা নির্বাচন করবে। এছাড়াও তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে ইরান সমর্থিত যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফ্রন্টে হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। ইতিমধ্যে ইয়েমেনের হুথিদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।