বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত ‘মানব ক্যালকুলেটর’, কাজ করছেন মানুষের গণিতভীতি কাটাতে
গণিত নিয়ে মানুষের ভীতি কাটানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন মেন্টাল ক্যালকুলেশন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা ইউনিভার্সিটি অব দিল্লির ২০ বছর বয়সী গণিতের শিক্ষার্থী নীলকণ্ঠ ভানু প্রকাশ।
হায়দ্রাবাদের এ যুবক চলতি বছরের আগস্টে মাইন্ড স্পোর্টস অলিম্পিয়াডে ৩০ জন প্রতিযোগীকে হারিয়ে মেন্টাল ক্যালকুলেশন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। তিনি নিজেকে 'মেন্টাল স্প্রিন্টার' বলেন এবং নিজের দক্ষতাকে খেলাধুলার দক্ষতার সাথে তুলনা করেন বলে আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, "মানুষের গণিত ভীতি দূর করাই আমার জীবনের লক্ষ্য। আমার খ্যাতি ও অর্জনকে এই কাজে ব্যবহার করবো। মানুষ গণিতে আগ্রহী না-ই হতে পারে, তবে কোনো ভীতি থাকা উচিৎ নয়।"
১৯৯৭ সালে লন্ডনে মাইন্ড স্পোর্টস অলিম্পিয়াড শুরু হয়। এবছর কোভিড-১৯ মহামারির ফলে অনলাইনেই অনুষ্ঠিত হয় এ অলম্পিয়াড।
তিনি নিজেকে জিনিয়াস কিংবা সহজাতভাবে প্রাপ্ত বুদ্ধিমত্তার অধিকারী মনে করেন না। দীর্ঘদিনের অনুশীলনের ফলেই তার গণনার গতি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।
পাঁচ বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনায় মাথায় চোট পাওয়ার পর, বিশ্রামের সময় তার গণনায় আগ্রহের সৃষ্টি হয়। ওই সময়েই মাথার ভেতর দ্রুত অঙ্ক কষার অনুশীলন শুরু করেন তিনি।
তিনি বলেন, "এই দুর্ঘটনা না হলে হয়তো আমার এদিকে আগ্রহ-ই তৈরি হতো না।"
তার এই ব্যতিক্রমী আগ্রহের ব্যাপারে তার মধ্যবিত্ত পরিবার সবসময় তাকে উৎসাহ ও সমর্থন দেয়ায় তিনি ভাগ্যবান বলে জানান।
মানসিক এই দক্ষতাকে শারীরিক দক্ষতার সাথে তুলনা দিয়ে বলেন, মানসিক প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। পেশীশক্তির বদলে জ্ঞান ভিত্তিক ক্ষমতা গড়ে তোলে এই অনুশীলন।
তবে তার জীবন একেবারেই গণিত কেন্দ্রিক নয়। তিনি টিভি দেখতে, ইতিহাসের বই পড়তে ও নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন।
বর্তমানে বিদ্যালয়গুলোতে যেই পদ্ধতিতে গণিত শেখানো হয় প্রকাশ এব্যাপারে সন্তুষ্ট নন। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে গণিত শিক্ষার উদ্দেশ্যের নতুন সংজ্ঞায়নের জন্য 'এক্সপ্লোরিং ইনফিনিটিস' নামের একটি উদ্যোগ নিয়েছেন।
তিনি এক্সপ্লোরিং ইনফিনিটিস-কে বিশ্বের বৃহত্তম গণিত স্টার্টআপ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। ইতোমধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ বিভিন্ন দেশ থেকে গণিত শিক্ষা নিয়ে কথা বলার আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
প্রকাশ বলেন, "বিশ্বব্যাপী গণিত ভীতি দূর করাই আমার পরিকল্পনা। এটি তখনই সম্ভব যখন আমরা বুঝতে পারবো, স্কুলগুলোতে যেই পদ্ধতিতে গণিত শেখানো হয় তা সমস্যা যুক্ত। একটি ভাষা শেখার মতো করে গণিত শিখতে হয়। গল্প কবিতার মতো সৃজনশীল উপায়ে আমরা ভাষা শেখা শুরু করার পর ব্যকরণ পড়ি। কিন্তু গণিতের বেলায় নিয়মকানুন আগে শিখতে হয়, ফলে মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হয়।"