যশোরের ভবদহে জলাবদ্ধতায় দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ
টানা বৃষ্টিতে যশোরের ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামান্য কিছু শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও, নিয়মিত পাঠদান হচ্ছে না। শুধুমাত্র শিক্ষকরা স্কুলগুলোতে উপস্থিত হয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
লঘুচাপের কারণে ১৩ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর টানা বৃষ্টির ফলে ভবদহ অঞ্চলে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যার কারণে গত ২০ দিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মাহফুজুল হোসেন বলেন, "যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার ৫১টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। তাই সেগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পানি সরে গেলে আবারও চালু হবে।"
এদিকে যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল আলম বলেন, "যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার ৯৩টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। শিক্ষকদের বিকল্প উপায়ে যথাসম্ভব শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।"
তবে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী বলেন, "মূল ধারার এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন মিলে দুইশর বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ রয়েছে।"
এ এলাকার স্কুলগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর ন্যূনতম পরিবেশ নেই বলে জানিয়েছেন অভয়নগর উপজেলার রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান মল্লিক। তিনি বলেন, "জলাবদ্ধতার কারণে মাঠে, পথে ও চারপাশে কোমর পর্যন্ত পানি থাকায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছে না।"
তিনি আরও বলেন, "বাড়িঘরে পানি ওঠায় এলাকার দশটি পরিবার তাদের বাড়ি ছেড়ে স্কুল বিল্ডিংয়ের দোতলার তিনটি রুমে অবস্থান করছেন। ফলে ক্লাস করার ন্যূনতম পরিবেশ এখানে নেই। ক্লাস কার্যক্রম প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ থাকার বিষয়টি শিক্ষা অফিসারদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।"
একইভাবে বিদ্যানন্দকাটি রাসবিহারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দীন বলেন, "এলাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এরই মধ্যে স্কুল ভবনের নিচতলায় পানি উঠে গেছে। ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে দ্বিতীয় তলায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসতে পারছে না। ফলে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না।"
অভয়নগরের সোড়াডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থী অরুণ কুমার বলেন, "আমাদের বাড়িতে পানি, স্কুলেও পানি। বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে হলে, কোথাও কোথাও বুক সমান পানি পার হয়ে যেতে হয়। তাহলে স্কুলে যাব কী করে?"
শিক্ষার্থীদের বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় তারা স্কুলে যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কেশবপুর উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষকরা স্কুলের পাশে যেকোনো উঁচু স্থানে বা অন্যের ঘরবাড়ির বারান্দায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় তারা আসছে না।
এই প্রসঙ্গে পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বলেন, "স্কুল-কলেজের পাশাপাশি, রাস্তাঘাট, ধর্মীয় উপাসনালয়ও এখন পানির তলে। ভবদহ এলাকায় এ বছর ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ১০ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এক লাখ লোক বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।"
প্রতিদিন পানি বাড়ার কারণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হলেও সরকার পানি সরানোর জন্য এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না বলে জানান তিনি।