অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার সৈকতে আটকা পড়ে মৃত ৩৮০টি তিমি
অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার উপকূলে আটকে ছিল ৪৫০টি তিমি। এদের মধ্যে কমপক্ষে ৩৮০টি তিমি মারা গেছে। মাত্র ৫০টিকে বাঁচাতে পেরেছে উদ্ধারকারী দল। তাসমানিয়ার ইতিহাসে একসঙ্গে এত তিমি মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম।
সোমবার অস্ট্রেলিয়ার দ্বীপ অঙ্গরাজ্যে তাসমানিয়ার পশ্চিম উপকূলে বিশ্বের বৃহত্তম স্তন্যপায়ী প্রজাতির আটকে পড়ার বিষয়টি নজরে আসে। সৈকতে এসে তিমির আটকে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ায় নতুন নয়। তবে এত বেশি সংখ্যায় তিমির দল কীভাবে সৈকতে এসে আটকে গেছে তা জানা যায়নি।
ম্যাককুরি হেডস নামের প্রত্যন্ত এলাকায় তিনটি ঝাঁকে তিমিগুলো আটকে পড়েছে। এই অঞ্চলে নৌযান ও সড়ক যোগাযোগ একদম সীমিত।
উদ্ধারকর্মীরা সোমবার বিকালে ওই স্থানে যান। তারা আকাশ থেকে শতাধিক তিমি আটকে পড়ার দৃশ্য দেখেন।
তারা বলছেন, ওই অঞ্চলে উদ্ধার কাজ খুবই কঠিন। অনেক তিমি এমন জায়গায় আটকে পড়েছে যেখানে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। এর মধ্যে অনেক তিমির আকার বেশ বড়, এটাও চ্যালেঞ্জের বিষয়।
এ ধরণের তিমি সাধারণত ৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, ওজন ৩ টন হতে পারে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত স্ত্রাহান সৈকতে ২৭০টি মৃত তিমি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। এর মাঝেই বুধবার সকালে ১০ কিলোমিটার দূরে পাওয়া যায় আরও ২০০টি তিমি, যাদের সবাই ছিল মৃত।
তাসমানিয়া উদ্যান ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ সংস্থার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক নিক ডেকা তিমিদের উদ্ধারকাজ পরিচালনা করেন। তিনি জানান, 'শেষের দিকে ৩০টি তিমিকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছিলাম আমরা। এর মাঝেই আবার অন্যদিকে মৃত তিমিদের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল।'
তাসমানিয়ার সরকার সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ প্রোগ্রামে কর্মরত ৬০ জন উদ্ধারকর্মী দ্বিতীয়দিন ফ্রেসার ফ্ল্যাটস নামে এক সৈকতে তিমিদের উদ্ধারে যুক্ত হন।
সেখানে সমুদ্রে ভাসমান নৌকা থেকে ২৫টি তিমিকে টেনে পানিতে নামানো হয়। এদের মধ্যে দুইজন আবার বালুচরেই ফিরে আসে। পরদিন মঙ্গলবার আরও ২৫টি তিমিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
নতুন পাওয়া মৃত ২০০টি তিমি মূল উদ্ধারক্ষেত্র থেকে ৭ কিমি ও ১০ কিমি দূরের দুই সৈকতে পাওয়া যায়।
মৃত তিমিদের কি হবে
গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিক ডেকা জানান, তাদের দুইটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। সৈকতের কাছে একটি ল্যান্ডফিল বা জমি ভরাটের স্থানে কিছু তিমিকে ফেলা হচ্ছে। আর কিছুকে সৈকতে পানির কাছে টেনে আনা হচ্ছে যাতে করে সমুদ্রের স্রোত এসে তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
কেন এমন করে তিমিরা
সামুদ্রিক প্রাণিবিদ ড. ক্রিস কারলিওন বলেন, এটা একেবারেই প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার। এতে মানুষের কোন হাত নেই।
এ তিমির ঝাঁক অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের উপকূলে চলাচল করে। গবেষকেরা জানান, তাদের মধ্যে শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন রয়েছে। তারা নেতাকে অনুসরণ করে সব সময়। এ কারণে এত সংখ্যক তিমি একসঙ্গে আটকা পড়েছে।
২০১৮ সালে এ ধরনের একাধিক ঘটনায় এক সপ্তাহের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে দুই শতাধিক তিমি মারা যায়।