প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ; ইসি সংস্কারে গণফোরামের পরামর্শ
রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে আজ শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চতুর্থ দফার সংলাপ করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ইতোমধ্যে গণফোরামের সাথে সংলাপ শেষ হয়েছে। আজ বিকেল ৩টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সংলাপ শুরু হয়।
সেখানে হওয়া আলোচনার আলোকে, এই সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে উল্লেখ করেছেন গণফোরাম সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ বেশকিছু ব্যাপারে পরমার্শ দেওয়া হয়েছে। সরকার সেটা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে। এছাড়া, সরকার গঠিত কমিশনের বিষয়ে তাদের দলের লিখিত প্রস্তাব কয়েকদিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এরআগে বেলা পৌনে ৩টায় অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন দলটির ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যমুনায় প্রবেশ করেন। প্রায় দেড় ঘন্টব্যাপী এই বৈঠক হয়।
ড. কামাল হোসেন সংবিধান, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলেছেন বলে জানান সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু। তিনি বলেন, বাজার পরিস্থিতির ওপর আমরা জোর দিয়েছি। সরকার প্রধানকে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেটকে অবশ্যই ভাঙতে হবে।
তিনি বলেন, 'পতিত স্বৈরাচার ও তাদের বিদেশি এজেন্টরা বাংলাদেশটাকে ধ্বংস করার যে প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, তার থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।'
গণফোরাম অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায় জানিয়ে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, 'সবাইকে একমত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ সরকার জনগণের সরকার। এ সরকারকে রক্ষার স্বার্থে অর্থাৎ আমাদের নিজেদের রক্ষার স্বার্থে, আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করব। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যেকোন বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা চাইবেন। আমরা যেটা উপলব্ধি করব – সেটাই পরামর্শ দেব। জনগণের জন্য দরজা খোলা আছে বলে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন।'
'পাচার হয়ে যাওয়া লক্ষ কোটি টাকা ফেরত আনতে হবে। দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। সেখান থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সেটা কোন দলীয় চিন্তা চেতনা নয়, জাতীয় ঐক্যমতের চিন্তায় এগুতে হবে' - যোগ করেন তিনি।
সংলাপে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে সমন্বয় কমিটির এই চেয়ারম্যান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন করতে হবে এটার জন্য সার্চ কমিটি বা কিছু করার প্রয়োজন আছে, ভালো লোক নিয়োগ দেয়ার দরকার আছে। যাতে অতীতের মত কোন সমস্যা না হয়।
নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা কোনো তারিখ উল্লেখ করিনি। বলেছি, সংস্কার শেষ অতিদ্রুত নির্বাচন দেয়ার জন্য। তবে সংস্কার শেষ নাহলে সব একই হবে — নির্বাচনের আগে থাকি রাম, নির্বাচনের পরে হই রাবণ। ওই ধরনের নির্বাচন কমিশন আমরা চাই না। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন চাই।'
সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দুই-একদিনের মধ্যে লিখিত আকারে দেব।
আটটি দিবস বাতিল করা হয়েছে, এনিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি? – এমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, 'জাতীয় দিবস ছাড়া কোন দিবসই রাখা উচিত না।'
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তাফা মোহসীন মন্টু, কো-চেয়ারম্যান সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এস এম আলতাম, সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান মিজান, সদস্য সিনিয়র অ্যাডভোকেট একেএম জগলুল, হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগম ও মোস্তক আহমেদ।