এমসি কলেজে ধর্ষণ: তিন আসামি পাঁচদিনের রিমান্ডে
সিলেট মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজে তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব। এরমধ্যে তিনজনকে সোমবার আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেননি কোনো আইনজীবী।
এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় এমসি কলেজের পক্ষ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
১২৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী কলেজের ছাত্রাবাসের ভেতরে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় সিলেটজুড়ে ক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সোমবারও বিভিন্ন সংগঠন ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত বিচার ও ধর্ষকদের প্রশ্রয়দাতাদের খুঁজে বের করার দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভ করেছে।
গ্রেপ্তার ৫, রিমান্ডে ৩
সোমবার দুপুর ১২টায় ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও আসামি অর্জুন লস্করকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে আদালতে হাজির করা হয় আরেক আসামি রবিউল ইসলামকে। কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্য দিয়ে আদালতে আনা হয় তাদের। এ সময় বিপুল সংখ্যক জনতা আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে।
তিনজনকেই সিলেট মহানগর হাকিম ২য় আদালতে হাজির করে সকলের সাতদিন করে রিমান্ড আবেদন করেন এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।
পৃথক শুনানি শেষে আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান তিনজনের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে জানান আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট খোকন কুমার দত্ত।
এই মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ। সর্বশেষ সোমবার ভোরে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে রাজন মিয়া ও মো. আইনুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর আগে রোববার রাত ৯টার দিকে হবিগঞ্জ সদর থেকে ধর্ষণ মামলার দ্বিতীয় আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনিকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। র্যাবের গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা এখনো তাদের হেফাজতে রয়েছেন।
র্যাব-৯-এর এএসপি (গণমাধ্যম) মো. ওবাইন বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের সঙ্গে আরও কারা ছিল তা বের করার চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।'
রোববার সকালে সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, একই সময়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে আরেক আসামি অর্জুন লস্কর এবং রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই তিনজনকেই আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুজনকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নির্যাতিতা তরুণীর স্বামীর দায়ের করা মামলায় আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)।
এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়।
আসামিপক্ষে দাঁড়াননি কোনো আইনজীবী
ধর্ষণ মামলার তিন আসামিকে সোমবার দুই দফায় আদালতে হাজির করে রিমান্ডের শুনানি হয়। তবে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি।
আদালতসূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রপক্ষের আইজীবীরা আসামিদের সাতদিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। এ সময় আসামিরা নিজেরাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। তিন আসামিই আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন বলে জানা গেছে।
শুনানিতে অংশ নেওয়া একাধিক আইনজীবী জানান, আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী তা থাকায় আদালত তাদের কোনো বক্তব্য আছে কি না, জানতে চান। এ সময় সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলাম নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
সাইফুর আদালতকে বলেন, 'রাজন, আইন উদ্দিন ও তারেক এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি জড়িত ছিলাম না।'
নির্যাতিতা তরুণীর স্বামীর দায়ের করা মামলায় তারেকুল ইসলাম তারেককে আসামি করা হলেও রাজন ও আইন উদ্দিনের নাম নেই। তবে এজাহারে ধর্ষিতার স্বামী অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করেছেন। যাদের পরিচয় তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। সোমবার ভোরে রাজন এবং আইনউদ্দিনকে র্যাব গ্রেপ্তারও করেছে।
রিমান্ড শুনানি শেষে এপিপি খোকন কুমার দত্ত বলেন, 'আজ (সোমবার) আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে দাঁড়াননি। আসামিরা নিজেরাই নিজেদের পক্ষে কথা বলেছেন।'
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আইজীবী সমিতির সভাপতি এটিএম ফয়েজ বলেন, 'এ রকম নৃশংস ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা যারা ঘটিয়েছেন, তাদের পক্ষে দাঁড়াতে সিলেটের আইনজীবীদের বিবেক সায় দেয়নি। প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসামিদের পক্ষে আইনি লড়াই না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একজন আইনজীবী চাইলে কোনো মামলায় অংশ নেওয়া থেকে কিংবা কারও পক্ষে দাঁড়ানো নিজেকে বিরত রাখতেই পারেন। তবে জেলা আইনজীবী সমিতি এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কারণ আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার সকল নাগরিকের রয়েছে। সমিতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কারও সে অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পারে না।'
ফয়েজ বলেন, 'সিলেটের কোনো আইনজীবী আসামিদের পক্ষে আদালতে না দাঁড়ালে তারা চাইলে বাইরে থেকেও আইনজীবী নিয়ে আসতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আইনজীবী সমিতির অনুমতি নিতে হবে।'
গত শুক্রবার এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ঘটনার পর ওই তরুণীকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করে পুলিশ। এখনো তিনি হাসপাতালে রয়েছেন। রোববার হাসপাতাল থেকে আদালতে এসে ঘটনার ব্যাপারে জবানবন্দি দেন নির্যাতিতা তরুণী।