ভ্যাকসিন সহজলভ্য হলেও নেবেন না এলন মাস্ক ও তার পরিবার
মার্কিন ধনকুবের এলন মাস্ক জানিয়েছেন করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন সহজলভ্য হবার পরও তিনি ও তার পরিবার ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন না। নিউইয়র্ক টাইমসের নতুন পডকাস্ট 'সোওয়ে' এর একটি পর্বে অনুষ্ঠানটির হোস্ট সাংবাদিক কারা সুইশারের সাথে আলোচনার সময় একথা জানান এলন মাস্ক।
সোমবার প্রকাশিত এই পর্বে কারা সুইশার তাকে প্রশ্ন করেন, ভ্যাকসিন সহজলভ্য হবার পর তিনি ও তার পরিবার ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন কিনা। এই প্রশ্নের উত্তরেই টেসলার সিইও বলেন, তিনি ও তার সন্তানেরা কোভিডের ঝুঁকিমুক্ত হওয়া তিনি ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন না।
২ লক্ষেরও বেশি আমেরিকান জনগণের মৃত্যুর কারণ এই প্রাণঘাতী সংক্রামক ভাইরাস থেকে এলন মাস্ক ও তার পরিবার কম ঝুঁকিতে আছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। ভাইরাস সংক্রমণ রোধে এবছরের শুরু থেকে জারি করা লকডাউনের প্রসঙ্গও তুলে আনেন সুইশার। মাস্ক জানান তিনি প্রথম থেকেই লকডাউনের বিরোধিতা করে এসেছেন এবং লকডাউনের ফলে বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা হয়নি।
মাস্ক বলেন, ' আমি মনে করি দেশজুড়ে লকডাউন জারি করার বদলে আক্রান্ত ও ঝুঁকিতে থাকা জনগণকে কোয়ারেন্টাইনের রাখার ব্যবস্থা করাই সঠিক সিদ্ধান্ত। ' এপ্রিলের শেষের দিকে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি হবে এমন অনুমানের কথাও জানিয়েছিলেন গত মার্চে।
ইতোপূর্বেও মাস্ক এধরণের বক্তব্য দিয়েছেন। জুলাইতে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান, শিশু ও তরুণদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কম। কমবয়সীরা সর্বাধিক ঝুঁকির মুখে না থাকলেও, আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হওয়া এবং মৃত্যুর প্রমাণও রয়েছে। আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশের মধ্যে কোনো উপসর্গ না থাকার তথ্যও তিনি এড়িয়ে যান।
গবেষণায় দেখা গেছে, লকডাউনের ফলে উল্লেখযোগ্য হারে মৃত্যুহার কমানো গেছে। এছাড়া লকডাউন জারি করা না হলে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেত। তবে ভ্যাকসিনের ব্যাপারে এলন মাস্কের এই সিদ্ধান্ত বড় অংশের আমেরিকান জনগণের চিন্তাকে প্রতিনিধিত্ব করে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইপিএসওএস এমওআরআই এর সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের ৩৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিক ভ্যাকসিন সহজলভ্য হলেও তা গ্রহণ করবেন না। এরমধ্যে অনেকেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, তবে বাকি ২০ শতাংশ মানুষ জানান তারা সাধারণভাবেই ভ্যাকসিন বিরোধী।
বিশ্বজুড়ে কয়েক ডজন ভ্যাকসিন পরীক্ষাধীন আছে, এরমধ্যে ৩২টি ইতোমধ্যেই মানবদেহে পরীক্ষা চালাচ্ছে। ভ্যাকসিন সহজলভ্য হবার পর কারা প্রথমে ভ্যাকসিন পাবে তা নির্ধারণের ব্যস্ত আছেন নীতিনির্ধারকেরা।
ভ্যাকসিন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দ্রুত করতে ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া অপারেশন ওয়ারপ স্পিড উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা মোনসেফ স্লাওউই বিজনেস ইনসাইডারকে জানান, ২০২১ সালের এপ্রিল, মে কিংবা জুনের আগে ভ্যাকসিন আমেরিকান জনগণের জন্য ব্যাপকভাবে সহজলভ্য হবেনা।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এলন মাস্ক এনিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার ঔষধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের প্রচারণা সহ করোনাভাইরাসের ফলে মৃত্যুর ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন তিনি। মার্চে ক্যালিফোর্নিয়ায় জারি হওয়া ঘরে থাকার নির্দেশেরও তীব্র বিরোধিতা করে লকডাউনকে জোরপূর্বক অবরুদ্ধ করণ ও ফ্যাসিবাদী বলে মন্তব্য করেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার আলামেডা প্রদেশে অবস্থিত টেসলার কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলে মাস্ক পুনরায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেন এবং জানান তিনি একারণে গ্রেপ্তার হতেও রাজি আছেন। ( পরবর্তীতে টেসলা কার্যক্রম শুরুর অনুমতি পায়।) সুইশারের সাথে আলোচনায় মাস্ক এই সিদ্ধান্তকে মাত্রাতিরিক্ত বলে তাদের প্রতিক্রিয়াকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন।
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে লকডাউনের ফলে সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের ফলে ৩ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল সময়েই সংক্রমণের মাত্রা ৬০ মিলিয়ন কমানো সম্ভব হয়েছে। জুলাইয়ে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় বলা হয়, ঘরে থাকার নির্দেশের কারণে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ২ লক্ষ ৫০ হাজার - ৩ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার