“২৫ বছর ধরে আলাদা – সেখ বশির উদ্দিন ও আফিল উদ্দিন”
১৯৯৯ সাল থেকেই আলাদা ব্যবসা ও বসবাস করছেন দুই ভাই; আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ সেখ আফিল উদ্দিন ও নতুন উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেয়া সেখ বশির উদ্দিন।
গত রোববার শপথ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন সেখ বশির উদ্দিন। শপথের পরই কেউ কেউ তাকে 'আওয়ামীদের দোসর' আখ্যা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হওয়ার প্রতিবাদ করছে। জুলাই-আগস্টের ঘটনায় তার নামে একটি মামলা হওয়ার তথ্যও প্রচার হচ্ছে।
তবে ২৫ বছর ধরে আফিল উদ্দিনের থেকে নিজেকে আলাদা বলে দাবি করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, "আফিল উদ্দিন আমার বড় ভাই। আমরা আলাদা মায়ের হলেও বড় ভাই হিসাবে শ্রদ্ধা করে চলি। তবে রাজনৈতিক আদর্শ আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন মতাদর্শের। কেউ কারো কাজে, ব্যবসায় হস্তক্ষেপ করছি না।"
"ভিন্ন মা হওয়াতে ১৯৯৯ সালে পারিবারিকভাবে আমরা আলাদা হই। পরে আফিল ভাই রাজনীতিতে যুক্ত হন। আমরা সবাই দীর্ঘদিন ধরেই আলাদা ব্যবসা পরিচালনা করছি। তিনি মূলত যশোর কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা ও রাজনীতি করছেন। আমিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ঢাকা কেন্দ্রিক", যোগ করেন বশির উদ্দিন।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা গ্রুপ আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সেখ আকীজউদ্দীনের সপ্তম ছেলে বশির উদ্দিন। তার ১৫ সন্তানের মধ্যে ১০ ছেলে পাঁচ মেয়ে। বড় ছেলে শেখ মহিউদ্দিন আদ-দ্বীনের নির্বাহী পরিচালক। শেখ মোমিন উদ্দিন, শেখ আফিল উদ্দিন, শেখ আমিন উদ্দিন, আজিজ উদ্দিন, নাসির উদ্দিন, বশির উদ্দিন, জামিল উদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও শামিম উদ্দিন আকিজ শিল্প গ্রুপের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করেন। তবে প্রত্যেক ভাইয়ের ব্যবসা আলাদা।
মূলত ১৯৯৯ থেকেই তিনটি ধারায় চলে আকিজ গ্রুপের ব্যবসা। বড় মায়ের তিন ছেলে ডঃ সেখ মহিউদ্দিন, সেখ আফিল উদ্দিন ও সেখ মোমেন উদ্দিন, মেজো মায়ের দুই ছেলে সেখ আমিন ও সেখ মিলন এবং ছোট মায়ের পাঁচ ভাই।
২০০৬ সালে সেখ আকিজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর সেখ বসির উদ্দিন পাঁচ ভাইয়ের আকিজ গ্রুপের এমডির দায়িত্ব নেন। ২০২২ সালে তারা দ্বিতীয়বার পরিবার ভাগ করেন এবং পাঁচ ভাই ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন।
তখন থেকেই সেখ বসির উদ্দিন নিজের গ্রুপের নামকরণ করেন আকিজ বশির গ্রুপ। সিরামিকস, পার্টিকেল বোর্ড, পাট, স্টিল, চা-সহ ১৬ ধরনের ব্যবসা পরিচালনা হচ্ছে এই গ্রুপের গ্রুপের অধীনে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সোহান শাহ নামের (৩০) এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামির তালিকায় নাম রয়েছে 'শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া' নামের এক ব্যক্তির। নামটি আংশিকভাবে মিলে যায় বাণিজ্য উপদেশষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে। এমনকি সেখ বশিরের বাবার নামের সঙ্গে আসামি তালিকায় থাকা 'শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া'র বাবার নামের আংশিক মিল রয়েছে।
মামলার ৫৭ জন আসামির মধ্যে ৪৯ নম্বর তালিকায় নাম রয়েছে শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়ার। পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগ নেতা। বাবার নাম শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।
মামলার বিষয়টি নিয়ে সেখ বশির উদ্দিন বলেন, "আমি খুব ভালো জানি না। আমাদের লিগ্যাল টিম বিষয়টি দেখছে। ওখানে (মামলার এজাহার) আমার নামের, আবার বাবার নামের কিছু সংগতি আছে, কিছু অসংগতি আছে। এটা আসলেই আমি কি-না, আমি নিশ্চিত নই। নিশ্চিত হলে লিগ্যালি ফেস (আইনিভাবে মোকাবিলা) করা হবে।"
উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিভিন্নজনের মন্তব্যের ও সমালোচনা বিষয়ে সেখ বশির বলেন, "যারা আন্দোলন করেছেন, তাদের আবেগের সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই। আমি তাদের মতামতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। তবে আমার ধারণা, ওনারা মিস ইনফরমড (ভুল তথ্য পাওয়া)। ওনাদের তথ্যের ভিত্তি সঠিক নয়। আমি অনুরোধ করবো উনারা যেন আরেকটু ধৈর্যশীল হয়ে সঠিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে আমাকে বিচার করেন।"
"উপদেষ্টা হওয়ার প্রতি আমার মায়া আছে কিন্তু লোভ নাই। আমি অনেক বড় একটা প্রতিষ্ঠান ও অনেক সহকর্মীকে রেখে এসেছি। তবে দেশ সেবার সুযোগ পেলে করতে চাই", যোগ করেন তিনি।