স্নায়বিক ঝুঁকির শঙ্কা নিয়ে ১৯ বছর পর বক্সিংয়ে ৫৮ বছর বয়সী মাইক টাইসন
৫৮ বছর বয়সে আবারও পেশাদার বক্সিং দিয়ে রিংয়ে ফিরেছেন মাইক টাইসন। ১৯৮৫ সালে নিজের পেশাদার বক্সিং যাত্রা শুরু করার পর, টাইসন নিজেকে বক্সিং-এর জগতে একজন কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
পেশাদার ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকেই টাইসন অনেক বড় বড় জয় পেয়েছেন। তবে, ১৯ বছরের বেশি সময় পর পেশাদার বক্সিংয়ে ফিরে আসার সময় তাকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
টাইসনের এই প্রত্যাবর্তনটি হচ্ছে আজ শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) এটিএন্ডটি স্টেডিয়ামে, প্রতিপক্ষ ২৭ বছর বয়সী ইউটিউবার জেক পল।
টাইসনের শেষ পেশাদার বক্সিং করেছিলেন ১৯ বছর আগে, যেখানে তিনি কেভিন ম্যাকব্রাইডের কাছে পরাজিত হন।
তার শেষ প্রদর্শনী লড়াই হয়েছিল চার বছর আগে। মজার ব্যাপার, সেই ইভেন্টেই জেক পল তার পেশাদার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বক্সিং ম্যাচ খেলেছিলেন।
এই বছরের জুলাইয়ে টাইসন ও পলের মধ্যে বক্সিং ম্যাচটি হওয়ার কথা থাকলেও, টাইসনের আলসারের সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় ম্যাচটি পিছিয়ে যায়।
টাইসন আবারও বক্সিং রিংয়ে ফিরে আসায়, তার শারীরিক ও স্নায়ুবিক ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বক্সিং একটি কঠিন খেলা, এবং টাইসনের দীর্ঘ সময়ের মাথায় আঘাতের ইতিহাস রয়েছে। এটি তাকে স্নায়ুবিক ক্ষতির জন্য অধিক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
উচ্চপর্যায়ে প্রতিযোগিতায় বয়সের সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। তবে বক্সিংয়ের মতো খেলায় এটি স্নায়ুবিজ্ঞানের দিক থেকেও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে।
টাইসনের পুরো পেশাদার জীবনেই বহুবার মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তাই, রিংয়ে ফিরলে তার স্নায়বিক ক্ষতির ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ড. নীতিন কে. শেঠি। তিনি ওয়েল কর্নেল মেডিকেল কলেজের স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
ড. শেঠি সিএনএনকে বলেন, "৪০ বছরের বেশি বয়সী বক্সারদের নিয়ে দুটি বিষয় চিন্তা করতে হয়। প্রথমত, তাদের বয়সের কারণে রিংয়ে গুরুতর মস্তিষ্কের আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি কি বেশি? দ্বিতীয়ত, এরা সাধারণত দীর্ঘ সময় পেশাদার বক্সিং করেন, যা দীর্ঘমেয়াদি স্নায়বিক সমস্যার আশঙ্কা তৈরি করে।"
ঝুঁকি
বক্সিং একটি ঝুঁকিপূর্ণ খেলা, কারণ প্রশিক্ষণ এবং ম্যাচের সময় মাথায় বারবার আঘাত পেলে সেটি দীর্ঘমেয়াদি স্নায়বিক ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়।
রিংসাইড চিকিৎসক ড. নিতিন কে. শেঠি বলেন, বক্সিংয়ে মাথায় আঘাতজনিত জখম বা কনকাশন অনেক বেশি ঘটে।
তবে তিনি বলেন, "বড় নকআউট নয়, বরং মাথায় বারবার আঘাত পাওয়ার কারণে সৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বক্সারদের জন্য আরও বিপজ্জনক।"
বয়স্ক বক্সারদের জন্য মাথার আঘাতের ঝুঁকি বেশি, কারণ তাদের ক্যারিয়ারে বারবার পাওয়া আঘাতগুলো আঘাত দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার কারণ হতে পারে; যেমন অনিদ্রা, মাথা ঘোরা, সিটিই (ক্রনিক ট্রমাটিক এনসেফালোপ্যাথি), এবং পার্কিনসন জাতীয় লক্ষণ।
ডা. নীতিন শেঠি জানান, এই ধরনের সমস্যাগুলো প্রায়ই অবসর নেওয়ার পর প্রকাশ পায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কের আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা এবং আরোগ্যের গতি কমে যায়।
৪০ বছরের বেশি বয়স্ক বক্সারদের এক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। সুগার রে রবিনসন এবং জর্জ ফোরম্যানের মতো কিংবদন্তিরা ৪০ বছরের পরেও লড়াই করেছেন। ৫৮ বছর বয়সী মাইক টাইসন, যিনি ২০০৫ সালের পর থেকে কোনো পেশাদার লড়াই করেননি, এই দলেই আছেন।
টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অব লাইসেন্সিং অ্যান্ড রেগুলেশন (টিডিএলআর) বয়স্ক বক্সারদের জন্য মস্তিষ্ক এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম পরিমাপের পরীক্ষার শর্ত দিয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল ভালো না হলে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না।
টিডিএলআর সিএনএনকে জানিয়েছে, বিশেষ ছাড় নিয়ে টাইসন ও জেক পলের মধ্যে এই লড়াইটি আট রাউন্ডের হবে। প্রতি রাউন্ড ২ মিনিট করে হবে এবং ১৪ আউন্স ওজনের [প্রায় ৩৯৬.৮৯ গ্রাম] গ্লাভস ব্যবহার করা হবে।
বক্সিংয়ের স্নায়বিক ঝুঁকি ও নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা
বক্সিংয়ে স্নায়বিক ঝুঁকি বহু আগেই চিহ্নিত হয়েছে। ১৯২৮ সালে আমেরিকান বিজ্ঞানী হ্যারিসন মার্টল্যান্ড বক্সারদের মাথায় আঘাতজনিত উপসর্গ বোঝাতে "পাঞ্চ ড্রাংক" শব্দটি ব্যবহার করেন।
এখন বক্সারদের জন্য স্নায়বিক পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হলেও ডা. নিতিন কে. শেঠি মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদি মস্তিষ্কের ক্ষতি এড়াতে আরও সুরক্ষা পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
শেঠির মতে, এই পরিবর্তন অবশ্যই বক্সার ও তাদের পরিবারের কাছ থেকে আসা উচিত। তিনি চান যেন বক্সাররা প্রয়োজন হলে "নো মাস" অর্থাৎ "আর নয়" বলতে উদ্বুদ্ধ হন। অর্থাৎ, শারীরিক ঝুঁকি বেশি হলে ম্যাচ থামানোর সংস্কৃতি তৈরি হওয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে ওয়ার্ল্ড মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংস্থা বক্সিং নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। তবে বিপদের পরও এর রোমাঞ্চকর ধরন, দ্বৈরথ ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে বক্সিং এখনও বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়।
৫৮ বছর বয়সে টাইসন আবারও রিংয়ে নামলে তার স্নায়বিক ঝুঁকির বিষয়টি আরও সামনে আসবে এবং এতে বক্সারদের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা নতুনভাবে আলোচনায় আসতে পারে।