রাজধানীর জাপান গার্ডেন সিটিতে বিষপ্রয়োগে প্রায় ১০ কুকুর-বিড়াল হত্যা, থানায় অভিযোগ
রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি এলাকায় বেশ কয়েকটি কুকুর-বিড়ালকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ।
নওশাবার অভিযোগে বলা হয়, জাপান গার্ডেন সিটি এলাকায় গত কয়েকদিনে বিষ দিয়ে ১০টি কুকুর ও একটি বিড়ালকে মেরে ফেলা হয়েছে, যা ২০১৯ সালের প্রাণিকল্যাণ আইনের লঙ্ঘন।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২২ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে কিছু কুকুর ও বিড়ালকে বিষপ্রয়োগের পর যন্ত্রণায় ছোটাছুটি করতে দেখেন অনেক বাসিন্দা। আক্রান্ত বেশিরভাগ প্রাণীই রক্তবমি করে যন্ত্রণায় মারা যায়।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) আদাবর থানায় করা অভিযোগে আরও বলা হয়, জাপান গার্ডেন সিটি ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহানুর স্থানীয়দের সহায়তায় এ বিষ প্রয়োগের উদ্যোগ নেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহানুরের সঙ্গে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. এমদাদুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা ঘটনাটি শুনেছি। কী ঘটেছে তা জানতে আমরা আগামীকাল কথা বলব এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুকুর নিধনের কোনো কর্মসূচি বা এ ধরনের কোনো কার্যক্রম সিটি কর্পোরেশন [বর্তমানে] পরিচালনা করছে না।'
উল্লেখ্য, জাপান গার্ডেন সিটিতে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল। এলাকার অনেক বাসিন্দা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুকুরের আক্রমণের অভিযোগ করেছেন।
কিছু বাসিন্দা অভিযোগ করেন, শিশুরাও কুকুরের কামড়ের শিকার হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ পরিস্থিতিতে বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি জেজিসি লাইফ সোসাইটি নামক একটি দল বেশ কয়েকটি কুকুরকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নেয়।
বিষয়টি নিয়ে আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া জানান, আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
'শনিবার রাতে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে,' তিনি বলেন।
নওশাবা আহমেদ বলেন, 'মানুষের ওপর এমন কিছু ঘটলে আমরা মানববন্ধন করে বিচারের দাবি জানাই। কিন্তু পশু-পাখিরা তো বোবা প্রাণী। তাদের হয়ে আমাদেরই প্রতিবাদ করা উচিত এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।'
এদিকে, প্রাণী হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান, নিলয় আলমগীর, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমিসহ অনেক তারকা।
প্রাণিকল্যাণ আইন (২০১৯) অনুযায়ী, প্রাণীকে বিষপ্রয়োগ বা ক্ষতিকর উপাদান খাওয়ানো একটি গুরুতর অপরাধ।
আইনের ধারা ১১ (উপধারা ১) অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি জানেন যে, কোনো ঔষধ বা খাবার বিষাক্ত, তবুও সেটি প্রাণীর দেহে প্রয়োগ করেন বা খাওয়ান অথবা এ কাজে সহায়তা করেন, তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এর ফলে প্রাণির মৃত্যু, স্থায়ী অঙ্গহানি, বা স্বাভাবিক আকার ও কর্মক্ষমতা নষ্ট হলে সে ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে, যদি ভেটেরিনারি সার্জনের লিখিত পরামর্শ ও পদ্ধতিতে কোনো প্রাণীকে অজ্ঞান করা হয় বা ব্যথাহীনভাবে হত্যা (ইউথানেসিয়া) করা হয়, তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
এ আইনের অধীনে, যদি কেউ উপধারা-১-এর অধীনে অপরাধ করেন বা অপরাধে সহায়তা করেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।