সব পক্ষের দায় রয়েছে: বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় বুয়েট স্বাধীন কমিটির তদন্ত দল
সম্প্রতি বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগ, বিআরটিসি বাস কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায় রয়েছে বলে জানিয়েছে বুয়েটের স্বাধীন কমিটির তদন্ত দল।
বুয়েটের স্বাধীন কমিটির তদন্ত দলের নেতৃত্ব দেয়া প্রতিষ্ঠানটির অধ্যাপক জিয়াউর রহমান খান বলেন, 'আমি হুটহাট কোনো মন্তব্য না করলেও একটি কথা পরিষ্কার- তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিআরটিসি বাস কর্তৃপক্ষ এবং রিসোর্ট কর্তৃপক্ষসহ সবার দায় রয়েছে।'
সোমবার (২৫ নভেম্বর) উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বুয়েটের স্বাধীন কমিটির তদন্ত দলের প্রধান অধ্যাপক জিয়াউর রহমান খান প্রাথমিকভাবে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বুয়েটের স্বাধীন কমিটির তদন্ত দল ছাড়াও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ও পল্লী বিদ্যুতের আরও দুটি তদন্ত কমিটিও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আইইউটি তদন্ত দলের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রো-ভিসি অধ্যাপক রাকিবুল ইসলাম এবং পল্লী বিদ্যুতের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেন ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) আকমল হোসেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক জিয়াউর রহমান খানের কাছে তদন্তের বিষয়ে বলেন, 'আমরা জাস্ট দেখতে আসলাম এবং ঘটনাস্থলে এসে দেখলাম ভুলটা কোথায় ছিল। মাটির মায়া রিসোর্টের ব্যবস্থাপক (ম্যনেজার) মাসুদ ইউসুফসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। এ বিষয়ে তদন্ত শেষ হওয়ার পর বিস্তারিত জানাতে পারব।'
অধ্যাপক জিয়াউর রহমান খান বলেন, 'ঘটনাটি আমাদের নজরে আসার পর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় আমরা কয়েকজন ঘটনাস্থলে এসেছি। সরেজমিনে, গ্রামের সরু সড়ক বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ঘুরে দেখেছি। দেখে যেটি মনে হলো, গত কয়েক বছরে মাটির মায়া রিসোর্টের সড়কটি কমপক্ষে ৩ ফুট উঁচু হওয়াতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিচু হয়ে গেছে। সড়কের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন উঁচু না হওয়ায় বিআরটিসির দ্বিতল বাসটির ছাদ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে লেগে যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন অনেক স্থানে ঝুলে রয়েছে। আর যে স্থানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে বিদ্যুৎ লাইন অনেকটাই ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা গেছে। গ্রামের এই সরু সড়ক দিয়ে কীভাবে দোতলা বাসে এতগুলো শিক্ষার্থীকে নেওয়া হচ্ছিল, এটিও একটি প্রশ্ন। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের উচ্চতা ১৬ ফুট হয়ে থাকলে, সড়ক ৩ ফুট উঁচু হয়েছে। সড়ক ৩ ফুট উঁচু হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিচু হয়েছে। বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হবে।'
প্রসঙ্গত, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ৪৬০ জন শিক্ষার্থী গত শনিবার (২৩ নভেম্বর) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামে 'মাটির মায়া' নামের একটি রিসোর্টে বনভোজনেরে উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পথে সকাল সাড়ে ৮টায় উদয়খালী গ্রামের স্থানীয় চায়না কারখানার সামনে আইইউটির শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাস স্থানীয় একটি অটো রিক্সাকে সাইড দিতে গিয়ে কাত হয়ে পড়লে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১১ হাজার কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের স্পর্শে এসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৩ শিক্ষার্থী নিহত এবং ৬ জন গুরুতর আহত হন।