টিকা তৈরির বৈশ্বিক চেষ্টা নতুন গতি লাভ করছে চীনের দ্বিগুণ তৎপরতায়
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা আবিষ্কারের বৈশ্বিক চেষ্টা নতুন গতি পাচ্ছে প্রতিদিনই। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-সহ , মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারকদের নিরাশ করে সবার আগে কার্যকর টিকা আনার ক্ষেত্রে আপাতত চীনই এগিয়ে রয়েছে।
চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা মডের্না ইঙ্ক জানায়, তাদের তৈরি প্রাথী টিকা আপাতত জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন লাভ করার পর্যায়ে নেই। এবং আগামী ২৫ নভেম্বরের আগে তারা এজন্য আবেদনও করার কথা ভাবছে না।
অন্যদিকে, পশ্চিমা বিশ্বের অপর শীর্ষ ব্রিটিশ-সুইস মালিকানার কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা গত মাসে তাদের টিকা একজন স্বেচ্ছাসেবীর দেহে গুরুতর উপসর্গ তৈরি করার পর শেষ পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল স্থগিত রেখেছিল। পরবর্তীতে শুরু করা হলেও, তাতে দেরি যা হওয়ার হয়েই গেছে। আরও দেরি হবে কারণ মার্কিন ওষুধ ও খাদ্য প্রশাসন টিকাটি নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের করার ঘোষণা দিয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে আগামী ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টিকা আনার জন্য ট্রাম্প যেসব সংস্থার উপর নির্ভর করেছিলেন তাদের কেউই তা করতে সক্ষম হবে না, বলে দেখা যাচ্ছে।
তাছাড়া, মার্কিন ওষুধ প্রশাসনের কঠোরতর মান নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া 'ভ্যাকসিন প্রতিযোগিতায়' চীনের পক্ষেই কাজ করছে। কারণ, রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি চীনে ভালো বা মন্দ যেভাবেই হোক- রাষ্ট্র পরিচালনা, বাণিজ্য এবং ব্যক্তি কর্মকাণ্ডের উপর গভীর প্রভাব রাখে। প্রয়োজনে এমন প্রভাব প্রচলিত নিয়ম ভাঙতেও দ্বিধা করে না।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মহামারির পর থেকেই তার দেশের বিজ্ঞানীদের করোনাভাইরাস টিকা আবিষ্কারের গতি বাড়ানোর তাগিদ বার বার দিয়ে আসছেন। চীনা ওষুধ প্রস্তুতকারকদের বলা হয়েছে, তাদের গবেষণা আসলে 'রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ'- এমন নির্দেশ পাওয়ার পর থেকেই তারা সকল উপায়ে চেষ্টা চালাচ্ছে।
নিরাপদ টিকা আবিষ্কারে চীন সফল হলেও, অন্য দেশের গবেষণা তাতে বন্ধ হবে না। কিন্তু, তারপরও সবার আগে টিকা আবিষ্কারের প্রতি বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে চীন।
চলতি অক্টোবর নাগাদ বিশ্বব্যাপী গবেষণাধীন ১০টি প্রার্থী টিকা তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রবেশ করেছে। অনুমোদন লাভ পূর্ববর্তী সর্বশেষ এই ধাপে পরীক্ষাধীন টিকার মধ্যে চারটিই চীনা কোম্পানিগুলো তৈরি করেছে।
এর মধ্যে দুটি প্রার্থী টিকার প্রস্তুতকারক চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ (সিএনবিজি)। এটি দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ প্রস্তুতকারক জায়ান্ট চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউট্যিক্যাল গ্রুপ বা সাইনোফার্মের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।
এর বাইরে তৃতীয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আরেকটি প্রার্থী টিকা তৈরি করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইনোভ্যাক। আর চার নম্বরটি চীনের সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট বেইজিং ইনস্টিটিউড অব বায়োটেকনোলজির বিজ্ঞানীদের সহায়তায় তৈরি করেছে ক্যানসাইনো বায়োলজিক্স ইঙ্ক। কানাডা সরকার এবং ওষুধ প্রশাসনও ক্যানসাইনোর ভ্যাকসিন গবেষণায় সাহায্য করছে।
সিএনবিজি চেয়ারম্যান ইয়াং জিয়াওমিন গত মাসে জানান, তার সংস্থার ভ্যাকসিন তৈরির কাজ 'প্রত্যাশার চাইতে সন্তোষজনক' গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই কোম্পানিটি সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহারাইন, মরক্কো, পেরু এবং আর্জেন্টিনায় ৪২ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে তাদের প্রার্থী টিকা তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে প্রয়োগ করেছে।
উহান শহরে আয়োজিত জৈব-প্রযুক্তি শিল্প সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাম্প্রতিক এক সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমাদের শুধু সফলতার আগে শেষ মাইল পথটুকু পাড়ি বাকি।'
উল্লেখ্য, চীনের এ শহরটিতেই প্রথম করোনার সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল।
চায়না ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সেন্টারের প্রধান জৈব-নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ উ গুইঝেন রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল সিসিটিভি'কে গত মাসে জানিয়েছিলেন যে, আগামী নভেম্বরের আগেই চীনের তৈরি করোনাভাইরাস টিকা সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে প্রয়োগের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যাবে।
এব্যাপারে ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিংক ট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স-এর জ্যেষ্ঠ বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক ইয়ানঝং হুয়াং বলেন, 'চীনই সবার আগে টিকা বাজারে আনার ঘোষণা দেবে, বলে আমি ধারণা করছি। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিজ্ঞানী মহল কী প্রতিক্রিয়া জানাবে বা একে স্বীকৃতি দেবে কিনা- মূল প্রশ্ন সেটাই হতে চলেছে।'