কিথ কেলগকে ইউক্রেন-রাশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত মনোনীত করলেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কিথ কেলগকে ইউক্রেন-রাশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে মনোনীত করেছেন।
যদি রাশিয়া ও ইউক্রেন আলোচনায় অংশগ্রহণে সম্মত হয়, তবে কেলগ যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন। কেলগ কঠোর আলোচনা নীতির পক্ষে, যা রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তবে, এটি কীভাবে করবেন সে বিষয়ে তিনি এখনও বিস্তারিত কিছু জানাননি।
কেলগ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন, এই যুদ্ধ হবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রশাসনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধ সমাধানে কেলগ কঠোর আলোচনার পক্ষে মত দিয়েছেন এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে এর ইতি টানার কথা বলেছেন।
কেলগের যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউট নামের ট্রাম্পপন্থী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে প্রকাশিত এই নথিতে কেলগ সুপারিশ করেছেন, ইউক্রেন সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি আনুষ্ঠানিক নীতি গ্রহণ করতে হবে, যা যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানকে উৎসাহিত করবে।
গবেষণা পত্রে তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, ইউক্রেন কেবল তখনই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও সাহায্য পাবে, যদি তারা মস্কোর সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেয়। অন্যদিকে, মস্কো যদি আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে ওয়াশিংটন কিয়েভকে আরও বেশি সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে।
এই নথির সহ-লেখক ছিলেন ফ্রেড ফ্লেইটজ, যিনি কেলগের মতোই ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নথিতে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদকে দীর্ঘমেয়াদে স্থগিত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে রাশিয়াকে আলোচনায় রাজি করানো সম্ভব হতে পারে।
গবেষণা পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আলোচনায় ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য একটি "দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা কাঠামো" প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তবে, কয়েক মাস পর এবং ট্রাম্পের নির্বাচনী জয় সত্ত্বেও, এই পরিকল্পনার কতটুকু বাস্তবায়িত হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
জুন মাসে এই পরিকল্পনা ট্রাম্পের কাছে উপস্থাপনের পর কেলগ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, "আমি দাবি করছি না যে তিনি পুরোপুরি একমত হয়েছেন বা সবকিছুর সঙ্গে সম্মতি জানিয়েছেন, তবে আমরা যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছি, তাতে আমরা সন্তুষ্ট।"
এদিকে, কিয়েভ ট্রাম্পের প্রতি কূটনৈতিক অবস্থান বজায় রেখেছে। সাবেক ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও বিশদ পরিকল্পনা প্রকাশ না করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন।
নির্বাচনে জয়লাভের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পুতিনকে তিনি যুদ্ধ না বাড়ানোর আহ্বান জানান এবং ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
পুতিন এবং ক্রেমলিন ট্রাম্পের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানালেও আরও সুনির্দিষ্ট নীতির জন্য অপেক্ষা করছে।