প্রথমবারের মতো কোনো হকির বিশ্বকাপে বাংলাদেশ
একটা সময় ছিল, যখন হকিতে বাংলাদেশের সুদিন ছিল। সম্ভাবনার রেখা এঁকে অপেক্ষা করা হতো আগামীতে দারুণ কিছু আসবে বলে। কিন্তু সেদিন যে গেছে, আর ফিরে আসেনি। হকি নিয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনা নেই বললেই চলে, খেলাটিতে সাফল্যহীন পথচলাই এর মূল কারণ। এর মাঝেও আলোর ঝলকানির দেখা মিললো, ধরা দিলো বড় এক অর্জন। প্রথমবারের মতো কোনো হকি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার ওমানের মাসকাটে এশিয়ান অনূর্ধ্ব-২১ হকিতে থাইল্যান্ডকে ৭-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে মিলে গেছে যুব বিশ্বকাপের টিকেট। ষষ্ঠ স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলার অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশ আছে পঞ্চম স্থানে। ম্যাচটি হারলেও ষষ্ঠ স্থানে থাকবে তারা, আর এটাই যথেষ্ঠ হবে বিশ্বকাপে খেলার জন্য।
আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিত হবে যুব হকি বিশ্বকাপ। আয়োজক হিসেবে আসরটিতে খেলবে ভারত। যদিও সেমি-ফাইনালে উঠে যাওয়ায় এমনিতেই এই আসরে খেলা নিশ্চিত তাদের। সব মিলিয়ে এশিয়ার সাতটি দল অংশ নেবে যুবাদের এই বিশ্ব আসরে। এই সাত দলের একটি থাকবে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বড় জয় দিয়ে তা নিশ্চিত করে নিলো মওদুদুর রহমান শুভর দল।
চলমান এশিয়ান অনূর্ধ্ব-২১ হকি টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ায় গত ২৬ নভেম্বর, আসরটিতে অংশ নেয় ১০টি দল। 'বি' গ্রুপে জয় দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ, নিজেদের প্রথম স্বাগতিক ওমানকে ৩-১ গোলে হারায় তারা। তবে পরের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে হার মানে ৬-০ গোলের বড় ব্যবধানে। ঘুরে দাঁড়িয়ে তৃতীয় ম্যাচে শক্তিশালী মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করে বাংলাদেশ। চতুর্থ ম্যাচে চীনের বিপক্ষেও করে ২-২ গোলে ড্র। পঞ্চম ম্যাচে থাইল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন পূরণ করলো বাংলাদেশ।
থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দাপুটে পারফরম্যান্স করা বাংলাদেশ তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যায়। মোহাম্মদ জয়ের কোনাকুনি হিটে প্রথম গোলের দেখা পায় তারা। তিন মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আমিরুল ইসলাম। পেনাল্টি কর্নার থেকে তার জোরালো হিটে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক কিছুই করার সুযোগ পাননি।
১৬তম মিনিটে আসে তৃতীয় গোল। মোহাম্মদ আবদুল্লাহ পোস্টের একদম সামনে থেকে আলতো পুশে বল জড়িয়ে দেন জালে। থাইল্যান্ডের খেলোয়াড়রা মাঝেমধ্যে আক্রমণে উঠে জালের ঠিকানা খোঁজার চেষ্টা করলেও ৬০ মিনিটের ম্যাচে দুই গোলের বেশি করতে পারেননি। বাংলাদেশের গোলরক্ষক নয়ন দুর্বার ছিলেন, রক্ষণভাগও ছিল আঁটসাঁট।
৩০তম মিনিটে গোলের দেখা পায় থাইল্যান্ড। টানা দ্বিতীয় পেনাল্টি কর্নার থেকে গড়ানো হিটে ব্যবধান কমান চুয়েমকে কৃষ্টানা। তৃতীয় কোয়ার্টারে আরও বেশি গোল হয়। চার মিনিট পর বাংলাদেশ আক্রমণে ফেরে। সতীর্থের পাস থেকে মোহাম্মদ হাসান রিভার্স হিটে গোল করেন। ৩৫তম মিনিটে থাইল্যান্ড দ্বিতীয় গোলটি করে।
দুই মিনিট পর বাংলাদেশ পঞ্চমবারের মতো মতো থাইল্যান্ডের জালে বল জড়ায়। মোহাম্মদ ইসলামের পাস থেকে পাওয়া বল আলতো ছোঁয়ায় গতি পরিবর্তন করে গোল আদায় করে নেন মোহাম্মদ খান। ৩৯তম মিনিটে মোহাম্মদ জয় রিভার্স হিটে দলকে আরেকটি গোল উপহার দেন। ৪৮তম মিনিটে গোল করে দলের বড় জয় নিশ্চিত করেন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।