সিলেট জেলা হাসপাতাল: নির্মাণকাজ শেষ, তবু দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ
চলতি বছরের শুরুতেই নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও প্রায় ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিলেট জেলা হাসপাতাল এখনও খালিই পড়ে আছে।
২৫০ শয্যার এই হাসপাতালের দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ। ফলে হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে; অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে এক বছরের বেশি সময়।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৬.৯৮ একর জায়গার ওপর এই জেলা হাসপাতাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাগরিক সমাজের আপত্তি উপেক্ষা করে ঐতিহ্যবাহী আবু সিনা ছাত্রাবাস ভেঙে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় নির্মাণ করা হয় হাসপাতালটি।
গণপূর্ত অধিদপ্তর হাসপাতালটির প্রথম ধাপের অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব দেয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ১৫ তলা হাসপাতাল ভবনের আটতলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রঙের কাজ, ইলেকট্রিক, টাইলস, গ্লাস, দরজা, জানালা লাগানোও সম্পন্ন।
কিন্তু স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মতামত না নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এই হাসপাতাল ভবনের দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছে না কেউ। ফলে হাসপাতাল কমপ্লেক্স বুঝিয়ে দেওয়ার মতো কর্তৃপক্ষ পাচ্ছে না গণপূর্ত বিভাগ। জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সিভিল সার্জন অফিসসহ কেউই এর দায়িত্ব নিতে রাজি নয়।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ড. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, 'আমাদের আওতাধীন হাসপাতালগুলো পরিচালনা করতেই হিমশিম খাচ্ছি। নতুন একটি হাসপাতালের দায়িত্ব নেওয়া আমাদের জন্য কঠিন। তাছাড়া এর নির্মাণকাজ চলাকালে আমাদের কোনো পরামর্শ নেওয়া হয়নি।'
হাসপাতালটির পরিকল্পনা করার সময় স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করায় এর দায়িত্ব নিতে এই অনীহা দেখা দিয়েছে।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, 'হাসপাতালের স্থাপত্য নকশা, কর্মপরিকল্পনা, সেবা প্রদানের জন্য সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় কক্ষের সুবিন্যাসকরণ ইত্যাদির কাগজপত্র সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালক অথবা ওসমানী হাসপাতালের পরিচালকের কাছে দাখিল করা হয়নি। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এটি বাসাবাড়ি নয়, আমাকে দায়িত্ব দিয়ে দিল আর নিয়ে নিলাম। এটি একটি হাসপাতাল। এটি নির্মাণে আমাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করা হয়নি।'
হাসপাতাল হস্তান্তরের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ না পাওয়ায় গণপূর্ত বিভাগ এরইমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছে।
জেলা গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর বলেন, 'আমরা এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে দেব। বাই মিসটেক এখানে যেহেতু লোকাল অথরিটি পাওয়া যায়নি, সেহেতু আমরা অথরিটি নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।'
হাসপাতাল ভবনের বেজমেন্টে রয়েছে কার পার্কিং; প্রথম তলায় টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম; দ্বিতীয় তলায় আউটডোর, রিপোর্ট ডেলিভারি ও কনসালট্যান্ট চেম্বার; তৃতীয় তলায় ডায়াগনস্টিক; চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক ও জেনারেল ওটি, আইসিসিইউ, সিসিইউ; পঞ্চম তলায় গাইনি বিভাগ, অপথালমোলজি, অর্থপেডিক্স ও ইএনটি বিভাগ এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় ওয়ার্ড ও কেবিন।
অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হলেও এখনও কোনো চিকিৎসা সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়নি। এমনকি প্রাঙ্গণ ঘেরার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতিও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
নাগরিক সমাজ থেকেও এ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের সিলেট জেলা সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'এমন ঠেলাঠেলি বন্ধ হোক। এখানে কারও স্বার্থ বা কোনো কুচক্রী মহল আছে কি না, সেটি খুঁজে দেখা দরকার। এ প্রকল্প যখন পাশ হয়, তখনই বলে দেওয়া হয়েছে কারা পরিচালনা করবে। নির্মাণের পর কেউ দায় নিতে না চাওয়া অন্য অর্থ বহন করে।'
এ অবস্থায় হাসপাতালটি চালু করা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। যদিও নির্মাণকাজের শুরুতে সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, এটি চালু হলে ওসমানী হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে। সিলেট অঞ্চলের রোগীরা এখান থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা নিতে পারবেন।