চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রেলওয়ের
ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাহিদার মেটাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন একটি ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে। পাশাপাশি বর্তমানে চলাচলরত বিশেষ ট্রেনটিও স্থায়ী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যেই রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে রেল মহাপরিচালকের দপ্তরে।
প্রস্তাবিত ট্রেনের নামও চূড়ান্ত হয়েছে ইতোমধ্যে। বর্তমানে চলাচলরত বিশেষ ট্রেনের ইঞ্জিনটি দিয়েই দুই বার করে মোট চার বার ট্রেন যাতায়াতের পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে। তবে কোচ ও ইঞ্জিনসংকটের কারণে বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন সহসাই চালুর সম্ভবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ের তথ্যমতে, ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথটি গত বছরের নভেম্বর মাসে উদ্বোধন করা হয়।
এরপর ডিসেম্বরে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেন চালু হয়। ইঞ্জিন, কোচ ও লোকবল সংকট দেখিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চালু হয়নি। পরে অবশ্য ক্ষোভ ও সমালোচনার মুখে চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য দুটি কোচ বরাদ্দ রাখা হয়। জানুয়ারিতে চালু হয় আরেকটি আন্তঃনগর ট্রেন।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়। ট্রেনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠলেও ৩০ মে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরে স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে ঈদুল আজহার সময়, ১২ জুন থেকে আবারও চালু করা হয় ওই বিশেষ ট্রেন— যা এখনো চলছে।
চট্টগ্রাম থেকে স্থায়ী ট্রেন চালুর দাবি দীর্ঘ দিনের। ফলে বিশেষ ট্রেনটি স্থায়ী করার পাশাপাশি আরেকটি নতুন ট্রেন চালুর প্রস্তবনাসহ একটি চিঠি গত ১১ ডিসেম্বর রেলওয়ের মহাপরিচালককে দিয়েছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম।
কক্সবাজারের সামাজিক, মিডিয়া এবং রাজনৈতিক নেতারাও এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানান।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান বিশেষ ট্রেনটির নাম 'সৈকত এক্সপ্রেস' এবং নতুনটির নাম 'প্রবাল এক্সপ্রেস' রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রতি ট্রেনে ১৬টি কোচে মোট আসন থাকবে ৭৪৩টি।
প্রস্তাবনায় অনুযায়ী, প্রথম ট্রেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে কক্সবাজারে পৌঁছাবে সকাল ১০টায়। ওই ট্রেন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে কক্সবাজার স্টেশন ছেড়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে বেলা ২টা ১৫ মিনিটে। পরে আবার চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে। কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা ৭টায় ছেড়ে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে।
ট্রেন দুটি যাত্রাপথে যাত্রী ওঠানামার জন্য ষোলশহর, জানালীহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামবে।
চাহিদা ও রাজস্ব বৃদ্ধি
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজার রুটের পর্যটনের পাশাপাশি স্থায়ীদের মধ্যেও ট্রেনের চাহিদা রয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দৈনিক গড়ে ৪০ হাজার মানুষ কক্সবাজারে যাতায়াত করেন। এরমধ্যে ১০ হাজার মানুষও যদি ট্রেনে ওঠেন, তবে এটি হবে সবচেয়ে লাভজনক রুট। দুর্ঘটনাপ্রবণ মহাসড়ক, রেলের ভাড়া তুলনামূলক কম হওয়ায় এই রুটের ট্রেন জনপ্রিয়তা পায়।
রেলওয়ের তথ্যমতে, কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর পর থেকে গত বছরের ডিসেম্বর চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ১০ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৩ জন। রেলের আয় হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
এরমধ্যে সাড়ে ৭২ কোটি টাকা আসে তিনটি ট্রেন থেকে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বিশেষ ট্রেনটিতে সাড়ে পাঁচ মাসের কম সময়ে যাত্রী চড়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬২ জন। রেলের আয় হয়েছে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ টাকা।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট) মো. শহিদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এই রুটটি অনেক জনপ্রিয়। যাত্রীও রয়েছে। তাই প্রস্তবনা দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার স্বল্প দূরত্ব হওয়ায় একটি ইঞ্জিন দিয়েই দিনে চারবার যাতায়াতের পরিকল্পনা করছি। আশা করি, প্রস্তাবনাটির বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।"