‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার ৩ মাস: শব্দদূষণ বেড়েছে ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায়
ঢাকা বিমানবন্দরের চারপাশ 'নীরব এলাকা' ঘোষণার প্রায় তিন মাস কেটে গেলেও শব্দদূষণ কমেনি এ এলাকায়। উল্টো এ দূষণ বেড়েছে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়।
সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক পলিউশন স্টাডিজ (ক্যাপস)- এর সমীক্ষা অনুসারে, 'নীরব এলাকা' ঘোষণার দুই মাসের মধ্যে এই এলাকায় শব্দদূষণ প্রায় ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাস্তবায়নের পর প্রথম ধাপে সার্বিক শব্দদূষণ কমলেও দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে প্রথম ধাপের তুলনায় প্রায় প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে শব্দদূষণ।
ক্যাপসের গবেষণা বলছে, নীরব এলাকা ঘোষণার আগে বিমানবন্দরের মূল প্রবেশ পথে গড় শব্দমাত্রা ছিল ৮৯.১৯ ডেসিবল। নীরব এলাকা ঘোষণা কার্যকরের তাৎক্ষনিক পরে গড় শব্দমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৯০.০৩ ডেসিবলে। কার্যকরের দুই মাস পরে গড় শব্দমাত্রা দাঁড়ায় ৮৯.৬৮ ডেসিবল— যা ঘোষণার আগের চেয়ে প্রায় ০.৫০ শতাংশ বেশি।
এ গবেষণায় আরও বলা হয়, নীরব এলাকা কার্যকরের পরবর্তী ৫ দিনে বিমানবন্দরের মূল প্রবেশপথে ০.৯৪ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল প্রবেশপথে ১.১৯ শতাংশ শব্দদূষণ বেড়েছে। তবে দুই মাস পর লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে শব্দদূষণ ৪.৪৬ শতাংশ এবং স্কলাস্টিকা স্কুল পয়েন্টে ১.০৫ স্বাতংশ হ্রাস পেয়েছে।
কিন্তু বিমানবন্দরের মূল প্রবেশপথে ০.৫৪ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল প্রবেশপথে ২.৯৭ শতাংশ বেড়েছে শব্দদূষণ।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিমানবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একদিকে যেমন যানজটের কবল– তেমনি শব্দদূষণে বিপর্যস্ত পুরো এলাকা। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো মোবাইল কোর্ট কিংবা মনিটরিং করতে দেখা যায়নি। শব্দদূষণ সংক্রান্ত কেবল ২/১টি ব্যানার ঝুলতে দেখা গেছে।
বিমানবন্দর রাস্তা দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী দোলোয়ার হোসেন টিবিএসকে বলেন, "এই রাস্তায় শব্দদূষণ কমাতে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখিনি। ২/১ বার মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করতে দেখেছি, কিন্তু তা চলাকালীন সময়েও হর্নে অতিষ্ঠ হয়ে যাই। বিশেষ করে, পুলিশ কিংবা সরকারি গাড়িগুলোকেও এই রাস্তায় হর্ন বাজিয়ে চলতে দেখি।"
শব্দ দূষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ক্যাপসের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার টিবিএসকে বলেন, "নিরব এলাকা ঘোষণার পরেও শব্দদূষণ সম্পর্কিত সচেতনতামূলক প্রচারণার অভাব দেখা গিয়েছে। একইসাথে নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার সীমাবদ্ধতা এবং ড্রাইভার ও যাত্রীদের এ সম্পর্কে যথাযথ অবগত না হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।"
তিনি আরও বলেন, "ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো না হওয়ায় ঢাকায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি বেড়ে গেছে। এয়ারপোর্টে বাসস্ট্যান্ডের কারণে শব্দ দূষণ হচ্ছে। এয়ারপোর্টের মূল গেটের সামনে ইউটার্ন এর কারণে সৃষ্ট যানজটে শব্দ দূষণের পরিমাণ বাড়ছে।"
বিমানবন্দর এলাকায় শব্দদূষণ কমাতে সুপারিশ হিসেবে ক্যাপস চেয়ারম্যান বলেন, "এয়ারপোর্ট এলাকায় ভেতর ও চারপাশে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধ করতে হবে, হর্ন বাজানোর শাস্তি বৃদ্ধি ও চালকদের শব্দ সচেতনতা যাচাই করে লাইসেন্স প্রদান করতে হবে।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সিটি কর্পোরেশনের ঘোষণার পরে তেমন কোনো কাজই হয়নি। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা ছিল, কিন্তু উদ্যোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকার কারণে সেটি করা সম্ভব হয়নি।"
এর আগে, চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ কিলোমিটার উত্তর এবং ১ কিলোমিটার দক্ষিণ পর্যন্ত এলাকা 'নীরব এলাকা' হিসেবে ঘোষণার কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরের চারপাশের দেড় কিলোমিটার এলাকাকে 'সাইলেন্ট জোন' বা 'নীরব এলাকা' হিসেবে ঘোষণা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
জানানো হয়, ১ অক্টোবর থেকে এই ঘোষণা কার্যকর হবে।
বিমানবন্দরের উত্তর এবং দক্ষিণ উভয় দিকের নির্ধারিত অঞ্চলটি স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে হোটেল লে মেরিডিয়ান পর্যন্ত এলাকাকে 'নীরব এলাকার' আওতায় আনা হয়।