পানি কমায় খাল-বিলে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ, বিক্রি হচ্ছে সস্তায়
গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন খাল-বিল থেকে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। নানান ধরনের জাল দিয়ে এসব পানিতে মাছ শিকারের হিড়িক পড়েছে গ্রাম এলাকায়। পরিবার প্রধানের সাথে মাছ শিকারে ব্যস্ত রয়েছে গৃহবধূ ও শিশু-কিশোরেরা। চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত মাছ শিকারের ফলে নেমে এসেছে ছোট মাছের বাজারদর।
মাত্র ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পুঁটি ও মলা মাছ। টাকি, রয়না, টেংরা, শিং এবং কৈ মাছ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। অল্প দামে মাছ ক্রয়ে খুশি গ্রাম এলাকার মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন। আর চাহিদার চেয়ে বেশি মাছ শিকার করতে পারায় বেজায় খুশি মাছ শিকারে ব্যস্ত থাকা কৃষক ও রিকশা চালকেরা।
বুধবার সকাল ১০ টার দিকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের কাটাখালি এলাকায় সরেজমিনে এমন চিত্রের দেখা মিলে। কাটাখালি খালে মাছ শিকারে ব্যস্ত দেখা যায় নানা বয়সী নারী-পুরুষ এবং শিশু-কিশোরদের।
ধানকোড়া ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকার মধ্যবয়সী কৃষক আলাল মিয়া বলেন, বন্যার সময় পুরো এলাকার সব কৃষি জমি পানিতে ডুবে যায়। রাস্তাঘাট ও কিছু কিছু ঘর-বাড়িতেও বন্যার পানি উঠে। এরপর ছোট একটি নৌকা ক্রয় করেন তিনি। সেই নৌকার আয় দিয়ে চলে পরিবার। পরে বন্যার পানি কমে গেলে মাছ শিকার করে বিক্রি করাই তার প্রধান পেশা বলে জানান তিনি।
আব্দুল হাই নামের এক রিকশা চালক বলেন, করোনার কারণে রিকশার যাত্রী কমে গেছে। করোনার প্রভাব কমলেও রিকশা যাত্রী বাড়েনি। যে কারণে রিকশা চালানো বাদ দিয়ে তিনি এখন দুই ছেলেকে সাথে নিয়ে স্থানীয় খাল-বিলে মাছ শিকার করেন। খাল-বিলে প্রচুর দেশীয় মাছ থাকায় দাম কম হলেও মুনাফা বেশি বলে জানান তিনি।
রমিজ মিয়া নামে এক যুবক বলেন, বিলের পানি কমে আসায় প্রচন্ড রৌদ্রের তাপে ছোট মাছগুলো খালে চলে এসেছে। এলাকার নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ খাল থেকে চাই, জাকি জাল, ধোর জাল, ঠেলা জাল এবং ধর্ম জাল দিয়ে মাছ শিকারে ব্যস্ত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ শিকার করলে জন প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ কেজি মাছ শিকার করা যায়। যে কারণে মাছের দাম কম থাকলেও গড়ে লাভবান হওয়া যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শ্রীমুখ ধানকোড়া এলাকার সাজিদুর রহমান রাসেল নামের এক যুবক বলেন, বাজারে সব ধরণের সবজির প্রচুর দাম। এছাড়া সারা বছর ছোট মাছ পাওয়া যায়। এখন ছোট মাছের দামও খুব কম। মাত্র দুইশো টাকা দিয়ে ১০ কেজি পুঁটি-মলা মাছ ক্রয় করেন তিনি। মাছগুলো শুটকি দিলে সারা বছর খাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কবির হোসেন নামের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, বাজারে মাছের দাম কিছুটা বেশি হলেও কাটাখালি এলাকায় মাছের দাম খুব কম। মাত্র ২০ টাকা কেজিতে পুঁটি-মলাসহ মিশ্র জাতের মাছ পাওয়া যায়। এছাড়া টাকি, টেংরা, শিং, রয়নাসহ অন্যান্য মিশ্র মাছগুলো মাত্র ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এই মাছের দাম আরেকটু বেশি। যে কারণে তিনি কাটাখালি এলাকা থেকে তিনি নিয়মিতভাবে মাছ ক্রয় করেন বলে জানান।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তরা পাইকারি মৎস্য আড়তের সভাপতি ভোলানাথ হালদার বলেন, জেলার বিভিন্ন নদ-নদী এবং খাল-বিলের পানি কমে আসায় জেলের জালে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির মাছ শিকার হচ্ছে। যে কারণে আড়তে ছোট মাছের দাম কিছুটা কমে গেছে। আড়তে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। মোট বিকিকিনির প্রায় অর্ধেক বাজারদর ছোট মাছের দখলে রয়েছে বলে জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ জেলা মৎস্য কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক প্রীতি কনা পাল বলেন, জেলায় ছোট বড় মিলে ১৪ হাজার ৪৭৯ টি পুকুরে ব্যবসায়ীকভাবে মাছ চাষ হয়। এর মধ্যে দু'দফার বন্যায় তলিয়ে যায় জেলার ৪ হাজার ৯১৬ টি পুকুর।
এতে করে ৪২ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার টাকার লোকসানে পড়েন মানিকগঞ্জের মৎস্য খামারিরা। নদী-নালা এবং খাল-বিলের পানিতে ভেসে যাওয়া এসব মাছ পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে শিকারীদের জালে আসছে। একসাথে অধিক মাছের আমদানি হওয়ায় মাছের দাম কমে যেতে পারে বলে জানান তিনি।