তিব্বতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ করবে চীন, প্রভাব নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশ ও ভারত
বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে চীন। তিব্বত মালভূমির পূর্বে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ অঞ্চলে বাঁধ দিলে এর প্রভাব বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের ওপরেও পড়বে।
বাঁধটি চীনের ইয়ারলুং জাংবো নদীর নিম্নাংশে তৈরি করা হবে। এ থেকে বছরে ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বাঁধ চীনের থ্রি গর্জেস। এটি ৮৮.২ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। নতুন অনুমোদিত প্রকল্প থেকে এর তিনগুণেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।
চীনের রাষ্ট্রায়াত্ত সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া গতকাল বুধবার জানিয়েছে, এ প্রকল্প চীনের কার্বন নিঃসরণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছানো এবং কার্বন নিরপেক্ষ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও এটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শিল্পের প্রসার ঘটাবে এবং তিব্বতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
ইয়ারলুং জাংবো নদীর একটি অংশে মাত্র ৫০ কিলোমিটারের (৩১ মাইল) মধ্যে পানির প্রবাহ দুই হাজার মিটার (৬,৫৬১ ফুট) পর্যন্ত নিচু হয়ে গেছে। যা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়েছে।
ড্যামটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় প্রকৌশল খরচসহ থ্রি গর্জেস ড্যামের খরচকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। থ্রি গর্জেস ড্যাম নির্মাণে ২৫৪.২ বিলিয়ন ইউয়ান (৩৪.৮৩ বিলিয়ন ডলার) খরচ হয়েছিল।
তিব্বতে নির্মীয়মাণ এ প্রকল্প কতজন মানুষকে স্থানচ্যুত করবে বা এটি স্থানীয় পরিবেশে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। উল্লেখযোগ্যভাবে, এ এলাকা তিব্বতীয় মালভূমির সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চলের একটি।
তবে চীনা কর্মকর্তাদের মতে, তিব্বতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো পরিবেশ বা নিম্নাঞ্চলের জল সরবরাহে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বাংলাদেশ ও ভারত প্রকল্পটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ, এ বাঁধের ফলে স্থানীয় পরিবেশের পাশাপাশি নদীর নিম্নাঞ্চলের প্রবাহ ও গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে।
ইয়ারলুং জাংবো নদী তিব্বত ছাড়ার পর ভারতের অরুণাচল প্রদেশ এবং আসাম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র নামে প্রবেশ করেছে এবং শেষে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
চীন ইতোমধ্যেই তিব্বতের পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত ইয়ারলুং জাংবোর উপরের অংশে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। এর উপরের অংশে আরও প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করছে চীন।