গ্রামীণ ফোন ও রবির সঙ্গে বিরোধের সমাধান তিন সপ্তাহের মধ্যে: অর্থমন্ত্রী
মোবাইল অপারেটর গ্রামীণ ফোন ও রবির সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) বকেয়া পাওনা নিয়ে যে বিরোধ চলছে তা আলোচনার মাধ্যমে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গ্রামীণ ফোন ও রবির কাছ থেকে টাকা পাওনা থাকার সমস্যাটির সমাধান অন্য কোনো পথে নয় বরং আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।
অর্থমন্ত্রী বলেন, "বকেয়া বিষয়ে যে সমস্যা তা সমাধানে তারাও হারবে না, আমরাও হারব না। তারা এ দেশে ব্যবসা করবে এবং আমাদের পাওনাও বুঝিয়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে আমরাও তাদের সাহায্য করব।"
দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো প্রতি বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করে যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, "এখন বকেয়া নিয়ে বিরোধ। তারা (গ্রামীণ ফোন ও রবি) কিছু কিছু ব্যাপারে বিরোধ করছে। আমরা নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করেছি।"
"ভুল বোঝাবুঝির জন্য এ সমস্যা হয়েছে। আমরা দেখছি কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে সমস্যার সমাধান হবে। তবে আমাদের ক্ষতির সম্ভবনা বেশি। কিন্তু সমাধানের বাইরে আমরা অন্য কোনো পদ্ধতিতে যাব না। আমরা আশা করি দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে এটি সমাধান হবে। আমরা এ জন্য আদালতে যাব না, নিজেরা বসেই সিদ্ধান্ত নেব। আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান করব। সমাধান অবশ্যই হবে। তারাও জিতবে আমরাও জিতব। দুই মোবাইল অপারেটর যে মামলা করেছে (বিটিআরসির বিরুদ্ধে) তারা সেটি প্রত্যাহার করবে," যোগ করেন মুস্তফা কামাল।
এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, "বড় দুটি অপারেটরের সাথে দেনা -ওনার বিষয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন আমাদের সবার মত একই। আমরা চাই না ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হোক। আবার জাতীয় রাজস্বও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আমরা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচ্ছি তখন অর্থমন্ত্রী নিজে দায়িত্ব নিয়ে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা কোনো পক্ষকে হারাতে চাই না, আবার নিজেরাও হারতে চাই না। ব্যবসার জন্য সুন্দর পরিবেশ থাকুক সেটা চাই। কারও সদিচ্ছার কোনো অভাবে নেই। আমরা পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারব।"
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বিআরটিসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জহুরুল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস এবং গ্রামীণ ফোনের সিইও মাইকেল ফোলি উপস্থিত ছিলেন।
মোশাররফ হোসেন বলেন, অপারেটর দুটির কাছে বিটিআরসির পাওনা টাকার ৬০ থেকে ৭০ ভাগই সুদ। তবে এনবিআর যে টাকা পায় সেখানে সুদ নেই।
বিটিআরসির নিরীক্ষা অনুযায়ী, গ্রামীণ ফোনের কাছ থেকে সরকারের পাওনা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৪ হাজার ৮৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাবে এনবিআর। অন্যদিকে, রবির কাছে পাওনা রয়েছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এতে এনবিআরের অংশ ১৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকা।
এ নিরীক্ষা প্রতিবেদন ‘ভুল’ দাবি করে বিটিআরসির বিরুদ্ধে গ্রামীণ ফোন ও রবি ঢাকার দেওয়ানি আদালতে যথাক্রমে ২৬ ও ২৫ আগস্ট মামলা করে।
বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় ‘গ্রামীণ ফোন ও রবির টু-জি ও থ্রি-জি লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না’ তা জানতে চেয়ে ৫ সেপ্টেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিটিআরসি। এর আগে সংস্থাটি অপারেটর দুটিকে নতুন এনওসি (অনাপত্তিপত্র) দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তারা।