১০০ বছর বয়সে প্রয়াত যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার
জর্জিয়ার প্লেইনস-এ ১০০ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। কার্টার সেন্টার তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘজীবী প্রেসিডেন্ট। গত অক্টোবর মাসে তিনি ১০০তম জন্মদিন উদযাপন করেন।
বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা কার্টার সেন্টার জানিয়েছে, রোববার বিকেলে জর্জিয়ার প্লেইনসে নিজ বাড়িতে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এই ডেমোক্র্যাট নেতা ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সংকটের সময় তাকে এই দায়িত্ব পালন করতে হয়।
হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় বাদাম চাষি থেকে রাষ্ট্রপতি বনে যাওয়া জিমি কার্টারের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছিল। তবে পরবর্তীতে মানবাধিকারমূলক কাজের মাধ্যমে তিনি খ্যাতি পুনরুদ্ধার করেন এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী হন।
তার ছেলে চিপ কার্টার এক বিবৃতিতে বলেন, 'বাবা শুধু আমার নয়; শান্তি, মানবাধিকার এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় বিশ্বাসী প্রত্যেকের নায়ক ছিলেন।'
প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে কার্টার জর্জিয়ার গভর্নর, মার্কিন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট এবং কৃষক ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি চার সন্তান, ১১ নাতি-নাতনি ও ১৪ প্রপৌত্র রেখে গেছেন।
কার্টারের স্ত্রী ও ৭৭ বছরের দাম্পত্যসঙ্গী রোজালিন ২০২৩ সালের নভেম্বরে মারা যান।
২০১৮ সালে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের মৃত্যুর পর থেকে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
গত বছর কার্টার অজ্ঞাত এক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা বন্ধ করে বাড়িতেই সেবা নেওয়া শুরু করেন।
তার মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন এক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে বলেন, 'বিশ্ব একজন অসাধারণ নেতা, রাজনীতিবিদ এবং মানবতাবাদীকে হারিয়েছে।'
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'জিমি এমন একটি সময়ে দায়িত্ব নিয়েছিলেন যখন দেশ গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল, এবং তিনি তার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে আমেরিকানদের জীবনমান উন্নত করার চেষ্টা করেছিলেন। এজন্য আমরা সবাই তার কাছে ঋণী।'
প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিমি কার্টারের মেয়াদ মূলত তীব্র অর্থনৈতিক সংকট এবং একাধিক পররাষ্ট্রনীতি চ্যালেঞ্জের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ইরান জিম্মি সংকট, যার সমাপ্তি ঘটে আটজন মার্কিনীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
তবে কার্টার প্রেসিডেন্ট থাকার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির সাফল্যও অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরে মধ্যস্থতা করেছিলেন।
তবে তবে এই সাফল্য দ্রুত ম্লান হয়ে যায়। মাত্র দুই বছর পর, ১৯৮০ সালের নির্বাচনে ভোটাররা রিপাবলিকান নেতা রোনাল্ড রিগ্যানকে বেছে নেন। কার্টারকে মূল্যস্ফীতি ও রেকর্ড চড়া সুদহারের মতো সমস্যা সামলাতে ব্যর্থ দুর্বল নেতা হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন রিগ্যান।
১৯৮০ সালের নির্বাচনে ভূমিধস পরাজয়ের মুখোমুখি হন কার্টার। সেই নির্বাচনে তিনি মাত্র ছয়টি রাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে জিততে পেরেছিলেন।
এই ভরাডুবির পর রিপাবলিকানরা প্রায়ই কার্টারকে উদারপন্থী অদক্ষতার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরত। এমনকি তার নিজ দলেও অনেকেই তাকে উপেক্ষা করতেন।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনহিতৈষী কাজ এবং সাদাসিধে জীবনধারা কার্টারকে নতুনভাবে জনপ্রিয় করে তোলে।
কার্টারই ছিলেন একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর বাড়িতেই পুরো সময় কাটান। রাজনীতিতে প্রবেশের আগের সাধারণ, দুই কক্ষের র্যাঞ্চ-স্টাইলের বাড়িতেই জীবনের বাকিটা কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি।
অন্য সাবেক প্রেসিডেন্টদের মতো লোভনীয় ভাষণ বা স্মৃতিকথা প্রকাশের চুক্তিতে যাননি তিনি। কার্টার ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, তিনি কখনোই ধনী হতে চাননি।
বাকি জীবন তিনি বৈষম্য ও রোগের মতো বৈশ্বিক সমস্যাগুলো মোকাবিলায় কাজ করেছেন।
তিনি নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে মিলে 'দ্য এল্ডার্স' গঠন করেন। বিশ্বনেতাদের এই দলটি শান্তি ও মানবাধিকারের জন্য কাজ করত।
২০০২ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণের সময় কার্টার বলেন, 'পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুতর এবং সর্বজনীন সমস্যা হলো ধনী ও গরিবদের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান বৈষম্য।'
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে কার্টারের সম্মানে একটি রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে।