নারীরা ব্যবহার করছেন, বাড়ছে স্কুটারের বিক্রি
ঢাকার কারওয়ানবাজার মোড়ের সিগন্যালে স্কুটার নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন অভিনেত্রী ও মডেল তানহা তানিয়া। বাস বা ট্যাক্সি বাদ দিয়ে চলাচলের জন্য স্কুটার কেন বেছে নিলেন?
প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন তানহা। বললেন, “ঢাকার রাস্তায় ঘন্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকতে পারি না একদম। সিএনজি অটোরিকশা বা রাইড-শেয়ারিং সার্ভিসগুলোর চেয়ে স্কুটা্রই বেশি খরচ-সাশ্রয়ী।”
নগরীর যানজট অসহনীয়তা আর ভিড়ে ঠাসা গণপরিবহনে মাঝে মাঝেই যৌনহয়রানির শিকার হবার কারণে নারীরা বেছে নিচ্ছেন স্কুটার। তানিয়ার মতো স্কুটার চালাতে সাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন এমন নারীর সংখ্যা এখন বাড়ছে। পথেঘাটে মাঝে মাঝেই ওদের দেখা মিলছে। পেশা যা-ই হোক, নারীদের কাছে রোজকার চলাফেরার জন্য হালকা এই বাহনের কদর বেড়েছে।
বাংলা মোটরের একটি স্কুটার শো রুমের নাম ‘বাদশাহ মটরস’। মালিক বাদশাহ নিজেই দোকানটির দেখাশুনা করেন। দোকানে নারী ক্রেতারা আসেন কি না জানতে চাইলে বললেন, নারীদের মধ্যে স্কুটার জনপ্রিয় হবার পর থেকে তার ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটছে। এখন মাসে ১৫টি স্কুটার বিক্রি হচ্ছে তাদের, আগে যেখানে হতো বড়জোর তিনটির মতো।
স্কুটার মার্কেটের সেরা দুটি ব্র্যান্ড টিভিএস ওয়েগো ও টিভিএস জুপিটার দুটোই বিক্রি করছেন বাদশাহ।
মগবাজারের টিভিএস-এর শো রুমেও দেখা যাচ্ছে স্কুটারের বেচাকেনা বেড়েছে। কারণ নারীদের অনেকেই কিনছেন বাহনটি। শো রুমের স্টাফরা জানালেন, টিভিএস ওয়েগোই বেশি চলছে। কারণ এটির ওজন কম, আর এটিতে যুক্ত রয়েছে ডিজিটাল মিটার।
মগবাজারের পাইকারি মোটরসাইকেল দোকান নাহার এন্টারপ্রাইজ। দোকানের ম্যানেজার মোহাম্মদ জানালেন, গত দু’বছরে তাদের বিক্রি বেড়েছে। মাসে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ মোটরসাইকেল বিক্রি করতে পারছেন এখন।
হিরো প্লেজার, হিরো মেস্ত্রো ও মাহিন্দ্রর মতো স্কুটারগুলো সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে। ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ত্রিশের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে এগুলো। তুলনামূলক অভিজাত ব্র্যান্ড ইয়ামাহার দাম শুরুই হয় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে।
সিরাজুল মনে করেন, মোটরসাইকেলের বিভিন্ন অংশের ওপর ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্তে ও নানা ধরনের রাইড-শেয়ারিং সেবা চালু হওয়ায় বিক্রি বেড়েছে।
তবে, বেশিরভাগ দোকানমালিক ও ম্যানেজার বলছেন, নারীদের মধ্যে কর্মজীবী ও ছাত্রীরা বেশি কিনছেন স্কুটার। কারণ তাদের সারাদিন নানা কাজে বেরুতে হয় বাইরে।
বইছে পরিবর্তনের হাওয়া?
ব্যবসায়ী নাহিদ তন্ময় বেশ ক’বার হয়রানির শিকার হবার কারণে গণপরিবহনে চলাচল বাদ দিয়েছেন। ২০১৫ সালে তিনি স্কুটার কিনেছেন। স্কুটারটি তার যাতায়াতের সময় বাঁচাচ্ছে। কোনো ধরনের হয়রানির শিকারও হতে হয় না তাকে। এসব কারণে তন্ময় তার স্কুটারটি ব্যবহার করে সচ্ছন্দ।
শাওমি বাংলাদেশের বিপণন কর্মকর্তা নবনীতা রায়ের অবশ্য কখনওই বাসে যাতায়াত করতে ভালো লাগত না। ২০১৭ সালে স্কুটার কিনে এখন স্বাধীনভাবে চালাচ্ছেন তিনি। এই স্কুটার তার ক্ষমতায়ন ঘটিয়েছে বলেও মনে করেন নবনীতা। কারণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকতে হয় না তাকে। আর নগরের যেখানে খুশি সেখানে সহজে যেতে পারেন।
ওদিকে, রাই্ড-শেয়ারিং সার্ভিসে যুক্ত হয়ে শাহনাজ আক্তার পরিবারের খরচ চালাচ্ছেন।
তানহা, তন্ময়, নবনীতা বা শাহনাজ— স্কুটার চালানোটা তাদের কাছে যেন হয়ে উঠেছে যে-কোনো সীমাবদ্ধতা আর অসাচ্ছন্দ্যের বিরুদ্ধে লড়বার ভাষা। নগরীর পথেঘাটের সব সমস্যা তোয়াক্কা না করে চলবার এক মোক্ষম জবাব।