পরিবেশ ধ্বংস করে নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়ন ও সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবি
বিগত সরকারের আমলে পরিবেশ ধ্বংস করে নেওয়া প্রকল্পগুলোর পুনর্মূল্যায়ন করে সংশোধনসহ এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তি, পরামর্শদাতাসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনেরা।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল রক্ষায় চলমান 'বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন' প্ল্যাটফর্ম অবস্থান কর্মসূচির ৩০তম দিনে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান।
কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, "ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকারের অন্যতম কাজ হচ্ছে বিগত সরকারের আমলে যেসকল প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা এবং ক্ষতিকর জায়গাগুলো সংশোধন করা। বিগত সরকারের পরিবেশ ধ্বংসের প্রকল্পের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাই তো এ সরকারের প্রধান কাজ হওয়া উচিত।"
আনু মুহাম্মদ বলেন, "বিগত সময়ে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও সিদ্ধান্তের কারণে কোন কোন এলাকায় প্রাণ-প্রকৃতি নষ্ট হয়েছে, সেটার একটি চিত্র আমরা সরকারের কাছ থেকে চাই। সবগুলো চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে এবং যেগুলো ক্ষতিকর সেগুলো বাতিল করতে হবে। এই সরকার যে শেখ হাসিনা সরকারের মতো নয়, সেটা প্রমাণ করতে প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় জায়গায় আসতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা হলেই নিশ্চিত হবে, এই সরকার শেখ হাসিনার সরকারের মতো নয়।"
তিনি বলেন, "বেশি দিন লাগবে না, ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। সবগুলো ঋণ করে করা। আমরা ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এর মধ্যে পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল ধ্বংস করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এই কাজ কোনোভাবেই চলতে পারে না। এই এলাকার প্রাণ-প্রকৃতি ফিরিয়ে দিতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "বর্তমান সরকার বলছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ আগের সরকারের আমলে চুক্তির কারণে নাকি পরিবর্তন করা যাবে না, কিন্তু এ সরকারের মূল কাজই তো হচ্ছে পরিবর্তন করার। এই সরকারের যে পরিবর্তন হয়েছে, সেখানে দেখতে হবে তারা জনগণের কথা শুনছে কি-না।"
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, "একের পর এক জনবিরোধী প্রকল্প নিয়ে ঢাকার বাসযোগ্যতা নষ্ট করা হচ্ছে। এগুলোর অবশ্যই পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কোনো ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি নেই। কারওয়ানবাজারে সংযোগ সড়ক বাতিল করতে হবে। মূল পরিকল্পনায় পরবর্তীতে যুক্ত হতে পারলে কেন তা বাতিল করা যাবে না? এ ধরনের জনবিরোধী প্রকল্পে যারা যুক্ত তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।"
গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নের নামে আমরা দেখেছি যাতে যাচ্ছেতাইভাবে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস হয়েছে। ঢাকার ছোটবড় সকল উদ্যানই দখল-দূষণে পরিপূর্ণ। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন সরকার এসেছে, তাদের সবগুলো প্রকল্প নিয়ে ভাবা দরকার। এখন এগুলো সংশোধন না করলে আমাদের শহীদদের যে লক্ষ্য সেটা বিঘ্নিত হবে।"
নারী অধিকারকর্মী শিরিন প. হক বলেন, "একটি রমনা পার্ক দিয়ে ঢাকা শহর চলতে পারে না। গত ৩০ দিনে আন্দোলনের সমাধান আসেনি। আমরা চাইবো যেন আরও ৩০ দিন না লাগে। তার আগেই যেন আমরা একটা সমাধান চাই।"
বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আমিরুল রাজিবের সঞ্চালনায় উক্ত নাগরিক সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ প্ল্যানার্স এর সাধারণ সম্পাদক মেহেদি আহসান, চলচ্চিত্র পরিচালক আকরাম খান, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও পরিবেশকর্মী ইবনুল সাঈদ রানা ও বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান প্রমুখ।