৭.২ মিলিয়ন ডলারে আলাস্কা, ১৫ মিলিয়নে ক্যালিফোর্নিয়া; এবার গ্রিনল্যান্ড কত?
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ড কেনার পুনরায় হুমকি বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। অনেকেই এসব হুমকিকে ট্রাম্পের 'ফাঁকা বুলি' হিসেবে উপেক্ষা করেছেন। তবে এমন একটি পদক্ষেপের পেছনের ইতিহাস আছে, কারণ ১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া থেকে আলাস্কা কিনেছিল। এছাড়া, ওয়াশিংটনের গ্রিনল্যান্ড কেনার এটিi প্রথম প্রচেষ্টা নয়। ১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র আর্কটিক দ্বীপটির জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সোনা প্রস্তাব করেছিল। ডেনমার্ক সেই প্রস্তাব দ্রুত প্রত্যাখ্যান করেছিল।
তবে, গ্রিনল্যান্ড কেনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সহজ হবে না, কারণ যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক আইনগত এবং অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা পার করতে হবে। তাছাড়া, এটি কূটনৈতিক ঝুঁকির সঙ্গেও জড়িত, কারণ এতে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সাথে সম্পর্ক ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং ন্যাটো জোটকে দুর্বল করতে পারে।
৮ জানুয়ারি তার শপথ পূর্ববর্তী প্রেস কনফারেন্সে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের "জাতীয় নিরাপত্তা" এবং "মুক্ত বিশ্ব" রক্ষার জন্য গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন। তিনি পানামা খাল বা গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সামরিক বা অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের সম্ভাবনাও বাতিল করেননি।
তিনি বলেন, "অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য আমাদের এগুলোর প্রয়োজন।"
এর পর তার ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র গ্রিনল্যান্ড সফরে যান। সেখানে কিছু স্থানীয় বাসিন্দা তাকে মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন ক্যাপ পরে স্বাগত জানান।
গ্রিনল্যান্ড কেনার জন্য ট্রাম্পের ২০১৯ সালের প্রস্তাব
জনপ্রিয় ধারণার বিপরীতে, ট্রাম্প দীর্ঘ সময় ধরেই গ্রিনল্যান্ড কেনার পক্ষে মত প্রকাশ করে আসছেন। ২০১৯ সালে তার প্রথম মেয়াদে তিনি প্রথম এই প্রস্তাব দেন। সেই সময় ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিকসেন প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন।
ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কেনার ব্যাপারে হয়ত সত্যি আগ্রহী এবং যদি ডেনমার্ক ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে না চায়, তবে তিনি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পথে যেতে পারেন। ২০১৯ সালের আগস্টে ডেনমার্ক যখন তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তখন ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া থেকে এটি স্পষ্ট হয়।
ট্রাম্প ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডরিকসেনের গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানকে "অশালীন" এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অবমাননা বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্প তখন হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, "আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রীর (ফ্রেডেরিকসন) মন্তব্য ... অশালীন ছিল। আমি মনে করি এটা একটি অযথা মন্তব্য ছিল। তার শুধু বলার প্রয়োজন ছিল, 'না, আমরা আগ্রহী নই।' সে আমার সঙ্গে কথা বলছে না, সে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলছে। আপনি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এমনভাবে কথা বলতে পারেন না, অন্তত আমার সময়কালে।"
এছাড়া, ওই প্রত্যাখ্যানের পর ট্রাম্প কোপেনহেগেন সফরও বাতিল করেন। এটি ডেনমার্কের রাজনৈতিক পরিসরে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল।
এখন, তার দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প স্পষ্টতই গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হিসেবে পরিণত করার দীর্ঘকালীন স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
ভৌগোলিকভাবে উত্তর আমেরিকার অংশ হয়েও গ্রিনল্যান্ড কীভাবে ডেনমার্কের অঞ্চল হলো?
আর্কটিক এবং উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। যদিও অস্ট্রেলিয়া গ্রিনল্যান্ডের চেয়ে অনেক বড়, সেটি দ্বীপ হিসেবে গণ্য হয় না কারণ এটি একটি মহাদেশ।
ভৌগোলিকভাবে গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকার অংশ। এর রাজধানী নুক নিউইয়র্ক-এর (প্রায় ২,৯০০ কিলোমিটার) অনেক কাছাকাছি। আর কোপেনহেগেন থেকে (৩,৫০০ কিলোমিটার) অনেক দূরে।
তবে, গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের অঞ্চল। গ্রিনল্যান্ড ডেনিশ রাজ্যের তিনটি অঞ্চলের একটি। অন্য দুটি হলো– ডেনমার্ক এবং ফারো দ্বীপপুঞ্জ।
গ্রিনল্যান্ডে প্রথম স্ক্যান্ডিনেভিয়ান উপস্থিতি ছিল ভাইকিংদের। তারা প্রায় ৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে এই দ্বীপে এসে পৌঁছান। মধ্যযুগীয় আইসল্যান্ডিক কাহিনি অনুযায়ী, এরিক দ্য রেড একটি বিশাল নৌবহরের নেতৃত্বে সেখানে পৌঁছান (আইসল্যান্ড থেকে হত্যার অপরাধে নির্বাসিত হওয়ার পর)। তবে, ভাইকিংদের বসতি মাত্র ১৫শ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত টিকেছিল। তারপর তারা মারা যায় বা চলে যায়।
১৮শ শতকের শুরুতে ডেনমার্ক আবার এই বিশাল আর্কটিক দ্বীপকে উপনিবেশে পরিণত করে, ডেনিশ-নরওয়েজিয়ান পুরোহিত হান্স এগেদে ১৭২১ সালে গ্রিনল্যান্ডে এসে পৌঁছানোর পর। এগেদে গ্রিনল্যান্ডে প্রথম ডেনিশ উপনিবেশ গঠন করে গডথোঅ্যাপ শহরে (বর্তমানে নুক)। এই উপনিবেশের নিয়ন্ত্রণ ছিল কোপেনহেগেনের কাছে।পরবর্তী দশকগুলোতে গ্রিনল্যান্ডের অন্যান্য অংশেও এই উপনিবেশ বিস্তার লাভ করে।
১৯২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডের উপর ডেনমার্কের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে। এর বিনিময়ে কোপেনহেগেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২৫ মিলিয়ন ডলারে ক্যারিবীয় অঞ্চলের ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ বিক্রি করতে রাজি হয়।
১৯৫৩ সালে গ্রিনল্যান্ডের আইনগত অবস্থা পরিবর্তন হয়ে ডেনমার্কের উপনিবেশ থেকে একটি ডেনিশ কাউন্টিতে পরিণত হয়, যা প্রদেশের সমতুল্য। ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ডবাসীদের ডেনিশ নাগরিকত্ব এবং ডেনিশ পাসপোর্ট প্রদান করেছিল।
গ্রিনল্যান্ড ১৯৭৯ সালে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে পরিণত হয়, যা তার নিজস্ব সংসদ প্রতিষ্ঠার প্রথম ঘটনা ছিল। ২০০৯ সাল থেকে গ্রিনল্যান্ডের ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন রয়েছে এবং একটি গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণা করার অধিকার রয়েছে। তবে, দ্বীপটির বিদেশ, প্রতিরক্ষা, এবং নিরাপত্তা নীতি এখনও ডেনমার্ক পরিচালনা করে।
গ্রিনল্যান্ডের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক আগ্রহ
যদিও ১৯২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডের ওপর ডেনমার্কের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করেছিল, খুব দ্রুতই তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিধা দেখা দেয়। ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাজি জার্মানি ডেনমার্ক আক্রমণ করার পর যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড দখল করে নেয়। তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী গ্রিনল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমে পিটুফিক স্পেস বেজে একটি স্থায়ী উপস্থিতি বজায় রেখেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে, গ্রিনল্যান্ড কোল্ড ওয়ারের (স্নায়ুযুদ্ধ) ভূরাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থান লাভ করে।
গ্রিনল্যান্ডের আর্কটিক অঞ্চলে অবস্থান হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বীপটির প্রতি আগ্রহ আবার বৃদ্ধি পায়। ১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান এই দ্বীপটি ১০০ মিলিয়ন ডলারে কেনার প্রস্তাব দেন। তবে, ডেনমার্ক সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
তবে, ১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর (উত্তর আটলান্টিক চুক্তি) আওতায় ডেনমার্কের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রিনল্যান্ডে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন এবং নতুন সামরিক এলাকা গঠন করার অধিকার দেওয়া হয়। চুক্তিটি ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডকে জানানো সাপেক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রকে মুক্তভাবে সেনাবাহিনী স্থানান্তরের অনুমতি দেয়।
ট্রাম্প কেন গ্রিনল্যান্ড চান?
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে এবং গ্রিনল্যান্ডের প্রতি তার পুনরায় আগ্রহের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে।
সুরক্ষা: ট্রাম্প বারবার বলেছেন, 'জাতীয় নিরাপত্তা' এবং 'মুক্ত বিশ্ব' রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন। ২৩ ডিসেম্বর ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে লিখেছিলেন, "জাতীয় নিরাপত্তা এবং বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ একেবারে প্রয়োজনীয়।"
উত্তরাঞ্চলীয় বাণিজ্য রুট: গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের (বিশ্ব উষ্ণায়ন) ফলে আর্কটিকে বরফের স্তর গলতে শুরু করেছে এবং শীঘ্রই একটি নতুন (অনেক ছোট) উত্তরাঞ্চলীয় শিপিং রুট আর্কটিকের মাধ্যমে ইউরোপকে উত্তর আমেরিকার সাথে সংযুক্ত করবে। যদি এমন একটি উত্তরাঞ্চলীয় বাণিজ্য রুট বাস্তবায়িত হয়, তবে গ্রিনল্যান্ড তার মধ্যে একটি কেন্দ্রীয় স্থান গ্রহণ করবে।
এই বাণিজ্য রুট যুক্তরাষ্ট্রের পানামা খালের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করবে।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির আর্থ সায়েন্স (পৃথিবী বিজ্ঞান) বিভাগের অধ্যাপক আমান্ডা লিঞ্চ এনপিআর-কে বলেছেন, "আর্কটিকের দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রিনল্যান্ড আমাদের চোখ, যা সব কিছু দেখছে। বিশেষ করে উত্তর সাগরের রুট, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।"
প্রাকৃতিক সম্পদ: গ্রিনল্যান্ড বহু প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, যেমন হাইড্রোকার্বন এবং দুর্লভ খনিজ উপাদান। এই দ্বীপে কপার, লিথিয়াম এবং কোবাল্টের সমৃদ্ধ খনি রয়েছে, যা ব্যাটারি এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরি করতে প্রয়োজনীয়।
আমান্ডা লিঞ্চ বলেন, "গ্রিনল্যান্ডে অনেক সম্পদ রয়েছে – শুধু হাইড্রোকার্বন নয়, বরং দুর্লভ খনিজ উপাদান এবং ইউরেনিয়ামও রয়েছে। এবং যখন আমরা গ্রিন এনার্জির রূপান্তরের কথা ভাবছি, তখন দুর্লভ খনিজ উপাদানের বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যে কোনো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"
যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড কেনার ইতিহাস
যদিও একটি দেশের ভূখণ্ড কেনার ধারণাটি অবাস্তব মনে হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যেখানে তারা ভূখণ্ড ক্রয়ের মাধ্যমে নিজেদের সীমানা সম্প্রসারিত করেছে। প্রকৃতপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্র ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভূখণ্ড কিনে তার সীমানা বৃদ্ধি করছে।
ফ্রান্স থেকে লুইজিয়ানা (১৮০৩)— ১৮০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র লুইজিয়ানার ক্রয় চুক্তির আওতায় ফ্রান্সের কাছ থেকে ৫৩ কোটি একর ভূমি কিনে নেয়। এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ১৫ মিলিয়ন ডলারে লুইজিয়ানা সহ বর্তমান আরও এক ডজন রাজ্যের অংশ পেয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে– ওকলাহোমা, আর্কানসাস, ক্যানসাস, নেব্রাস্কা, মিসৌরি এবং আইওয়া।
স্পেন থেকে ফ্লোরিডা (১৮১৯)— ১৮১৯ সালে অ্যাডামস-অনিস চুক্তি (১৮১৯) এবং পরবর্তীতে ট্রান্সকন্টিনেন্টাল চুক্তির (১৮২১) মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র স্পেনের কাছ থেকে ফ্লোরিডা নিয়ে নেয়।
মেক্সিকো থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাডা, উটাহ ও অ্যারিজোনা (১৮৪৮)— ১৮৪৮ সালে মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৫ লাখ ২৯ হাজার বর্গমাইল ভূমি ছেড়ে দেয়, যা বর্তমান ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাডা, উটাহ, অ্যারিজোনা এবং কোলোরাডো, নিউ মেক্সিকো ও ওয়াইমিং এর কিছু অংশ। এটির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১৫ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল।
রাশিয়া থেকে আলাস্কা (১৮৬৭)— ১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে ৭.২ মিলিয়ন ডলারে আলাস্কা কিনে নেয়। এই চুক্তির মাধ্যমে আলাস্কার প্রতি একরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ২ সেন্ট প্রদান করেছিল।
ডেনমার্ক থেকে ভার্জিন আইল্যান্ডস (১৯১৭)— ১৯১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ডেনমার্কের কাছ থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলারে ক্যারিবীয় অঞ্চলের ভার্জিন আইল্যান্ডস কিনে নিয়েছিল।
আইনি বাধা
যদিও মার্কিন ইতিহাসে অন্যান্য দেশ থেকে নতুন অঞ্চল যুক্ত করার অনেক উদাহরণ রয়েছে, বর্তমান সময়ে এই প্রক্রিয়া অনেক বেশি কঠিন হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অংশ হিসেবে নিতে হলে ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ড উভয়ের সরাসরি অনুমোদন প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ড উভয়ের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন, "গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।"
২০০৯ সালের চুক্তি অনুযায়ী, গ্রিনল্যান্ড স্বাধীনতা পেতে একটি গণভোট আয়োজন করতে পারে। বর্তমানে ডেনমার্কে একটি শক্তিশালী স্বাধীনতা আন্দোলন চলমান রয়েছে।
যদি এই আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং গ্রিনল্যান্ড স্বাধীন হয়, তবে ডেনমার্ক বিষয়টি থেকে বাদ পড়ে যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি গ্রিনল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবে। এমন পরিস্থিতিতে, গ্রিনল্যান্ড একটি গণভোটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
৩ জানুয়ারি গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুটে এগেদে স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, "আমাদের সময় এসেছে, আমরা নিজেরাই আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব। এবং কারা আমাদের ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করবে এবং আমাদের বাণিজ্যিক অংশীদার কারা, তা নির্ধারণ করতে হবে।"
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একবার স্বাধীন হলে গ্রিনল্যান্ডের জনগণ ডেনমার্কের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের উপনিবেশী শাসক হিসেবে গ্রহণ করতে চাইবে না।
এছাড়া, যদি গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে রাজি হয়, তবে গ্রিনল্যান্ডকে একটি মার্কিন অঞ্চল বানানোর জন্য দুই-তৃতীয়াংশ মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সেই চুক্তি অনুমোদন করতে হবে।
এটি পরিষ্কার যে, যদিও এটি অতীতে ঘটেছে, গ্রিনল্যান্ডকে কিনে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য বানানো ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য সহজ হবে না।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়