সেন্টমার্টিনে ৩ রিসোর্টে আগুন: প্রাথমিক ক্ষতি ৬ কোটি টাকা, ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ৩টি রিসোর্টে অন্তত ৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ঘটনার তদন্তে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাত ২টা ১০মিনিটের দিকে দ্বীপের গলাচিপা এলাকার বিচ ভ্যালি, কিংশুক ও সাইরী ইকো-রিসোর্টে আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৩ রিসোর্টের ২৬টি কক্ষ পুড়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ইকো-রিসোর্টের মালিকদের বরাত দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, মধ্যরাতে সেন্টমার্টিনে পশ্চিম সৈকতের গলাচিপায় অবস্থিত সাইরী ইকো রিসোর্টের (রিসিপশন) অভ্যর্থনা কক্ষে মাল্টিপ্লাগে শর্টসার্কিট হয়ে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে পার্শ্ববর্তী বিচ ভ্যালির ১৮টি, কিংশুকের ৭টি এবং সাইরী ইকো-রিসোর্টের (রিসিপশন) অভ্যর্থনা কক্ষসহ সর্বমোট ২৬টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সেন্টমার্টিন দায়িত্বে থাকা টেকনাফ-২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, "আগুন লাগার খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় পর্যটকদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা গেছে।"
তবে, আগুন নেভাতে গিয়ে স্থানীয় ৬ জন আহত হন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কিংশুক ইকোরিসোর্টের স্বত্বাধিকারী সরওয়ার আলম বলেন, "তিনটি রিসোর্টে প্রাথমিকভাবে ৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।"
সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা অজিত কুমার দাস বলেন, "সেন্টমার্টিনে সাইরী রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে পাশের আরও দুটি রিসোর্ট আগুনে পুড়ে যায়। আমরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। রিসোর্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।"
এদিকে, ৩ রিসোর্টের ২৬ কক্ষ পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় দ্বীপের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দ্বীপের জনপ্রতিনিধিদের দাবি, আড়াইশো ছোট-বড় বিভিন্ন মানের রিসোর্টের মধ্যে মাত্র কয়েকটি ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠানেই নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। এছাড়া, আগুন নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো সরকারি ব্যবস্থাও।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, "দ্বীপটিতে বিভিন্ন মানের আড়াই শত আবাসিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কী, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে দ্বীপটিতে কোনো সরকারি ব্যবস্থাও নেই। বিষয়টিকে এখন গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।"
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, "আমাদের একটি টিম সেখানে পৌঁছেছে। আগুনের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহায়তায় করা যায়, সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।"
এদিকে, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, "সেন্টমার্টিন দ্বীপে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুইটি রিসোর্ট সম্পূর্ণ ভস্মিভূত এবং একটি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জেনেছি। পর্যটন মৌসুমের পাশাপাশি পর্যটকদের অবস্থান এবং গুরুত্ব বিবেচনায় ঘটনার তদন্তে টেকনাফের ইউএনও'কে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২ দিনের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও সুপারিশমালা প্রণয়নে তদন্ত রিপোর্ট দিতে কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।"
তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।