ট্রাম্প শাসনামলে এক লাখ কোটি ডলার সম্পদ বেড়েছে মার্কিন বিলিওনিয়ারদের
মাত্র চার বছর আগে প্রথম বিলিওনিয়ার ব্যবসায়ীকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন মার্কিন নাগরিকেরা। তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির সম্পদ বেড়েছে এক লাখ কোটি ডলার।
সংখ্যায় দুইশ' জনের কম- এই অতি-ধনী বিলিওনিয়াররা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার অনুপাতে মাত্র ০.০০০০৬ শতাংশ।
ব্লুমবার্গ বিলিওনিয়ার ইনডেক্স সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে। সময়টাও অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক।
কারণ; মহামারিতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বেকারত্ব আর দারিদ্র্যের কবলে পড়েছেন লাখ লাখ নাগরিক। এর মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন। আর নানা ইস্যুতে বিভাজিত জাতি হিসেবে এবারের ভোটে অংশ নিচ্ছে মার্কিন জনতা।
নির্বাচনের ফল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে তা নয়, বরং প্রভাব ফেলবে অতি-ধনীদের ঐশ্বর্যেও।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত জয়ের অনেক আগে থেকেই মার্কিন বিলিওনিয়ারদের হাতে সম্পদের পাহাড় জমা শুরু করেছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র সময় আগামী মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) ভোটের প্রেক্ষিতে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কাছে বিত্ত জড়ো হওয়ার সেই নেপথ্য কারণগুলো হয় দুর্বল হবে, না হলে আরও শক্তিশালী রূপ নেবে।
মার্কিন অতি-ধনীরা ট্রাম্পের আমলেই ফুলেফেঁপে উঠেছেন। এবং তা নিয়ে জন-অসন্তোষ বেড়েছে। ডেমোক্রেট দলের রাজনীতিতেও যোগ হয়েছে ধনীদের সম্পদের লাগাম টেনে ধরার প্রসঙ্গ। একারণেই ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের পেছনে সমর্থন দিয়েছেন কিছু অতি-ধনী। নিজেদের উপর কর বাড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
বড় পরিবর্তন কোথায় হয়েছে:
'অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টিকারী কারণগুলো আগে থেকেই ছিল। সেগুলোর দায় ট্রাম্পের নয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি পরিবর্তন ধনকুবেরদের প্রাচুর্য অকল্পনীয় হারে বাড়ার পেছনে ভূমিকা রাখে। কারণ; ট্রাম্প সম্পদ বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার পরিবর্তে- তাদের আরও ধনী হয়ে ওঠায় সাহায্য করেছেন,' ২০১৭ সালের কর আইনের উদাহরণ উল্লেখ করে- এমন মন্তব্য করেন রিড কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক কিমবার্লি ক্লাউসিং।
ওই আইনের মাধ্যমে ধনিক গোষ্ঠী এবং তাদের মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে বিপুল কর রেয়াত দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই ফলাফল এখন স্পষ্ট। ভাগ্যের উন্নতিও দৃশ্যমান।
২০১৬ সালের নির্বাচন পূর্বের রাত নাগাদ ব্লুমবার্গ বিলিওনিয়ার ইনডেক্স' তালিকায় থাকা মার্কিন ধনকুবেরদের মোট অর্থবিত্ত ছিল এক লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলারের কিছুটা কম। গত সপ্তাহ নাগাদ সেই প্রাচুর্য ছাড়িয়েছে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার !
পৃথিবীর সেরা পাঁচশ' ধনীর এ তালিকায়, মার্কিন নাগরিক রয়েছেন ১৬৬ জন। অবশ্য, ২০১৬ সালের নির্বাচনের রাতে এ সংখ্যা ছিল ১৬৮ জন। তারপরও, মহামারি সত্ত্বেও ধনকুবেরদের যে কপালে দুর্ভোগ আসেনি, তা পরিষ্কার বোঝায় এ সংখ্যা।
বিশ্বের সেরা ধনীদের মধ্যে যারা শীর্ষ ধনী, বেশিরভাগ সম্পদ তাদেরই বেড়েছে। এদের অনেকের সঙ্গে আবার ট্রাম্পের বনিবনা খুব একটা ভালো নয়। যেমন; বিশ্বের ১ নম্বর ধনী এবং অ্যামাজনের মুখ্য নির্বাহী জেফ বেজোস।
সাবেক স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি'র সঙ্গে ব্যয়বহুল বিবাহ বিচ্ছেদের পরও ট্রাম্প আমলে ১২ হাজার ১০০ কোটি ডলার বেড়েছে বেজোসের সম্পদ। এই যে ঐশ্বর্য তা অনেক দেশের বার্ষিক জাতীয় বাজেটের চাইতেও বেশি।
উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে তুলনা করলে, তা আরও স্পষ্ট বোঝা যায়। ২০১৯ সালে বেজোসের মোট সম্পদের মাত্র এক শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দিতে পেরেছিল ইথিওপিয়া। ওই সময়ে পৃথিবীর ৪৯টি দরিদ্রতম দেশের মোট জিডিপির চাইতে বেশি সম্পদের মালিক ছিলেন তিনি।
বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট, এলন মাস্ক, মার্ক জুকারবার্গ কেউই বাদ পড়েননি উত্থানের এ যাত্রায়।
অতি-ধনীদের জন্য সোনালী অধ্যায়!
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের অধিকাংশ সময় জুড়েই তেজিভাব বজায় ছিল মার্কিন পুঁজিবাজারে। এবং ধীরে ধীরে তা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠলে, ধনীদের সম্পদমূল্য বাড়তে থাকে।
মার্কিন পুঁজিবাজারে শীর্ষ পাঁচ শতাধিক কোম্পানির সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০। ২০১৬ সালের নির্বাচনী রাত থেকে এপর্যন্ত এটি বিনিয়োগকারীদের তাদের লগ্নী করা পুঁজির বিপরীতে ৬৭ শতাংশ মুনাফা প্রদাণ করেছে। প্রযুক্তি বাজারের প্রধান সূচক নাসডাক কম্পোজিট দিয়েছে সবচেয়ে বেশি বা ১২৫ শতাংশ ডিভিডেন্ট ।
মহামারি হানা দেওয়ার আগে ট্রাম্প শাসনামলে মার্কিন কর্মীদের বেতন-ভাতা সামান্য হলেও অর্থপূর্ণ মাত্রায় বেড়েছিল। তবে জীবাণু সংক্রমণের পর মার্কিন জনতার জীবন-যাত্রায় আসে বিপুল পরিবর্তন। গুরুত্ব বাড়ে ঘরে থেকে কাজ করার। একইসময় চাকরি হারান বিপুল সংখ্যক মানুষ। পক্ষান্তরে পুঁজিবাজারের বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর দর উত্থানের সুবাদে মুষ্টিমেয় কিছু বিলিওনিয়ার আরও ধনী হয়ে ওঠেন।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ