বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য সরকারি সহায়তার আহ্বান অভিভাবকদের
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য সরকারি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন শিশুদের অভিভাবকরা। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত 'বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের অভিভাবক সম্মেলন ২০২৫' এ আহ্বান জানানো হয়।
মূলত এ ধরনের শিশুদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী যত্ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের অভিভাবক বা পরিবারের লোকজন যে ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, সেগুলো তুলে ধরাই ছিল এ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।
রাজধানীর মৌচাকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নয়ন হারিয়ে যাওয়ার দু:খজনক গল্প থেকেই এই সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
মৌচাক এলাকায় একটি শপিং কমপ্লেক্সের বাইরে নয়নকে ভিন্ন রকম আচরণে ঘুরতে দেখা যায়। ফেসবুকে তার একটি ভিডিও প্রকাশ করেন একজন। ধুলো-বালিতে তার চেহারা বোঝার উপায় ছিল না। ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। পরদিনই তাকে খুঁজতে যান ঝুমনা মল্লিক ঝুমি এবং তার টিম।
নিজের নামও জানে না সে, কথাও বলে না তেমন। তারপর তার নাম দেওয়া হলো নয়ন। তার হারিয়ে যাওয়া, তাকে খুঁজে পাওয়া থেকেই সারাদেশের বিশেষ অভিভাবকদের মাঝে সাড়া পড়ে যায় যে, অভিভাবকদের না থাকার সময়ে তাহলে এই বিশেষ শিশুদের কী হবে? এই প্রশ্ন থেকেই অনুষ্ঠিত হয় শনিবারের এই অভিভাবক সম্মেলন।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ফজলে ছিদ্দীক মো: ইয়াহিয়া, পরিচালক (পরিকল্পনা, উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তি) ও উপসচিব জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়; বিশেষ অতিথি ছিলেন এস এম তৌফিক আবির, সহকারী অধ্যাপক এস সি পি এইচ এস, চিকিৎসা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর প্যারেন্টস অফ দ্য ডিফারেন্টলি এবল্ড এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি ঝুমনা মল্লিক ঝুমি। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডাক্তার আইরিন বিনতে আজাদ। এছাড়া, আরও বক্তব্য রাখেন মারুফা জামান।
এই অভিভাবক সম্মেলনে সারাদেশের প্রায় ৪০ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর অভিভাবক অংশ নিয়েছেন। দেশের বাইরে এবং ঢাকার বাইরে থেকে অনেকেই ভিডিও পাঠিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা জানিয়েছেন, চিন্তা-উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে ঝুমনা মল্লিক বলেন, "একজন নয়ন আমাদের সকলকে একত্রিত করেছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কেবল ১৪ বছর অব্দি শিশুদের নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের বড় শিশুদের কী হবে? সকল বিশেষ শিশুর জীবন যাপনের পুরো দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। আজ তাই আমরা আমাদের সন্তানদের অধিকার চেয়ে রাষ্ট্রের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। আমাদের শিশুদের ভাতা বাড়াতে হবে, চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সকল ধরনের মৌলিক অধিকার দিতে হবে।"
তিনি বলেন, "দেশের প্রতিবন্ধী সন্তানদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় অত্যন্ত জরুরি। আমরা কোনো কাজের জন্য গেলে আমাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হয়। আমাদের অনুপস্থিতিতে, আমরা যখন এই দুনিয়ায় থাকব না– তখন আমাদের শিশুদের কী হবে? দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের শিক্ষা, থেরাপি, চিকিৎসা, নিরাপদ আবাসন এবং কর্ম সুবিধা নিয়ে সরকারী পর্যায়ে সেইফ হোমের ব্যবস্থা নিতে হবে।"
অভিভাবক মারুফা জামান বলেন, "পাঠ্যপুস্তকে প্রতিটি ডিজাবিলিটি নিয়ে স্পস্ট বিবরণ দিতে হবে, সবাইকে অটিজম আক্রান্ত হিসেবে পরিচয় দেওয়া যাবে না।"
বিশেষ অতিথি এস এম তৌফিক আবির অভিভাবকদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। তবে তিনি মিরপুর-১৪ নম্বরের সুবর্ন ভবনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মানসম্মত প্রফেশনালস (পেশাদার) দিয়ে সুবর্ন ভবনের কার্যকরী ভূমিকা নেওয়ার উপর জোর দেন তিনি। গুরুত্ব দেন রিসার্চ সেলের উপর।
তিনি বলেন, "দেশের সকল পাবলিক ভার্সিটিতে বিশেষ শিক্ষা কোর্স চালু করতে হবে।"
প্রধান অতিথি ফজলে ছিদ্দীক মো: ইয়াহিয়া তার বক্তব্যে বলেন, "প্রতিবন্ধী মন্ত্রণালয় হওয়াটা ভীষণ জরুরি। অনেক মন্ত্রণালয় মার্জ হওয়া দরকার।"
তিনি সম্মেলনে সকলের বক্তব্য শুনে সকলের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। 'হাইব্রিড সেইফ হোম' এর প্রয়োজনীয়তাও উপলব্ধি করে এরজন্য কাজ করবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, "বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধীতার হার ১০ শতাংশ বলা হয়। এই হিসেবে আমাদের প্রতিবন্ধী সংখ্যা ৩৪ লাখ বা তার বেশি হবে। আমাদের একটা জরিপ দরকার। প্রতিবন্ধীতার ১২ ক্যাটাগরীর অ্যাসেসমেন্ট টুল দরকার।"
একইসঙ্গে তিনি অভিভাবকদের একতা ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়ার উপরেও জোর দেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের ফুল এবং ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়।