বিদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট
দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন আরোপের মাধ্যমে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
ইউনের এই অপ্রত্যাশিত সামরিক আইন প্রয়োগের প্রচেষ্টা দেশটিকে একটি নজিরবিহীন রাজনৈতিক সংকটে ফেলেছে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট, যাকে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলো।
এর আগে, সিউলের একটি আদালত শনিবার তার আটকাদেশ বাড়ানোর আবেদন নাকচ করার পর তিনি অভিযুক্ত হবেন নাকি মুক্তি পাবেন, তা নিয়ে সোমবারের আগে প্রসিকিউটরদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মুখপাত্র হান মিন-সু এক প্রেস কনফারেন্সে বলেন, "বিদ্রোহের নেতা এখন শাস্তি ভোগের জন্য প্রস্তুত।"
ইউনের আইনজীবী দল অভিযোগের সমালোচনা করেছে এবং তদন্তে যে "বেআইন আচরণ" করা হয়েছে, তা প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আইনজীবীরা বলেছেন, "প্রসিকিউশন একটি গুরুতর ভুল করেছে। নিজের অবস্থানকে সিআইও-র (কেন্দ্রীয় তদন্ত অফিস) অভিযুক্ত করার হাতিয়ার এবং রাজনৈতিক স্বার্থের একটি যন্ত্রে পরিণত করেছে।"
দক্ষিণ কোরিয়ায় বিদ্রোহের শাস্তি হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড। তবে ইউনকে সম্ভবত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না, কারণ দেশটি কয়েক দশক ধরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেনি।
ইউনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারিত করা হবে কি না অথবা তাকে পুনরায় তার পদে আসীন করা হবে কি না, তা নিয়ে সাংবিধানিক আদালত সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছে।
এদিকে, সামরিক আইন ঘোষণা নিয়ে চলমান তদন্তে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ইউন সুক ইওল।
ইউন তার সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে বিচারের মুখোমুখি হবেন। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় সাহায্য করার অভিযোগ রয়েছে।
গত ৩ ডিসেম্বর এক টেলিভিশন ঘোষণায় উত্তর কোরিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল "রাষ্ট্রবিরোধী" শক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য মার্শাল ল অথবা সামরিক আইন জারি করেন ইউন।
তারপরেই সামরিক বাহিনী সব সংসদীয় কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দেয় এবং গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে।
বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জে-মিয়ং জনগণকে ন্যাশনাল এসেম্বলিতে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান এবং তার সহকর্মী আইনপ্রণেতাদের ঐ আদেশ প্রত্যাহারের জন্য তৎক্ষণাৎ ভোট দিতে বলেন।
ইউনের ঘোষণার দুই ঘণ্টার মধ্যে তার দলের সদস্যসহ মোট ১৯০ জন সংসদ সদস্য জরুরি অধিবেশনে মিলিত হয়ে সামরিক আইন প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাস করেন।
সৈন্যরা পার্লামেন্টে ঢুকে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে।
১৪ ডিসেম্বর ইউনকে অভিশংসন করা হয় এবং তার দায়িত্ব স্থগিত করা হয়। এটি দীর্ঘ সময়ের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে।
তার কট্টর সমর্থকরা তার পক্ষে সমবেত হয়েছে। শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হয়ে তার মুক্তি ও পুনর্বাসনের দাবি জানায়।
যদি ইউন অফিস থেকে অপসারিত হন, তাহলে ৬০ দিনের মধ্যে একটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।
এদিকে প্রসিকিউটর অফিসের সাথে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও, তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।