বিশ্বব্যাপী অধূমপায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার বাড়ছে
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/04/4000.jpg)
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে অধূমপায়ীদের অনুপাত বাড়ছে। এর পেছনে বায়ুদূষণ একটি 'গুরুত্বপূর্ণ কারণ' বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সার এজেন্সি।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) জানিয়েছে, অধূমপায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার এখন বৈশ্বিকভাবে ক্যান্সারে মৃত্যুর পঞ্চম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
কখনোই ধূমপান না করা ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার প্রায় সম্পূর্ণভাবেই অ্যাডেনোকারসিনোমা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এটি বিশ্বব্যাপী পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে রোগটির চারটি প্রধান উপপ্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে আইএআরসি।
'ল্যানসেট রেসপিরেটরি মেডিসিন' সাময়িকীতে প্রকাশিত আইএআরসি-এর এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় ২ লাখ অ্যাডেনোকারসিনোমার ঘটনা বায়ুদূষণের সংস্পর্শের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের কারণে অ্যাডেনোকারসিনোমার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে চীনে।
দ্য গার্ডিয়ান-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গবেষণার প্রধান লেখক ও আইএআরসি-এর ক্যান্সার নজরদারি শাখার প্রধান ড. ফ্রেডি ব্রে বলেন, এই গবেষণার ফলাফল ফুসফুসের ক্যান্সারের পরিবর্তিত ঝুঁকির ওপর জরুরি নজরদারির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
তিনি আরও বলেন, যেখানে ধূমপানকে ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি, সেইসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বায়ুদূষণের মতো সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
ড. ব্রে বলেন, 'যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ধূমপানের হার কমার ফলে অধূমপায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার অনুপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণের কারণে অ্যাডেনোকারসিনোমার হার বাড়বে কি না, তা নির্ভর করবে ভবিষ্যতে তামাক ব্যবহার ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া কৌশলগুলোর সাফল্যের ওপর।'
এখনো বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের মধ্যে সর্বাধিক শনাক্ত রোগ এবং মৃত্যুর প্রধান কারণ ফুসফুসের ক্যান্সার। ২০২২ সালে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ক্যানসারের ধরন অনুযায়ী আক্রান্ত হওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বদলেছে।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার জানিয়েছে, ফুসফুসের ক্যান্সারের চারটি প্রধান ধরন– অ্যাডেনোকারসিনোমা, স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা, স্মল-সেল কারসিনোমা ও লার্জ-সেল কারসিনোমার মধ্যে অ্যাডেনোকারসিনোমা পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হচ্ছে।
আইএআরসি জানিয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী পুরুষদের মধ্যে ৪৫.৬ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৫৯.৭ শতাংশ ফুসফুসের ক্যান্সার ছিল অ্যাডেনোকারসিনোমা। ২০২০ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ৩৯.০ শতাংশ ও ৫৭.১ শতাংশ।
অধূমপায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের ৭০ শতাংশই পর্যন্তই অ্যাডেনোকারসিনোমা। এটি বায়ুদূষণের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
গত ৪০ বছরে বেশিরভাগ দেশে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের হার কমেছে, তবে নারীদের মধ্যে এই হার বাড়ছে। ২০২২ সালে ১৬ লাখ পুরুষ এবং ৯ লাখ নারী ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন।
২০২৩ সালে দ্য গার্ডিয়ান জানায়, যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো নারীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় বেশি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ধূমপানের প্রবণতায় ঐতিহাসিক পার্থক্যের প্রতিফলন। পুরুষদের মধ্যে ধূমপানের হার অনেক আগে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালেও নারীদের মধ্যে তা দেরিতে ঘটেছে।
আইএআরসি জানিয়েছে, সিগারেটের গুণগত পরিবর্তন ও ধূমপানের ধরন ক্যান্সারের ধরণ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি, বায়ুদূষণের সঙ্গে অ্যাডেনোকারসিনোমার ঝুঁকি বৃদ্ধির সরাসরি সম্পর্কের প্রমাণ বাড়ছে। তবে বিশ্বব্যাপী অধূমপায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে ঠিক কত শতাংশ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, সে সম্পর্কে এখনো সুস্পষ্ট তথ্য নেই।
গবেষণায় বলা হয়েছে, 'বায়ুদূষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, যা ব্যাখ্যা করতে পারে কেন অধূমপায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে অ্যাডেনোকারসিনোমার আধিপত্য বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী ফুসফুসের ক্যান্সারের ৫৩ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি দেখা যায়।'
গবেষণার প্রধান লেখক ড. ফ্রেডি ব্রে বলেন, 'এই গবেষণা ফুসফুসের ক্যান্সারের পরিবর্তনশীল ঝুঁকির প্যাটার্ন বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছে এবং এটি আমাদের ক্যান্সার প্রতিরোধে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'ধূমপানের ধরন এবং বায়ুদূষণের মাত্রার পরিবর্তনই ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ার প্রধান কারণ। বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে নারী ও পুরুষের মধ্যে ভিন্ন প্রবণতা নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকরী তামাক ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল তৈরি করতে হবে।'