থাইল্যান্ডে হাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হবে গর্ভনিরোধক
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/07/5000.jpg)
থাইল্যান্ডে দিন দিন বাড়ছে মানুষ-হাতি সংঘর্ষের ঘটনা। এই সমস্যার সমাধানে চলতি বছর থেকে সীমিতসংখ্যক বন্য মাদি হাতিকে জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনবে দেশটি।
১৯৮৬ সাল থেকে এশিয়ান হাতি বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। তবে থাই কর্তৃপক্ষ বলছে, সংরক্ষণ প্রচেষ্টার ফলে হাতির সংখ্যা প্রতি বছর ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। ফলে দেশের সংকুচিত বনাঞ্চলে এত হাতির জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। বনাঞ্চল সংকুচিত হওয়ায় হাতিরা ক্রমাগত জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ঢুকে পড়ছে, যার ফলে কৃষিজমি, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও।
জন্মনিয়ন্ত্রণের এই প্রস্তাব বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। অনেক পরিবেশবাদী বলছেন, এই পদ্ধতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে যথেষ্ট পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়নি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় আফ্রিকান বন্য হাতির ওপর গর্ভনিরোধক ব্যবহার করা হয়েছে।
গত বছর সাতটি পোষা থাই হাতির ওপর পরীক্ষামূলকভাবে স্পে-ভ্যাক নামে একটি গর্ভনিরোধক ব্যবহার করা হয়। কর্মকর্তারা বলছেন, এতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। এই গর্ভনিরোধক ডার্ট ইনজেকশনের মাধ্যমে বন্য হাতির বড় কোনো পেশিতে, যেমন নিতম্ব বা সামনের পায়ে, প্রয়োগ করা হবে।
থাইল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অভ ন্যাশনাল পার্ক-এর (ডিএনপি) বন্যপ্রাণী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা কেন্দ্রের পরিচালক ড. সুপাকিত ভিনিতপোর্নসাওয়ান জানান, প্রাথমিকভাবে ইতিমধ্যেই শাবক আছে, এমন প্রায় ২০টি বন্য মাদি হাতিকে এই গর্ভনিরোধক দেওয়া হবে। এই গর্ভনিরোধকের কার্যকারিতা স্থায়ী হবে প্রায় সাত বছর।
পশুচিকিৎসকরা নির্বাচিত হাতিগুলোকে মনিটর করবেন জানিয়ে সুপাকিত বলেন, 'আমাদের নিয়মিত এই হাতিগুলোর শারীরিক অবস্থা এবং হরমোনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আমরা রক্ত সংগ্রহ করে হরমোনের স্থিতিশীলতা যাচাই করব এবং দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব কেমন হয়, তা পর্যবেক্ষণ করব।'
তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, হাতিদের প্রজনন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা তাদের লক্ষ্য নয়। কিছু হাতির প্রজনন সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হবে, এবং মানুষ-হাতি সংঘর্ষ কমাতে অন্যান্য ব্যবস্থার সাথে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে।
সুপাকিত আরও বলেন, হাতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণ একটি স্পর্শকাতর বিষয়—শুধু প্রাণীটি বিপন্ন বলেই নয়, বরং থাই সংস্কৃতিতেও হাতির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হাতি থাইল্যান্ডের জাতীয় প্রাণী এবং থাইল্যান্ডের প্রতীক।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2025/02/07/3863.jpg)
থাইল্যান্ডে এখন প্রায় ৪ হাজার ৪২২টি বন্য হাতি রয়েছে। এর অর্ধেকই পাঁচটি বড় বনাঞ্চলে বাস করে। তবে হাতির জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এই বনাঞ্চলগুলোতে ক্রমেই স্থানাভাব দেখা দিচ্ছে। সবচেয়ে সমস্যাসংকুল এলাকা হচ্ছে থাইল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি প্রদেশজুড়ে বিস্তৃত ইস্টার্ন ফরেস্ট কমপ্লেক্স। এ অঞ্চল কৃষিজমি ও শিল্পাঞ্চলে ঘেরা।
পুরো থাইল্যান্ড এবং এশিয়াজুড়ে মানুষ বনাঞ্চলে অনুপ্রবেশ করে হাতির প্রথাগত বাসস্থানকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। ফলে প্রাণীগুলো খাদ্য ও পানি পাওয়ার পথ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এসব অঞ্চলে মানুষের সঙ্গে হাতির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে প্রায়ই।
শুধু গত বছরই ইস্টার্ন ফরেস্টে ৪ হাজার ৭০০টিরও বেশি সংঘর্ষের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। এছাড়াও ৫৯৪টি কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৬৭টি সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে এবং ২২ জন মানুষ আহত হয়েছে।
ইস্টার্ন এলিফ্যান্টস এডুকেশন সেন্টার-এর গবেষক তান ওয়াননাগুল বলেন, মানুষের কর্মকাণ্ড কেবল হাতির প্রথাগত বাসস্থানই দখল করেনি, বরং বন থেকে জলসম্পদও সরিয়ে নিয়েছে। এর ফলে হাতিরা বনাঞ্চল ছেড়ে বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
তান বলেন, 'বনের মধ্যে হাতিদের সাধারণত খাবার খুঁজে পেতে ২২ ঘণ্টা সময় লাগে এবং তারা প্রায় ১০ কিলোমিটার হাঁটে। কিন্তু কৃষিজমিতে থাকা আখ ও অন্যান্য উচ্চ-শক্তির ফল হাতিদের দ্রুত খাবার জোগায়। ফলে তারা এক ঘণ্টার মধ্যেই পেট ভরে ফেলে।'
তিনি আরও বলেন, বনের মধ্যে হাতিদের বসবাসের মান উন্নত করা দরকার। পাশাপাশি কাছাকাছি কৃষকদেরও মানিয়ে নিতে সাহায্য করতে হবে। 'কৃষকরা হয়তো তাদের জমির আকার কমিয়ে আনতে পারেন, যাতে হাতিদের ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়।'
থাইল্যান্ডে মানুষ-হাতি সংঘর্ষ প্রতিরোধে জন্মনিয়ন্ত্রণ ছাড়াও বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে টহল অফিসার ও স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্ক মোতায়েন, যারা জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ঢুকে পড়া হাতিদের নজরে রাখে। এছাড়াও বাধা হিসেবে বেড়া তৈরি এবং হাতিদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে, যারা প্রায়ই মানুষের এলাকায় ঢুকে পড়ে। যাদের সম্পত্তি এবং খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
ডিএনপি জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবিত ব্যবহারের বিষয়ে জনসাধারণের মতামত নিয়েছে। চলতি বছরেই এটি প্রয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে।