‘তালাশ’, যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতা ও স্বাধীনতার মর্মপীড়া
১৯৭৫ সালে সুসান ব্রাউনমিলার তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'অ্যাগেইনস্ট আওয়ার উইল: মেন, উইমেন অ্যান্ড রেপ'-এ লিখেন, 'ভীতি সঞ্চার করার জন্য নিজের পুরুষাঙ্গকে একটি অস্ত্র হিসেবে আবিস্কার করা হলো নিঃসন্দেহে পুরুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কারগুলোর একটি!'
সুসানের এই বিখ্যাত উক্তির ৫ বছর আগে সন্দেহাতীতভাবে এই অস্ত্রের এ যাবতকালের সবচেয়ে বীভৎস ব্যবহার ঘটে গেছে বাংলাদেশে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধ মানে হলো অস্ত্রের দামামা, ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা, অপর পক্ষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা আর অপরকে পদানত ও হেয় করার ক্রমাগত চেষ্টা। আর যুদ্ধের সময় যৌন সহিংসতা যেন একটা স্বাভাবিক বিষয়, একটা কোলাটারাল ড্যামেজ, অবশ্যম্ভাবী ঘটনা।
খুবই আশ্চর্য ব্যাপার যে, নব্বইয়ের দশকের আগে পর্যন্ত যুদ্ধে যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষণকে একটি গুরুতর বিচারযোগ্য অপরাধ হিসাবে বিবেচনাই করা হয়নি। এই মাত্র সেদিন, বসনিয়া হারজেগোভিনায় যুদ্ধকালীন গণধর্ষণের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিশ্বজুড়ে নারীবাদী ও মানবতাবাদী সংগঠনগুলো সক্রিয় ও সরব হয়ে ওঠে, আর তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৯২ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ 'গণহারে, পরিকল্পিত ও সিস্টেমেটিক উপায়ে সংঘটিত যৌন সহিংসতা'কে একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে।
১৯৯৮ সালে রুয়ান্ডায় আর ২০০১ সালে যুগোস্লাভিয়ায় প্রথম আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার শুরু হয় গণহত্যার সঙ্গে গণধর্ষণেরও। আর শাহীন আখতারের 'তালাশ' প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস বা ফিকশনের তালিকায় 'তালাশ' গ্রন্থটি অবশ্যই গুরুত্বের দাবীদার। তার কারণ ইতিহাস নির্ভর গ্রন্থ রচনার পেছনকার কঠোর পরিশ্রম বা লেখকের অসাধারণ মেটাফোরিকাল বর্ণনাভঙ্গির চেয়েও বেশি এ কারণে যে এই উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধকে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন চোখে নির্মোহ ভঙ্গিতে দেখতে পারার আশ্চর্য পারদর্শিতা। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায়, এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় নায়কোচিত ঘটনা যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। কিন্তু এর পরতে পরতে জমে থাকা অন্ধকার, ক্লেদ, অন্যায়, অবিচার আর লজ্জার কথা এর আগে কে এমন ভাঁজ খুলে খুলে দেখিয়েছেন? মুক্তিযুদ্ধ ব্যাপারটা কি এমন যে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিলেন আর অমনি আপামর জনসাধারণ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একতাবদ্ধ হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল, হাসতে হাসতে জীবন দিলো দেশমাতৃকার পায়ে? নাকি তখনও পদে পদে ছিল বিভক্তি, কনফিউশন, স্বার্থপরতা, বিরুদ্ধাচারিতা, শঠতা, নীচতা আর যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও ফায়দা লুটার পাঁয়তারা?
সে কারণেই হয়তো 'তালাশ' উপন্যাসে সত্যিকার অর্থে কেউ নায়ক বা হিরো হয়ে ওঠেনি। এমনকি যাদেরকে হিরো ভেবে আমরা আত্মশ্লাঘা অনুভব করি, সেই মুক্তিযোদ্ধা বা বীরাঙ্গনাও না। তারা সকলেই আর দশটা সাধারণ মানুষের মতোই পরস্পরের বিরুদ্ধে লাগে, নিজে বাঁচার জন্য অন্যকে বিপদে ঠেলে দেয়, স্বার্থপর আর ভীরুর মতো পালায়, যে যেমন পারে ফায়দা ওঠায় যুদ্ধ থেকে।
'তালাশ'-এ উনসত্তরের তুখোড় ছাত্রনেতা আবেদ তাই তার প্রেমিকা বা বাগদত্তা মরিয়মকে অন্তসত্তা অবস্থায় যুদ্ধোন্মুখ ঢাকা শহরে অরক্ষিত প্রত্যাখ্যাত রেখে পালিয়ে যায়, পাকবাহিনীর হাতে গুলি খেয়ে শূন্যে উড়ন্ত অবস্থায় মরে যাওয়া রমিজ শেখ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাকিস্তান জিন্দাবাদ বা জয়বাংলা শ্লোগানের মধ্যে তফাত কি বুঝে উঠতে পারে না, এমনকি মুক্তিযোদ্ধা মন্টু তার জীবনের প্রথম অপারেশনে ভিক্ষুকের টাট্টু ঘোড়া চুরি করে নিয়ে আসে ক্যাম্পে, 'আর চোরের মতোই হলো তাদের জীবনের প্রথম অপারেশন।
মন্টু, রমিজ শেখ, আবেদ কেউই তাই সত্যিকারের নায়ক হয়ে উঠতে পারে না 'তালাশ'-এ। তাদের ভূমিকা মোটেও হিরোসুলভ বা নায়কোচিত লাগে না আর। আর এ ভাবেই মুক্তিযুদ্ধ যে কোনো রূপকথা নয়, বরং একটা অনিবার্য অবশ্যম্ভাবী ঘটনা, যেখানে দূরে বসে পুতুল নাচায় কেউ আর সাধারণ মানুষ পরিণত হয় নিষ্ঠুর ক্রীড়া উপকরণে- তা ২৫ মার্চের বর্ণনায় অদ্ভুত এক সিনেমাটিক ভাষায় উঠে আসে। 'মহাভারতের অন্ধরাজা ধৃতরাষ্ট্রের কুরুক্ষেত্রের পুরো যুদ্ধটা দেখতে হয়েছিল। দেখিয়েছিলেন সঞ্জয়-এক অন্ধ পিতাকে পুত্রদের হত্যাদৃশ্য, কৃষ্ণের কূটচাল, ধর্মপুত্রের মিথ্যাচরণ, বালক অভিমন্যুর চক্রবুহ্যে প্রবেশ। সে ছিল ১৮ দিনের যুদ্ধ। এত হত্যাকাণ্ড, এত ধ্বংসযজ্ঞের পর যারা জয়ী হয়েছিলেন, তারা রূপকথার রাজা রাণীর মতো সুখী হলেন না। গভীর মর্মপীড়া অহর্নিশি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ভেড়ার পালের মতো আত্মহত্যার সবচেয়ে প্রলম্বিত পথ মহাপ্রস্থানের দিকে তাদের তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল।'
২৫ মার্চ রাতের বর্ণনায় এই আশ্চর্য ভবিষ্যদ্বাণী কি সত্যি আমাদের বেলায়ও মিলে গেল পরে? জয়ী হলাম বটে আমরা, কিন্তু সত্য কি সুখী হলাম? মহিমান্বিত হলাম? মরিয়ম সম্পর্কে মহল্লার মানুষের ভাবনা, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতার মতো ব্যর্থ এ মহিলার জীবন, বারংবার অন্ধকার গর্তে পড়া তার নিয়তি' বা মধ্যমগ্রামের বাসিন্দাদের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী নির্বিকারত্ব 'গত উনত্রিশ বছরে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মকাণ্ডের যে হিসাব তাদের কাছে আছে তা সমাজের আর দশজনের মতোই, আলাদা কিছু নয়। যুদ্ধের পর পর তাদের যে জেল্লা বা দাপট ছিল, দেখে মনে হতো গাঁয়ের ছেলেপেলে হলেও তারা যুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করেছে। তারা গ্রামের গৌরব, বীর মুক্তিযোদ্ধা- এখন আর এসব কিছু মনে হয় না'- এই উচ্চারণগুলো আমাদের জাতির গৌরবের জন্য অস্বস্তিকর হলেও নিদারুণ কঠিন সত্য। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক যাবতীয় আকাশ-কুসুম ফ্যান্টাসি থেকে আমাদের মুক্তি দেয় এই উপন্যাস।
যুদ্ধ সাধারণ মানুষকেও বদলে দেয়। যে হয়তো জীবনে কোনোদিন মুরগি জবাই করেনি, সেও হাসতে হাসতে শত্রুর বুক ঝাঁঝড়া করতে পারে গুলিতে। কিন্তু গণধর্ষণ? যুদ্ধে কেন সৈন্যরা নির্বিচারে অচেনা নীরিহ নারীদের, ৬ বছর থেকে ৭০ বছর বয়সী নারীদেরও, সুযোগ পাওয়া মাত্র ধর্ষণ করে? এ কি কেবল পুরুষের লালসা চরিতার্থ করা? বহু দূরে ফেলে আসা স্ত্রী বা প্রেমিকাকে না পাবার কারণে কামভাব জাগ্রত হওয়া?
এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে বিস্তর। বলা হয়েছে, যৌন সহিংসতা বা ধর্ষণ হলো যুদ্ধের একটি টুল বা অস্ত্র। এর দ্বারা শত্রুশিবিরে ভীতি সঞ্চার করা সহজ হয়, ক্ষমতা প্রদর্শন করা যায়, সমাজের নৈতিক অবস্থান ধ্বংস করা যায়। কখনো এটি ব্যবহৃত হয় এথনিক ক্লিনজিং বা জাতিগত শোধনের নামে। তোমরা এতই কাপুরুষ যে নিজেদের নারীদেরও রক্ষা করার মুরোদ নেই- এ ধরনের অপমানজনক আচরণ করা হয় এর মাধ্যমে। কিন্তু একই যুদ্ধ যা কাউকে নিহত করে, কাউকে পঙ্গু, কাউকে ধর্ষিত- তা একেকজনের জন্য একেক রকম ফলাফল বয়ে আনে। মুক্তিযুদ্ধে যে তরুণটি পা হারিয়েছে আর যে তরুণীটি হারিয়েছে যোনি- দুজনের পরিণতি একেবারে একশ আশি ডিগ্রি বিপরীত। প্রথমজন নায়ক, তার ত্যাগ মহিমান্বিত, তাকে নিয়ে গর্ব করা যায়। দ্বিতীয়জন শেষাবধি বেশ্যাসম, লাঞ্চিত, সম্ভ্রমহীনা, তাকে নিয়ে গর্ব নয় বরং লজ্জা হয়। দুটোই যুদ্ধ সহিংসতা, দুজনই যুদ্ধাহত, কিন্তু স্রেফ জেন্ডার রোলের জন্য সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা দু'রকম হয়ে ওঠে। এক যাত্রায় পৃথক ফলের মতন।
এখন অব্দি যখন মন্ত্রী বা নেতারা বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মঞ্চে দাঁড়িয়ে গলা কাঁপিয়ে উচ্চারণ করেন- একাত্তরে আমাদের যে দুই লাখ মা বোন তাদের সম্ভ্রম বা ইজ্জত হারিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি... তখনও এই প্রশ্নটি কখনো ওঠে না যে তাদের কখন 'ইজ্জত' হারাল? যুদ্ধে আত্মত্যাগ আর নির্যাতনের শিকার হবার কারণে তাদের না বরং সম্মানিত হবার কথা ছিল? তাদের না কথা ছিল সেই উচ্চতা পাবার যা একজন পা হারা মুক্তিযোদ্ধা পেয়ে থাকেন? যুদ্ধের পর এভাবেই সহিংসতার শিকার নারীকে নায়কের অবস্থান থেকে পতিত মানুষের জায়গায় নামানো হয়। নষ্ট করা হয় তার অবদানের মহিমা। আর এই নামানোর কাজটা তো আর শত্রুপক্ষ করেনি। করেছে নিজ দেশবাসী। তাদের আপনজনরাই।
'তালাশ'-এ বিজয়ের দিন ভারতীয় মিলিটারি কনভয়ে যখন ঢাকায় ফেরানো হচ্ছে মরিয়মদের, সাথে যুদ্ধবন্দি পাকসেনারাও আছে, ফেরি পারাপারের সময় পানিবিক্রেতা ছেলেটি মেজরকে বাইনচোত বলে গালি দেবার পাশাপাশি বাদাম বিক্রেতা বন্ধুকেও ডেকে আনে, এবার তাদের টার্গেট হয় মরিয়ম আর তার সাথের মেয়েরা। বাদাম বিক্রেতা পানিঅলাকে বলে, এই দ্যাখ দ্যাখ, মাইয়াগুলান মিলিটারির লগ লইছে। খানকি মাগীরা কই যায়?
তার মানে, বিজয়ের উৎসবই শুরু হয় মরিয়মদের খানকি মাগী উপাধি দিয়ে অপমান করার মাধ্যমে। মরিয়ম ভাবে, 'স্বাধীন দেশে এ এক অভিনব সম্বর্ধনা। ভারতীয় সৈন্যরা ঝুঁকে ঝুঁকে সবার সাথে হ্যান্ডশেক করছে। এ কার দেশ? তারা বীর! মরিয়মরা আবর্জনা?'
যুদ্ধে আত্মত্যাগের ক্ষেত্রেও জেন্ডার রোলের বিষয়টি এভাবে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়। মিশেল ফুকো যে 'ডিসেক্সুয়ালাইজেশন অব রেপ'-এর আইডিয়া দিয়েছিলেন, যা বিতর্কিত ও প্রবলভাবে সমালোচিত, এরকম সময় সেই কথা মনে হয়। কী হতো যদি আমরা যুদ্ধে সংঘটিত ধর্ষণকে কেবল একটি যুদ্ধকালীন সহিংসতা হিসাবে নিতে পারতাম! যদি একে নারীর সম্ভ্রমহীনতা বলে চিণ্হিত না করতাম! যদি তাদেরকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে মেনে নিতাম, ধর্ষিতা ও লাঞ্চিতা হিসাবে নয়!
তাহলে আবার গোড়ার কথায় ফিরে যাই। মানসভ্যতায় এত এত যুদ্ধ ঘটে যাবার শতাব্দীকাল পর, ১৯৯২ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠনগুলো যুদ্ধকালীন সময় নারীর প্রতি যৌন সহিংসতাকে একটি ক্রাইম বা অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করে। সেই ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চই দেখা যাচ্ছে মরিয়ম সকাল ১১টায় পশ্চিম গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে। মানুষে মানুষে উদ্যান সয়লাব। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গণআদালতে রাজাকারদের বিচারকাজ শুরু করেছেন। এখানেই মরিয়ম এত বছর পর ক্যাম্পের সঙ্গী টুকিকে খুঁজে পায় আবার। মরিয়ম আসলে তার সঙ্গীদের খুঁজে পাবার আশা থেকেই ওখানে গিয়েছিল, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তার কোনো আগ্রহ নাই।
শেষ অব্দি দেখা যায় যে বীরাঙ্গনাদের সত্যিকারের আপনজন হয়ে ওঠে তারা পরস্পরই মা বাবা নয়, পরিবার নয়, স্বামী বা পুনর্বাসন কেন্দ্রের সমাজকর্মী নয়, তারা একে অপরকেই খুঁজে বের করে।
উপন্যাসের শেষে টুকিকে নিয়ে মরিয়মের নৌকা যাত্রাটি সিম্বলিক। প্রাচ্যে নৌকা জীবনতরীর প্রতীক, জীবন মৃত্যুর সীমারেখা পেরিয়ে যাবার জন্য নৌকাকেই ধরা হয় বাহন। সেই নৌকাযাত্রায় আরেক বীরাঙ্গনা অনুরাধার সাথেও দেখা হয়ে যায় তাদের। নদীর ওপারে রক্তিম দিগন্তের দিকে তাকিয়ে 'কি সুন্দর আমাদের দেশটা' অনুরাধার উচ্ছ্বসিত এই কথার উত্তরে টুকি যখন বলে, 'যে দেশের জন্য আমরা শরীলের রক্ত দিছিলাম' সেটাও অন্য অর্থ বহন করে বইকি। ধর্ষিতা নারীর যোনির রক্ত অপবিত্র নয়, সেটাও যুদ্ধাহতের রক্তই, সেটাও শহীদী রক্তের মতোই মর্যাদাবান।
স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চলল, এখনও সেই হত্যা, নির্যাতন, গণধর্ষণের বিচার চাইনি আমরা, ক্ষমা চায়নি পাকিস্তান এখনও কোনো কৃতকর্মের, বরং এখন নিজ দেশে প্রতিনিয়ত যুদ্ধকালীন সময়ের মতোই বর্বর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে আমাদের মেয়েরা। দেশজুড়ে চলছে গণধর্ষণের উৎসব। এমতাবস্থায় বিজয়ের অধর্শতক উদযাপন যেন পরিণত হয়েছে তামাশায়। মহাভারতের অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রর মতো বিজয়ী হয়ে আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি বটে, কিন্তু সুখী হইনি, আত্মহননের এক প্রলম্বিত পথে ধাবিত হচ্ছি শুধু।
এ বছর এশীয় লিটারারি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন শাহীন আখতার, তার 'তালাশ' উপন্যাসটির জন্য। গত ১ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘোষিত হয় পুরস্কারটি। এই অসামান্য উপন্যাস আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারীর নিগ্রহ ও নির্যাতনের গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক দলিল। পুরস্কার পাবার সুবাদে যদি এশীয় দেশগুলোতে আরও বেশি পঠিত ও প্রচারিত হয় বইটি, তাহলে অন্তত সত্যটা বিস্তৃত হয়; মরিয়ম টুকিরা জীবদ্ধশায় বিচার পাক কি না পাক, অন্তত বাংলাদেশে ৫০ বছর আগে সংঘটিত সংঘবদ্ধ যৌন সহিংসতা যুদ্ধাপরাধের আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি পাক। অভিনন্দন শাহীন আখতারকে।
- লেখক: চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক