‘অধিনায়কত্বের চাপ মিডিয়ার বানানো’
বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছেন নয় মাস হয়ে গেছে, কিন্তু এখনও দলকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়নি তামিম ইকবালের। তার অধিনায়কত্ব পাওয়ার কিছুদিন পরই করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়, বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব ধরনের ক্রিকেট। দীর্ঘ বিরতির পর গত অক্টোবরে মাঠে ফিরেছে ক্রিকেট, অধিনায়ক হয়ে ফিরেছেন তামিম। স্বভাবতই সেটা জাতীয় দলের হয়ে নয়। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাঁহাতি অভিজ্ঞ এই ওপেনার।
জাতীয় দলের হয়ে সহসাই নেতৃত্ব দেওয়া হচ্ছে না তামিমের। আগামী বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ানডের অধিনায়কত্ব শুরু করবেন তিনি। এরআগে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ফরচুন বরিশালকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। অধিনায়কত্বের সফরটা এখনও সেভাবে শুরু হয়নি তার। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে অধিনায়কত্বে চাপ নিয়ে আলোচনা। যে কারণে তামিম বলছেন, এই চাপ সংবাদমাধ্যমের বানানো।
মাশরাফি বিন মুর্তজা অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর গত ৮ মার্চ বাংলাদেশের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তামিম ইকবালের নাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দলকে নিয়ে মাঠে নামার আগেই সবকিছু স্থবির হয়ে যায়। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে নেতৃত্ব দিলেও তামিমকে চৌকস নেতার ভূমিকায় দেখা যায়নি বলে মনে করেন অনেকে। যে কারণে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে অধিনায়কত্ব করা চাপের হবে কিনা; এমন প্রশ্ন করা হয় তামিমকে।
শনিবার মিরপুরের একাডেমি মাঠে ফরচুন বরিশালের অনুশীলনের পর এমন প্রশ্নে তামিম কিছুটা বিরক্তই হয়েছেন বলে মনে হয়েছে। বাংলাদেশের সফলতম এই ব্যাটসম্যান বলেন, 'আমি তো এখন পর্যন্ত ওই রকম কোনো ম্যাচই খেলিনি। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হতে হবে তো। অধিনায়কত্বের চাপ আসলে আপনাদের (সাংবাদিক) বানানো। আমি অধিনায়ক হিসেবে এখনও কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিনি।'
'আমি যেদিন অধিনায়কত্ব পেয়েছি, ওইদিন বলেছি আপনারা অধিনায়কত্ব বিচার করবেন ছয় মাস বা এক বছর পর। সে পৃথিবীর যতো বড় অথবা ছোট নেতাই হোক না কেন। দুই-তিন ম্যাচ পর আপনারা অধিনায়কত্বের চাপ নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। একটা বাচ্চা হাঁটতে কিন্তু নয় মাস সময় লাগবে। একদিনে সে না হাঁটলে তো আপনি কিছু বলতে পারেন না। খেলায় আমার অধিনায়কত্ব কতটা প্রভাব ফেলছে, সেটা অন্তত বিশ ম্যাচ পর বিচার করবেন। দুই-তিন ম্যাচ পর সেটা করতে পারেন না।'
সংবাদমাধ্যম এই চাপ তৈরি করলেও তামিম অবশ্য তাতে কান পাতেন না। ভেবেও দেখেন না কী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তামিম বলেন, 'আমার কোনো সমস্যা হয় না। আমি ওটা নিয়ে এতো চিন্তাও করি না। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখিনি এই দেশের অধিনায়কত্ব করার, এটা আমি অনেকবারই বলেছি। এখন সুযোগ এসেছে আমার কাছে। চেষ্টা করব পুরোপুরিভাবে পালন করতে।'
বিচার করার আগে সময় চাইছেন তামিম, 'ভালো হবে নাকি খারাপ হবে, সেটা সময় বলবে। আমি হই বা পরে যে হোক বা আগে যে ছিল, ভালো অধিনায়ক হতে হলে সময় দিতে হবে। দুই-এক সিরিজের পর আপনি যদি মনে করেন যে কাজ হচ্ছে না, এটা আসলে কারও জন্যই ভালো না। আমার জন্য, দলের জন্য, দেশের জন্য, কারও জন্যই না। আমি নিজে অধিনায়ক বলে বলছি না, আমার পরে যে হবে অথবা অন্য ফরম্যাটে যেই অধিনায়ক হোক, তাকে সময় দিতে হবে।'
সময় নিয়ে অধিনায়ক হিসেবে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে চান তামিম। অবশ্য দলের নেতা হওয়ার জন্য অধিনায়ক হতে হবে বলে মনে করেন না তিনি, 'অধিনায়কের দায়িত্ব অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে। সবার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমি চেষ্টা করব যতটুকু সম্ভব সবকিছু করার। এরপর দেখতে হবে কী হয়। এটা আমি অধিনায়ক না থাকলেও করি। এটা করতে হলে আমাকে অধিনায়ক হতে হবে, তেমন নয়। আপনি যেকোনো সময় নেতা হতে পারেন। ভালো নেতা হওয়ার জন্য অধিনায়কত্বের দরকার নেই। নেতা হিসেবে আপনাকে কথার চেয়ে বেশি কাজ করতে হবে।'