বাড়তি উৎপাদনেও নির্মাণ মৌসুমে রডের দর বৃদ্ধি
নির্মাণ মৌসুমে বাড়তি চাহিদায় এমএস রডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ইস্পাতের বাজারে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন মানের রডের দাম টনপ্রতি ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত উৎপাদন ও মজুদ থাকার পরও নির্মাণ মৌসুমে বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে কারখানা মালিকরা রডের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। তবে উৎপাদানকারীরা বলেছেন, আর্ন্তজাতিক ও দেশীয় বাজারে রড উৎপাদনের কাচামাল স্ক্র্যাপের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রডের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
এমএস রডের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ইস্পাতের বাজারে বর্তমানে চার কোয়ালিটির এমএস রড রয়েছে। এরমধ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বা অটো কারখানাগুলোতে তৈরি ৭৫ গ্রেড, সেমি অটো কারখানাগুলোতে তৈরি ৬০ গ্রেড, সাধারণ গ্রেড বা ৪০ গ্রেড এবং কোন সিল বা গ্রেড ছাড়া রড যা বাজারে বাংলা রড বলে পরিচিত।
গত দুই দিনে ইস্পাতের বাজারে অস্বাভাবিক বেড়েছে ৭৫ গ্রেডের (৫০০ ওয়াট) রডের দাম। গত দুই দিনে দুই দফায় প্রতিটনে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা বেড়েছে সর্বোচ্চ গ্রেডের এই রডের দাম। গতকাল বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রতিটন ৭৫ গ্রেডের রড বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৯ হাজার টাকা দামে।
গত রোববার বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের মধ্যে ৭৫ গ্রেডের বিএসআরএম ৫৯ হাজার টাকা, একেএস ও কেএসআরএম ৫৫ হাজার টাকা, জিপিএইচ ৫৪ হাজার টাকা, গোল্ডেন ইস্পাত ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের শেষদিন অর্থাৎ বৃহষ্পতিবারে বাজারে বিএসআরএম ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা, একেএস ও কেএসআরএম ৫৩ হাজার থেকে ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা ও জিপিএইচ, গোল্ডেন ইস্পাত এবং ৫২ হাজার থেকে ৫২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।
তবে গত এক সপ্তাহ থেকে উর্ধ্বমুখী রয়েছে সেমি অটো, সাধারণ গ্রেড ও বাংলা রডের বাজার। এরমধ্যে সেমি অটো মিলের ৬০ গ্রেডের রডের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটন ৪৮ হাজার থেকে বেড়ে ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সেমি অটো এম এস রডের মধ্যে পেনিনসুলা, ইসলাম স্টিল, আল কারা স্টিল, এনবিআর স্টিল, বলাকা স্টিল এমএসআরএম (মানতি) ও আম্বিয়া ব্রান্ডের রড উল্লেখযোগ্য।
একই সময়ে ৩-৪ হাজার টাকা বেড়ে বর্তমানে সাধারণ ৪০ গ্রেডের প্রতিটন এম এস রড বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৪৮ হাজার টাকায়। এক সপ্তাহ আগে বাজারে একই মানের রড ৪৪-৪৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। সাধারণ গ্রেডের মধ্যে জিরি সুবেদার স্টিল, আল ছফা স্টিল, খলিল স্টিল, ব্রাদার্স স্টিল, রাইজিং স্টিলের বিকিকিনি বেশি।
গত এক সপ্তাহে বাংলা রডের দাম টনে ৩ হাজার টাকা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪৬ হাজার টাকায়। বাংলা রডের মধ্যে বাজারে মাস্টার স্টিল, গোল্ডেন আয়রন, গোল্ডেন স্টিল, এস এল স্টিল, ভাটিয়ারি স্টিল ও চম্পা স্টিলের বিকিকিনি বেশি।
ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে অন্যান্য খাতের মতো গত ২৬ মার্চ থেকে স্থবিরতা শুরু হয় দেশের নির্মাণ খাতে। করোনা ও বর্ষার কারণে টানা ৫-৬ মাস স্থবিরতা শেষে অক্টোবর থেকে আবার চাঙ্গা হতে শুরু নির্মাণ খাত। এরপর বাড়তে থাকে নির্মাণ পণ্য এম এস রডের চাহিদা। চাহিদার চেয়ে পর্যাপ্ত সরবরাহ ও মজুদ থাকায় পণ্যটির দাম স্থির ছিল এতদিন। কিন্তু চলতি নভেম্বর মাস থেকে পণ্যটির চাহিদা আরো বৃদ্ধি পায়। এই সুযোগে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বাড়তে শুরু করে এম এস রডের দাম। প্রথম দিকে সাধারণ গ্রেডের রডের দাম বাড়লেও গত রোববার ৬০ গ্রেডের রডের দামও টনে প্রায় দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
চট্টগ্রামের পাইকারি রডের বাজার আসাদগঞ্জের মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ'র স্বত্ত্বাধিকারী এস এম কামরুজ্জামান বলেন, শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এমএস রডের দাম স্থির ছিল। কিন্তু চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নির্মাণ পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মিল মালিকরা। তিনি বলেন, কারখানাগুলোতে উৎপাদিত রডের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এরপরও অতি মুনাফা করতে চাহিদাকে পুজি করে রডের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মিল মালিকরা।
তবে কারখানা মালিকরা জানান, দেশিয় ও আর্ন্তজাতিক বাজারে গত এক মাসে রড উৎপাদনের কাচামাল স্ক্র্যাপের দাম টনপ্রতি ৪-৫ হাজার টাকা বেড়েছে। উৎপাদন মূল্যের সাথে দামের সমন্বয় করতে রডের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
গোল্ডেন ইস্পাতের পরিচালক সরোয়ার আলম বলেন, দেশিয় ও আর্ন্তজাতিক বাজারে রড উৎপাদনের কাচামাল স্ক্র্যাপের বাজার বেড়েছে। চলতি মাসের শুরুতে আমরা আর্ন্তজাতিক বাজার থেকে প্রতিটন স্ক্র্যাপ কিনেছি ৩১০ ডলারে। যা আজকের বাজারে কিনতে হচ্ছে ৩৭০ ডলারে। একইভাবে দেশিয় বাজারে চলতি মাসের শুরুতে স্ক্র্যাপের দাম ছিল টনপ্রতি ২৯-৩০ হাজার টাকা। যা বর্তমানে ৩৫,৮০০-৩৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এখনো ইস্পাত কারখানাগুলো উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে রড বিক্রি করছে। কারণ করোনার সময়ে ইস্পাতের বাজারে যে ধস নেমেছিল তা থেকে এখনো ঘুরে দাড়াতে পারেনি ইস্পাত খাত। গত বছরের এই সময়ে বর্তমানের চেয়ে প্রতিটন রড কমপক্ষে আরো তিন হাজার টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছিল বলে জানান তিনি।