বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ হাতি অবশেষে অভয়ারণ্যে যাচ্ছে
১৯৯৫ সালে তাকে পাকিস্তানে আনা হয় শ্রীলঙ্কা থেকে, শ্রীলঙ্কা সরকার উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিল। কাভান তার নাম। বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ হাতি এই কাভান। মাত্র এক বছর বয়সে পাকিস্তানে আগমন ঘটে তার।
প্রাণী কল্যাণে কাজ করা সংগঠন ফোর পস ইন্টারন্যাশনালের ভাষ্য মতে, দীর্ঘদিন ধরে চরম দুরাবস্থায় কোনো রকমে পাকিস্তানের মার্গহাজার চিড়িয়াখানায় বেঁচে আছে কাভান।
শেষ পর্যন্ত কাভানের দুরাবস্থার অবসান ঘটতে চলেছে। কাভানের মুক্তি উপলক্ষে বিখ্যাত গায়িকা চের পাকিস্তানে এসেছেন, এক বার্তায় তিনি কাভানের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে কাভানকে উল্লেখ করেছেন, 'বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ হাতি' বলে।
প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর দীর্ঘ চেষ্টার পর কাভান পাকিস্তান ছাড়ছে।
এর আগে কাভানের সঙ্গী ছিল সাহেলী। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিল সাহেলী। গ্যাংগ্রিনে মারা যায় কাভানের এই সঙ্গিনী। ফোর পস'র এক পশু চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) কাছে জানায়, সঙ্গিনীকে হারিয়ে হৃদয় ভেঙে যায় কাভানের। সাহেলীর মৃত্যুর পর থেকেই একা হয়ে পড়ে।
রোববার কাভান রওনা হবে কম্বোডিয়ার অভয়ারণ্যে, যেখানে তার সুযোগ ঘটবে অন্য হাতির সঙ্গে মেলামেশা করার। বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রাণী অধিকার গ্রুপ, পাকিস্তানের স্থানীয় আন্দোলনকারীসহ চের দাতব্য সংস্থা কাভানের জন্য 'ফ্রি ওয়াইল্ড' নামে আন্দোলন করে আসছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। চের তার টুইটার বার্তায় লিখেন, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কাভানের মুক্তি সম্ভব করায়।
চের তার তারকা খ্যাতি ব্যবহার করে কাভানের মুক্তির ব্যপারে ব্যাপকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হলেও পাঁচ টন ওজনের কাভানকে পাকিস্তান থেকে স্থানান্তরের যাবতীয় বিষয় সমন্বয় করছে ফোর পস।
'পূর্ণ বয়স্ক কোনো হাতি উড়োজাহাজে পরিবহণ করা একটা বিরল ঘটনা,' বলেন ফোর পস-এর মুখপাত্র মার্টিন বাউয়ার। আর একটি মাত্র হাতি স্থানান্তরের ঘটনা জানা আছে তার, তবে সেটি ছিল খুবই অল্প দূরত্বে, যুক্তরাষ্ট্রের এক চিড়িয়াখানা থেকে আরেক চিড়িয়াখানায়।
'এভাবে হাতি স্থানান্তরের এত বড় কর্মযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটেনি, কাজেই বলতেই পারি, আমরা ইতিহাস রচনা করতে যাচ্ছি,' এনপিআরকে বলেন তিনি।
কার্গো প্লেনে বিশেষভাবে বানানো ক্রেটে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে। ১০ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রার পুরোটা সময় কাভানকে অচেতন করে রাখা হবে, জানিয়েছেন বাউয়ার। অন্যদের সঙ্গে তার সঙ্গী হবেন একজন পশুচিকিৎসকও।
কম্বোডিয়ায় পৌঁছানোর পর উত্তপশ্চিমের অভয়ারণ্যে নিয়ে যাওয়া হবে কাভানকে। বিমানবন্দর থেকে অভয়ারণ্যের দূরত্ব মাত্র দেড় ঘণ্টার পথ।
কাভান এ অভয়ারণ্যে সঙ্গী হিসেবে পাবে তিন নারী হাতিকে। 'কাভানকে বাঁচানোর এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়,' বলেছেন বাউয়ার।
মে মাসে ইসলামাবাদ আদালত জানান, মার্গহাজার চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের খুবই নির্মম পরিবেশে রাখা হয়। এই চিড়িয়াখানা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। জুলাই মাসে আদালত কাভানকে কম্বোডিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা অনুমোদন করে।
- সূত্র: এনআরপি