চীনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে দেখা দিয়েছিল কোভিড-১৯ সংক্রমণ: মার্কিন বিজ্ঞানীদের গবেষণা
মহামারি সৃষ্টিকারী রোগ কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী সার্স কোভ-২ জীবাণু চীন থেকে ছড়ায়নি। বরং তার আগেই এটি যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ইতোপূর্বে, ফ্রান্স ও ইতালির বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উহানের অনেক আগেই ইউরোপে জীবাণুটির অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। এবার সেই একইদিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে মার্কিন বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণা।
গবেষণাটি করেছেন খোদ যুক্তরাষ্ট্রের রোগ প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) বিজ্ঞানীরা। আজ রোববার (৬ ডিসেম্বর) এসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়।
সেখানে তারা জানান, চীনের উহান নগরীর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসটির অস্তিত্ব ছিল কিনা- তা জানতে তারা গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সংরক্ষিত বেশ কিছু রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেন। এসময় বেশ কিছু নমুনায় পাওয়া যায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির উপস্থিতি।
ফলাফলটি ওই সময়ের আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে জীবাণুটির সংক্রমণ ও তার বিরুদ্ধে রক্তরসে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ গড়ে ওঠাকে নির্দেশ করছে।
নমুনাগুলো সংগ্রহ করা হয় গত ৩১ ডিসেম্বরের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে। কোভিড মহামারি কী বিশ্ব তখনও তা জানতো না। বরং নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতিই ছিল দেশে দেশে।
চীনের উহান শহরে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রথম নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পরে, যার অনেক আগেই যুক্তরাষ্ট্রে সার্স কোভ-২ ছিল বলে সিডিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিশেষত অ্যান্টিবডির উপস্থিতি এবিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে। কারণ, এটি তখনই গড়ে ওঠে যখন ক্ষতিকর জীবাণুকে চিহ্নিত করার পর তা প্রতিরোধে শরীর নির্দিষ্ট ধরনের জৈব-রাসায়নিক তৈরি করে।
ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবীর বিরুদ্ধেও অ্যান্টিবডি কাজ করে। তবে রক্তরসের এই প্রাকৃতিক প্রতিষেধক সব অণুজীবের জন্য এক রকম নয়, বরং নির্দিষ্ট হুমকি অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। ভিন্ন হয় নানা রকম জীবাণুর ক্ষেত্রেও।
সিডিসি গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাময়িকী- জার্নাল ইনফেকশাস ডিজিজেস-এ। সেখানে বিজ্ঞানীরা লিখেছেন, ''শরীরে তরল অ্যান্টিবডি পাওয়ার অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে পূর্ব-ধারণার অনেক আগে থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে সার্স কোভ-২ জীবাণু সংক্রমণ ছড়িয়েছিল।''
ইতোপূর্বে গত মাসে ইতালির বিজ্ঞানীরাও রক্ত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এধরনের একটি পর্যালোচনা করেছিলেন। সেখানে অবশ্য আরো আগে থেকে, অর্থাৎ গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে সংগৃহীত নমুনায় অ্যান্টিবডির উপস্থিতি মেলে।
ফ্রান্সের একটি হাসপাতালেও ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর সোয়াবের মাধ্যমে সংগৃহীত লালার নমুনায় মেলে অ্যান্টিবডির প্রমাণ। ওই গবেষণাপত্রটি চলতি বছরের জুনেই ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল এজেন্টস- এ প্রকাশিত হয়।
এসব গবেষণার প্রায় সবকটিতেই উহানে প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার অনেক আগে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ফলে জীবাণু ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য চীনকে দোষী করা যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন- সেটাই আরো একবার সামনে এলো।
- সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট