ওডারল্যান্ড: মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশিদের কথা উঠলে তার নাম সাধারণত সামনে আসে না। তবে স্টেন গান হাতে তোলা তার একটি ছবি ইতিহাসপ্রেমীদের বেশ প্রিয়।
তবু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘৃণ্য আক্রমণের জবাব দেওয়া এই বিদেশির নাম উইলিয়াম এ এস ওডারল্যান্ড। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক।
বাটা স্যু কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে তিনি প্রথম ঢাকায় আসেন ১৯৭০ সালে। ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে বাটা জুতার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে তিনি নিযুক্ত হন টঙ্গীর কারখানায়।
পাকিস্তানি বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে গণহত্যা চালায় ২৫ মার্চ রাতে। সেই কালরাতের ভয়াবহতার কিছু ছবি তুলে সে সময়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাঠান ওডারল্যান্ড। বাটা স্যু কোম্পানির মতো একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ায় তার ছিল সবখানে অবাধ চলাচল। সেই সুযোগে টিক্কা খান, রাও ফারমান আলী, জেনারেল নিয়াজি প্রমুখের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল এমএজি ওসমানীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তার কাছে সব তথ্য ফাঁস করে দিতেন।
এক সময় নিজেই বাটার শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করে টঙ্গীসহ সেক্টর ১ এবং ২ নম্বরে গড়ে তোলা গেরিলা বাহিনীকে নিজ দায়িত্বে প্রশিক্ষণ দেন ওডারল্যান্ড। নিজেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এ বেলা নিজের জীবন বিপন্ন করে নেমে পড়েন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে।
বাঙালি যোদ্ধাদের নিয়ে টঙ্গী-ভৈরব রেললাইনের ব্রিজ, কালভার্ট ধ্বংস করে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করতে থাকেন এই বীর।
সে সময় ঢাকার অস্ট্রেলিয়ান ডেপুটি হাইকমিশনের গোপন সহযোগিতা পেতেন তিনি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি টঙ্গীতে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য 'বীর প্রতীক' খেতাব পাওয়া একমাত্র বিদেশি তিনিই।
ওরল্যান্ড ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশেই ছিলেন। এরপর ফিরে যান নিজ দেশে। ২০০১ সালের ১৮ মে অস্ট্রেলিয়ার পার্থের হাসপাতালে মারা যান বীর প্রতীক উইলিয়াম এ এস ওডারল্যান্ড।