তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড সি-মি-উই-সিক্সের (SEA-ME-WE-6) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
জানা গেছে. বাংলাদেশি ক্যাবল কোম্পানিটি এ লক্ষ্যে সি-মি-উই-সিক্সের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) স্বাক্ষর করবে। দেশের ক্রমবর্ধমান ডাটা-চাহিদা মেটাতে কোম্পানিটি এ উদ্যোগ নিচ্ছে।
তবে, চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ এখনও ঠিক হয়নি বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের সচিব মোহাম্মদ আবদুস সালাম খান।
তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হবার প্রথম পদক্ষেপ হল চুক্তি স্বাক্ষর। প্রকল্প-ব্যয় ও প্রকল্পের সময়কাল এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান আবদুস সালাম।
সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি। এটি সাবমেরিন ক্যাবলের সাহায্যে এক্সক্লুসিভ ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সি-মি-উই মানে হল ‘সাউথ ইস্ট এশিয়া (SEA)-মিডল ইস্ট (ME)-ওয়েস্ট ইউরোপ (WE)। এসব এলাকার মধ্যেই ক্যাবলটি স্থাপন করা হবে। সি-মি-উই-ফাইভ কনসোর্টিয়ামে যুক্ত দেশগুলো ছিল— বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জিবুতি, মিশর, তুরস্ক, ইতালি, ফ্রান্স, মিয়ানমার ও ইয়েমেন।
এই উনিশ দেশ উনিশটি ল্যান্ডিং পয়েন্টে যুক্ত। সি-মি-উই-সিক্স কনসোর্টিয়ামেও এই দেশগুলো যুক্ত থাকবে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারে ২০০৬ সালে সি-মি-উই-ফোর স্থাপন করা হয়। আর পটুয়াখালীতে সি-মি-উই-ফাইভ স্থাপিত হয়েছে ২০১৭ সালে।
দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি স্থাপন করতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ পড়েছিল। ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক সে প্রকল্পের অর্থের জোগান দেয়।দ্বিতীয় ক্যাবলটি স্থাপনের পর সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ইন্টারনেট ব্যবসায় ব্যাপক উন্নতি ঘটে। ২০১৮-১৯ রাজস্ব বছরে ইন্টারনেট বিক্রি করে কোম্পানিটির লাভ ৩৯ শতাংশ বেড়ে ১৯৬ কোটি টাকা হয়। নিট মুনাফা ছিল ৫৯ কোটি টাকা। তার মানে প্রায় ৭০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল।
বাংলাদেশে এখন ১৩০০ জিবিপিএস (বিলিয়নস অব বিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইদ ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ৯০০ জিবিপিএস পাওয়া যাচ্ছে সি-মি-উই-ফাইভ ও সি-মি-উই-ফোরের মাধ্যমে। বাকিটা ভারত থেকে আমদানি করতে হয়।
বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের সূত্রটি জানিয়েছে, সি-মি-উই-সিক্স কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হতে খরচ পড়বে ৭ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। এখান থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৫ টেরাবাইট গতির ব্যান্ডউইদ মিলবে। সি-মি-উই-সিক্সের কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আবদুস সালাম খান জানান, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি স্থাপনের পর ব্যান্ডউইচ বাইরে রপ্তানিও করা যেতে পারে।
২০১৮-১৯ রাজস্ব বছরের জন্য কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের ১৬ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেবার বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের সাম্প্রতিক সভায় সুপারিশ করা হয়। এর রেকর্ডের তারিখ ৫ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়।
২৬ নভেম্বর সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে সিঙ্গাপুরভিত্তিক দুটো কোম্পানি, সিংটেল ও সিগমার কাছ থেকেও প্রস্তাব পেলেও বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড সি-মি-উই-সিক্সের কনসোর্টিয়ামেই যুক্ত হল।