মৃত্যুর আগের ৮ ঘণ্টা তীব্র যন্ত্রণায় ভুগেছেন ম্যারাডোনা
গত ২৫ নভেম্বর মারা গেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর ডিয়েগো ম্যারাডোনা। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ৮৬'র বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি এই ফুটবলার। প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও ম্যারাডোনার মৃত্যুশোক এখনও ভুলতে পারেনি ফুটবলবিশ্ব। সঙ্গে আছে তার মৃত্যুর কারণ ঘিরে বিতর্কও।
আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বরের মৃত্যুর তদন্ত শুরু হয় গত ২৯ নভেম্বর। তার চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতেই তদন্ত শুরু করা হয়। তদন্তের শুরুতে ম্যারাডোনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক লিওপোলদো লুকের বাড়ি ও ক্লিনিকে তল্লাশি চালায় পুলিশ। লিওপোলদো লুকের সম্পত্তি অনুসন্ধানের নির্দেশও দেওয়া হয়।
৬০ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমানো আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির চিকিৎসায় অবহেলা হয়েছে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ম্যারাডোনার মেয়েরাও। এবার আর্জেন্টিনার সরকারি কৌঁসুলির পেশ করা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেখে আরও অনেক প্রশ্নেরই জন্ম হতে পারে।
সর্বশেষ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যারাডোনার শরীরে কোনো ধরনের মাদকের অস্তিত্ব মেলেনি। পাওয়া যায়নি অ্যালকোহলের অস্তিত্বও। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ম্যারাডোনার হৃদযন্ত্রের গতি স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুন হয়ে গিয়েছিল। এতে তার ফুসফুস, কিডনি ও যকৃত চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ময়নাতদন্তের সবচেয়ে বড় তথ্য হচ্ছে, মৃত্যুর আগের ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা তীব্র যন্ত্রণায় ভুগেছেন ম্যারাডোনা। মুত্যুর আগ পর্যন্ত্র এই যন্ত্রণায় ভুগেছেন তিনি। মৃত্যুর আগে উদ্বেগ, হতাশা ছাড়াও অন্যান্য মানসিক ব্যাধির জন্য সাত রকম ওষুধ খাচ্ছিলেন তিনি।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ম্যারাডোনার শরীরে যেসব ওষুধের অস্তিত্ব মিলেছে, এর সবই খিঁচুনি, পেটের সমস্যা, মাদকাসক্তিসহ মানসিক সমস্যার জন্য। কিন্তু ফুসফুস, কিডনি বা যকৃতের চিকিৎসার জন্য কোনো ধরনের ওষুধ তাকে সে সময় দেওয়া হয়নি, এমন কোনো ওষুধের অস্তিত্ব মেলেনি তার শরীরে।
এক তদন্তকারী কর্মকর্তা আর্জেন্টিনার সংবাদ সংস্থা তেলাম প্রেস এজেন্সিকে ঠিক এই তথ্যই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'পরীক্ষাগারের বিশ্লেষণে যে ফল পাওয়া গেছে, সেসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ম্যারাডোনাকে মানসিক সমস্যার ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু হৃদরোগের কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি।' এই বিষয়টিই প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে, তবে কি অবহেলাতেই মৃত্যু হয়েছে ম্যারাডোনার?
নভেম্বরের শুরুর দিকে ব্রেইন স্ট্রোকের শিকার হন ম্যারাডোনা। ওই সময় তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর থেকে তিনি নিজ বাসভবনেই ছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর। এরপর গত ২৫ নভেম্বর নিজ বাড়িতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় বিশ্ব ফুটবলের এই মহানায়কের।