জোয়ারের মতো ফুলেফেঁপে ওঠা এক প্রতিষ্ঠান
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটির বয়স মাত্র চার বছর। কিন্তু, এরমধ্যেই তারা ১০৫টি সরকারি প্রকল্পের ১১শ' কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই নদীকেন্দ্রিক এবং সেগুলো ছড়িয়ে আছে দেশের ১৭৭টি স্থানে।
সরলদৃষ্টিতে একে ব্যবসায়ীক সফলতার উজ্জ্বল উদাহরণ বলেই মনে হয়। যেন শূন্যের বুক চিরে অকস্মাৎ ধুমকেতূর মতো জ্বলজ্বলে সাফল্যের আখ্যান।
কিন্তু, গল্পটা সেখানেই শেষ নয়। বাস্তবতা হচ্ছে, ডলি কনস্ট্রাকশন নামের এই কোম্পানি এতগুলো প্রকল্পের বেশিরভাগেই কোনো কাজ করেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অগ্রগতির পরিমাণ শূন্য।
চলতি বছর ৩০ জুন প্রতিষ্ঠানটির পাওয়া অন্তত ৬০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ পেরিয়ে যায়, কিন্তু সেখানে কাজ সমাপ্ত হওয়া এখনও বাকি।
তাই এখন প্রতিষ্ঠানটিকে ঠিকাদারির কাজ দেওয়া সরকারি সংস্থাগুলো পড়েছে দোটানায়। কিছু সংস্থা আবার প্রতিষ্ঠানটিকে দেওয়া কার্যাদেশ বাতিলের পদক্ষেপও নিয়েছে।
একইসময়, সরকারি প্রকল্পে ঠিকাদারি দেখিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত রুপালী ও অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৬৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ডলি কনস্ট্রাকশন।
কোম্পানিটিকে দেওয়া ঋণে ব্যাংকগুলো 'গুরুতর অনিয়ম' করেছে বলে সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে। তাই কোম্পানিটি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্যেও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।
এই অবস্থায় সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকদুটিকে আলোচিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণের অর্থ উদ্ধার করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ঋণ বিতরণে অনিয়ম কেন হলো তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে রুপালী ব্যাংকের কাছে।
তাই দিনশেষে যা দাঁড়িয়েছে তা হলো; বিপদে পড়েছে সরকারি প্রকল্পগুলোর কর্তৃপক্ষ এবং ব্যাংক দুটি।
শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ প্রকল্পই ছিল নদীর ভাঙ্গন থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সম্পত্তি রক্ষা সম্পর্কিত। ওইসব স্থাপনাও এখন হুমকির মুখে।
৭৪ বছর পুরোনো এমপি ডাঙ্গি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এমনই একটি স্থাপনা। ফরিদপুরের চরভদ্রাসন এলাকায় পদ্মানদীর তীরে অবস্থিত স্কুলটি। প্রতিবছর পাড় ভেঙ্গে ধীরে ধীরে নদীর এগিয়ে আসায় এখন বিদ্যালয়টির ভবিষ্যৎ অস্তিত্বই হয়ে পড়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। বর্তমানে বিদ্যালয় থেকে মাত্র ৩০ মিটার দূর দিয়ে নদী প্রবাহিত হচ্ছে।
অথচ মাত্র কয়েক বছর আগে বিদ্যালয় থেকে চার কিলোমিটার দূরে ছিল নদী। আর এখন শুধু স্কুলটি নয়, বরং আশেপাশের পুরো এলাকাই নদীতে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) নদীতীর রক্ষায় আজ থেকে আড়াই বছর আগে ডলি কনস্ট্রাকশনকে কাজ দেয়, কিন্তু চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেও তারা কোনো কাজই শুরু করেনি।
এই সময়ের মধ্যেই পেরিয়ে গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে করা চুক্তির মেয়াদ। তাই বিডব্লিউডিবি প্রকল্পের চুক্তি বাতিল করাসহ রুপালী ব্যাংককে কোম্পানির ব্যাংক গ্যারান্টি বাস্তবায়ন করতে বলেছে।
ডলি'কে ঠিকাদারি দেওয়া সরকারি কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালকেরাই এখন কোম্পানিটির এমন পারফরম্যান্সে রীতিমতো আতঙ্কিত, বাকরুদ্ধ। এসব কর্মকর্তার অন্তত চারজনের সঙ্গে আলাপ করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। ডলি কনস্ট্রাকশনের কর্মক্ষমতা খুবই নিম্নমানের বলে তারা সকলেই জানিয়েছেন। কাজ দিয়ে তারা নিজেরাই উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন।
"এখন আমরাই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পেছনে কাজ শেষ করার তাগাদা নিয়ে দৌড়াচ্ছি," বলছিলেন আড়িয়াল খাঁ এবং পদ্মা নদী পাড়ে অবস্থিত দুটি প্রকল্পের পরিচালক সুলতান মাহমুদ। তিনি বলেন, "আবার দরপত্র আহ্বান করলে প্রকল্পের খরচ বাড়বে, তাই শেষ চেষ্টা হিসাবেই আমাদের এই দৌড়ঝাঁপ।"
"সরকারি ক্রয় আইনের আওতায় আমরা এখন ডলি কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেব এবং কোম্পানিটির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করব,'' সুলতান মাহমুদ যোগ করেন।
প্রকল্প 'বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে'র (আইএমইডি) মহাপরিচালক মোঃ আফজল হোসেন জানান, "সম্প্রতি আমরা পদ্মা এবং আড়িয়াল খাঁ নদীর উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে যাই। ডলি কনস্ট্রাকশনের অসম্পূর্ণ কাজের জন্যে সেখানে কাজ শেষ করা অন্য ঠিকাদারদের নির্মিত কাঠামোও হুমকির মুখে পড়েছে। কারণ, নদীতীর রক্ষা বাঁধের কাজে এক অংশের কাজ যদি শেষ না হয়, তাহলে সমগ্র প্রকল্পই বিফল হয়ে পড়ে।"
আইএমইডি সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে কাছে ডলি কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেবে, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এসব ঘটনা অবশ্য মানতে নারাজ 'নিজ চেষ্টায় ব্যবসায়ী' হয়ে ওঠার দাবিদার এবং ডলি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন (৪২)। কাজের দর পরিশোধে দেরি করার অভিযোগ তুলে তিনি পাল্টা সরকারি সংস্থাকেই দায়ী করেছেন।
এছাড়া, মহামারীর কারণেই তার কোম্পানিকে কাজ বন্ধ রাখতে হয় বলেও তিনি জানিয়েছেন।
কিন্তু, তার বক্তব্যের সঙ্গে অন্য ঠিকাদারদের ভাষ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়ম পদ্মা নদী প্রকল্পের আওতায় ১৫.৩৫ কোটি টাকার কাজ পাওয়া ঠিকাদার শাহিন আহমেদের কথা। শাহিন গতবছরের নভেম্বরে কাজ পান এবং চুক্তিতে কাজের সময়সীমা দেওয়া আছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। কিন্তু, তার আগেই তিনি চলতি বছর কাজ শেষ করে পুরো বিল বুঝে পেয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে শাহিন আহমেদ জানান, কাজ শেষ করার পর বিলের টাকা পেতে তিনি কোনো দীর্ঘসূত্রিতার মুখে পড়েননি।
অন্যান্য প্রকল্পেরও একই পরিণতি:
ফরিদপুর জেলার আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে আরেকটি প্রকল্পও একই পরিণতির শিকার হয়েছে। এখানেও কোম্পানিটি তীর রক্ষার কাজ পেয়েছিল। কাজ পাওয়ার ২২ মাস কেটে গেলেও এখন কেবলমাত্র একটি লোকেশনে কাজ শুরুর পাঁয়তারা চলছে।
একই প্রকল্পের অন্য পাঁচটি স্থানে কাজ হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। দেরি হওয়ায় নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই পাড়ের বসতবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা।
ডলি কনস্ট্রাকশন যেসব প্রকল্পে কাজ পেয়েছে তার সবখানেই প্রায় একই চিত্র।
সীমান্ত নদী পাড় সুরক্ষা এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মোট ৭৭টির মধ্যে ৪৫টিতে কার্যাদেশ পেয়েছে ডলি। সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ার অধীনে সরাসরি কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে ডলিকে কোনো টেন্ডারেও অংশ নিতে হয়নি।
সবগুলো প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ৪৬৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে ডলি পেয়েছে ৩১৫ কোটি টাকার কাজ।
চলতি বছরের জুনে সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও এসব কাজের অগ্রগতি ৩ থেকে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত, খোদ প্রকল্প পরিচালকেরাই একথা বলছেন।
সরেজমিনে দেখতে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলাতেও একটি প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে যায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর প্রতিবেদক দল। এজেলার মোঘলঘাট বিজিবি ক্যাম্পকে রিভেটমেন্ট প্রক্রিয়ায় ধরলা নদীর তীব্র স্রোত থেকে রক্ষার কাজ পেয়েছিল ডলি।
এবছরের জুনে সেই চুক্তিরও সময়সীমা শেষ, তবুও প্রকল্পের তিনটি লোকেশনে নির্মাণ সামগ্রীই জড়ো করা হয়নি।
এব্যাপারে লালমনিরহাট বিডব্লিউডিবীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, কাজের ক্ষেত্রে বাস্তব কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ঠিকাদার বদল করা হবে।
ডলি কনস্ট্রাকশনের কর্ম-শিথিলতায় অসন্তোষ প্রকাশ করে সীমান্ত নদী প্রকল্পের পরিচালক নব কুমার চৌধুরী বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যেখানে ঠিকাদারি পেয়েছে সেই ৪৫টি সাইটে কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। সেই তুলনায় অন্যান্য ঠিকাদারের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক।
"আমরা বারবার ডলির দুর্বল পারফরম্যান্স নিয়ে প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু তারপরও মহামারী পরিস্থিতি আমলে নিয়ে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়, এরপর আমরা তাদের চলতি বছরের ২৪ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করতে বলি। সঙ্গে সতর্ক করা হয়, নাহলে চুক্তি বাতিল করা হবে," তিনি বলছিলেন।
দেরির কারণ জিজ্ঞাসা করলে ডলি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন মহামারী পরিস্থিতি এবং বিলের টাকা পেতে দেরির অযুহাত দেন।
এই দাবির ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক সুলতান মাহমুদ জানান, কার্যাদেশ বাস্তবায়নে অগ্রগতির উপর ভিত্তি করেই সেই অনুপাতে বিল পাস করা হয়।
ঋণ বিতরণেও দুর্নীতি:
শামুকগতির কাজ সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে সহজেই ঋণ পায় ডলি কনস্ট্রাকশন।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ২০১৭ সালের কথা। ওই বছর রুপালী ব্যাংক ডলি কনস্ট্রাকশনকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ ও ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়। ব্যাংকটি নিজেদের অনুমোদিত ঋণ সীমার বাইরে গিয়ে একাজ করে, এক্ষেত্রে বোর্ডের সিদ্ধান্তও উপেক্ষা করা হয়।
বিধিমালা লঙ্ঘন করে ৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে রুপালী ব্যাংককে নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেই অর্থ আদায়ে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
উদয় ট্রেড' নামক ডলি গ্রুপের একটি কোম্পানির ব্যাপারে রূপালীকে একটি বিস্তারিত তদন্ত করারও নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উদয়কে ২০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য নিজস্ব অনুসন্ধানেই ঋণ অনুমোদন ও বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের সন্ধান পায়। ২০১৬-১৯ সালে এসব ঋণ পেয়েছিল ডলি কনস্ট্রাকশন।
যোগাযোগ করা হলে, রুপালী ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার মো. গোলাম মোর্তজা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পাওয়ার পর তারা আলোচিত গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণের অর্থ আদায়ে আলোচনা চালাচ্ছেন।
তবে এই মুহূর্তে পরিশোধের সক্ষমতা না থাকায় গ্রাহক আরও সময় চাইতে পারেন, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মতিঝিলে অবস্থিত রুপালী ব্যাংকের এই কর্পোরেট শাখাটি ডলি কনস্ট্রাকশনকে মোট ৫২৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সরকারি কোনো কার্যাদেশ পাওয়ার আগেই ডলিকে ঋণ দিয়েছিল রূপালী।
কিছুক্ষেত্রে ব্যাংকটির ঋণ মূল্যায়ন কমিটি বোর্ডের কাছ থেকে কোম্পানিটির ঋণ খেলাপি সত্তা এবং অন্যান্য অনিয়ম লুকিয়ে ঋণ অনুমোদন নেয়। এমন কীর্তি প্রমাণ করে যে, ঠিকাদারি কোম্পানিটি এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপকদের মধ্যে একটি সহযোগিতার যোগসূত্র আছে, যা দুর্নীতি ব্যতীত অন্যকিছু নয়- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধানে বলা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, জামানত হিসাবে জমি বন্ধকীর প্রক্রিয়া শেষ না করেই কোম্পানিটিকে ঋণ দেওয়া হয় বলেও তদন্ত সূত্রে জানা গেছে।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রুপালী ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ডলি কনস্ট্রাকশনকে ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি।
"কিছুক্ষেত্রে, ব্যাংক গ্যারান্টি ঋণ হিসাবেও দেওয়া হয়, তা ব্যাংকিং রীতিবিরুদ্ধও নয়। তবে এনিয়ে অডিটে কিছু ত্রুটির কথা বলা হতে পারে, ব্যাংকিংয়ে এসব কিছুই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ," প্রধান দাবি করেন। তিনি বর্তমানে সোনালী ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।