"পূর্ব পাকিস্তানের বিভক্তির দায় পাকিস্তানেরই"
"১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের বিভক্তি আমাদেরই দায় এটি স্বীকার করে নেয়ার সময় এসেছে"
পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এ আর সিদ্দিকীর সাম্প্রতিক প্রকাশিত 'জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান: দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ আ সোলজার' বই নিয়ে এক অনলাইন আলোচনায় এ মন্তব্য করেন পাকিস্তানের ইতিহাসবিদ ড. মোবারক আলী। তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এ দিনটিকে 'ঢাকা পতন' না বলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের দিনই বলা উচিৎ।
অধ্যাপক ড. রিয়াজ শেখ আলোচনাটি পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, বড় বড় ঘটনাগুলোতে ইয়াহিয়া খানের ভূমিকার কারণেই পাকিস্তান বিভক্তির দিকে এগিয়ে যায়। তাকে নিয়ে ইতোপূর্বে খুব বেশি বই লেখা হয়নি, নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বইটি লেখায় লেখককে ধন্যবাদ জানান জানান তিনি।
বইটির লেখক এ আর সিদ্দিকী ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। বইটিতে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর কাশ্মীর যুদ্ধ নিয়েও আলোকপাত করেন তিনি। বইটিতে তিনি বলেন, আমরা যাকে 'জিহাদ' বলতাম তা আসলে সেসময় ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের দ্বারাই পরিচালিত হয়।
১৯৬৫ সালে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন বইটিতে। তার বক্তব্য প্রচলিত টেক্সটবুকের আলোচনা থেকেও অনেকটা আলাদা।
বইটির মুখবন্ধ লেখক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. হুমা বাকাই বইটি সম্পর্কে বলেন, বইটিতে ইয়াহিয়া ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছাড়াও, পাকিস্তানের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই রাষ্ট্রটির নানা সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, বইটি পাকিস্তানের নেতৃত্ব সংকটের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইয়াহিয়া খান কোনোভাবেই একজন নেতা ছিলেন না, দেশের সংকটকালীন সময়ে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্য নেতা তো নন-ই, এমন মন্তব্যও করেন তিনি।
পূর্ব পাকিস্তানে দায়িত্ব পালন করা পাকিস্তানের সাবেক সরকারি কর্মকর্তা তাসনিম সিদ্দিকী জানান, পাকিস্তান বারবার বাঙালীদের হতাশ করেছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশদের অত্যাচারের পর তারা ভেবেছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি তাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। পাকিস্তানের সৃষ্টিতেও বাঙালিরা নেতৃত্ব দিয়েছে।
উন্নয়নের যুগ হিসেবে পরিচিত আইয়ুব খানের আমলের সমালোচনা করেন তিনি। আইয়ুব খানের আমলে পূর্ব পাকিস্তান অঞ্চলে কোনো উন্নয়নই হয়নি, বলেন তিনি। ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন যখন ইয়াহিয়া খান অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করলেন তাসনিম সিদ্দিকী তখন ঢাকাতেই ছিলেন বলে জানান তিনি। অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার সিদ্ধান্তে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ কতোটা অসন্তুষ্ট ছিল নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তার বর্ণনা দেন তিনি।
আইয়ুব খান তার বইয়ে বাঙালিদের অবমাননাকর শব্দ দিয়ে অভিহিত করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর দ্বারাই বোঝা যায় তিনি তাদের প্রচন্ডরকম ঘৃণা করতেন। তিনি হতাশার সুরে বলেন, বাঙালীরাই ১৪ আগস্ট পশ্চিম পাকিস্তানিদের চেয়েও আবেগ সহকারে উদযাপন করতো, তা সত্ত্বেও পাকিস্তানিদের আচরণ ও কর্মকান্ডের কারণে তারা বিভক্তির চিন্তা করতে বাধ্য হয়েছে।
শিক্ষাবিদ দুরিয়া কাজী নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বইটি লেখার জন্য লেখকের প্রশংসা করে বলেন, লেখকের লেখা ও বর্ণনার ধরণের কারণে পাঠকরা সেসময় উপস্থিত থেকে ঘটনাগুলো অবলোকন করছেন এমনটাই মনে হবে।
- সূত্র: দ্য নিউজ