বাণিজ্য মেলা’র জন্য প্রস্তুত পূর্বাচল
এবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন হবে পূর্বাচলের বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএসসিইসি) এই এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ এরই মধ্যে শেষ করেছে।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এ মাসের মধ্যেই রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছে এক্সিবিশন সেন্টারটি বুঝিয়ে দেবে সিএসসিইসি।
২০১৭ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা যার মধ্যে ৬২৫ কোটি টাকা দিয়েছে অনুদান দিয়েছে চায়না এইড। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজনের পাশাপাশি সারা বছরই রপ্তানি যোগ্যপণ্য প্রদর্শনীর পরিকল্পনা আছে সরকারের।
গত বৃহস্পতিবার এক্সিবিশন সেন্টার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সিএসসিইসির কর্মকর্তার ইপিবির কর্মকর্তাদের প্রকল্প এলাকাটি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন। বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
এ সময় সিএসসিইসি প্রকল্প পরিচালক চেন লং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আমাদের কাজ শেষ, এক্সিবিশন সেন্টারটি ইপিবিকে বুঝিয়ে দেয়া বাকি। ইপিবি কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তারা শিগগিরিই একটি দিন ঠিক করবে যেদিন আমরা তাদের কাছে সেন্টারটি হস্তান্তর করবো।
চেন লং বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে একটি প্রদর্শনী সেন্টারে যেসব সুবিধা থাকার কথা তার সবই এখানে আছে।
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে ৩০০ ফিট রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে কাঞ্চন ব্রিজ মোড়। সেখান থেকে একটু বামে গেলেই দৃষ্টিনন্দন এই এক্সিবিশন সেন্টার। ২০ একর (৮.১ হেক্টর) জমিতে এই প্রদর্শনী সেন্টার। প্রদর্শনী হলের প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই খোলা যায়গা। পূর্ব ও পশ্চিম দিকে আছে দুইটি সাত হাজার বর্গফুটের প্রদর্শনী হল । সামনের ফুড কোর্ট। দ্বিতীয় তলায় মাল্টি ফাংশনাল কনফারেন্স রুম। যেখানে ৪৭০ জন এক সঙ্গে বসতে পারবে। রয়েছে বাচ্চাদের খেলার যায়গা।
ইপিবির মেলা প্রদর্শনী বিষয়ক পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, বাণিজ্য মেলার মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলো প্রদর্শনী হলের ভেতরে হবে। প্রিমিয়াম প্যাভিলিয়ন বা বড় প্যাভিলিয়ন বাইরে রাখার চেষ্টা করা হবে। এটা আমাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত।
ভেতরের স্টলগুলো ২০ বর্গফুটের হতে পারে জানিয়ে মাহমুদুল হাসান বলেন, এখনও মাস্টার প্ল্যান চূড়ান্ত হয়নি। তবে গতবারের চেয়ে স্টল কম থাকবে। প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলসহ মোট ২৫০ টি জায়গা বরাদ্দ থাকতে পারে।
তিনি বলেন, সেন্টারের পেছন দিকে ছয় একর জায়গা নতুনভাবে আমাদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পেছনে খাবারের স্টল বসবে। আর সামনে থাকবে প্যাভিলিয়ন। দুই হলের মাঝখানে প্রবেশ পথের সামনেই হবে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন।
মেলায় যাতায়াতের জন্য ইতোমধ্যেই বিআরটিসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মাহমুদুল হাসান বলেন, বিআরটিসিকে চিঠি দেয়া আছে। তারা মেলা চলাকালীন সময় শাটল বাস সার্ভিস চালু করবে।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, প্রকল্পে জমির দামসহ এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। ২০ একরের বাইরেও নতুন করে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ছয় একর জমিসহ সব মিলিয়ে ২৬ একর যায়গা।
তিনি বলেন, ইলেক্ট্রিসিটি, পানি ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা মাটির নিচ দিয়ে করা হয়েছে। এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। তখন থেকেই দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্র্যান্ডকে পরিচিত করার একটা মাধ্যম হিসেবে নেন বাণিজ্য মেলাকে। ক্রেতাদের মধ্যেও মেলায় যাওয়ার জন্য ব্যাপক উৎসাহ থাকে। সাধারণত প্রতিবছর ১ জানুয়ারি মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)- মেলা শুরু হয়। তবে এবার করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মেলা পেছানো হয়েছে।
ইপিবির সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ওই দিন মেলার উদ্বোধনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতির অপেক্ষায় আমরা , তিনি মেলার উদ্বোধন করবেন।