প্লট জালিয়াতি: হাসিনা, রেহানা ও যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ভাগ্নি যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের প্রভাবে পূর্বাচলে ৬০ কাঠার মধ্যে ৩টি প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ভাগ্নি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিককে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া পৃথকভাবে শেখ রেহানা, রিজওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তীকে আসামি করা হয়। আর প্লটগুলো বরাদ্দ দেয়ায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের সংশ্লিষ্ট ১৪ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ এসব মামলা করা হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) আক্তার হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শেখ রেহানা এবং তার ছেলে রিজওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তীর নামে ১০ কাঠা করে- মোট ৩০ কাঠার তিনটি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে এসব মামলা করা হয়েছে।
আক্তার হোসেন বলেন, "ব্রিটিশ পার্লামেন্ট মেম্বার টিউলিপ সিদ্দিকী তার প্রভাব খাটিয়ে, বেআইনিভাবে তার খালা শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে এসব প্লট বরাদ্দ নিয়েছে বলে অনুসন্ধান দলের কাছে তথ্যাদি রয়েছে।" তার প্রেক্ষিতে দুদক মামলার সুপারিশ করেছে বলে জানান তিনি।
তাদের তিনজনের বিরুদ্ধে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নং রোড হতে ১০ কাঠা করে মোট ৩০ কাঠার ৩টি প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। শেখ রেহানার মামলায় ১৫ জন এবং ববি ও আজমিনার মামলায় ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন গতকাল (১২ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং আরও ১৪ জনের বিরুদ্ধে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বেআইনিভাবে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছে।
এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন– রাজউকের ১০ জন কর্মকর্তা এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৪ জন কর্মকর্তা।
আক্তার হোসেন বলেন, সায়মা ওয়াজেদ শেখ হাসিনার ক্ষমতা ব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সেক্টর ২৭-এর রোড ২০৩-এর প্লট ০১৭ বরাদ্দ নেন। অথচ ঢাকা শহরে রাজউকের আওতায় তার বা তার পরিবারের নামে বাড়ি, ফ্ল্যাট বা বাসস্থান থাকার পরও তিনি এই প্লট গ্রহণ করেন।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দুদক শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা, রেহানার ছেলে ববি, মেয়ে আজমিনা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৬০ কাঠা সরকারি জমি বেআইনিভাবে দখলের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে।
সেই সময় দুদকের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের জানান, শেখ পরিবারের সদস্যরা গোপনে এবং বেআইনিভাবে সেক্টর ২৭-এর রোড ২০৩-এ প্রস্তাবিত কূটনৈতিক অঞ্চলের ১০ কাঠা করে ৬টি প্লট দখল করেন।
তারা ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম এবং রাজউকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে এই প্লটগুলো বরাদ্দ নেন।
উচ্চ আদালত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দে অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন।
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা ২০২২ সালে এই প্লটগুলো গ্রহণ করেন। বিষয়টি তখন উচ্চ গোপনীয়তার আওতায় রাখা হয়।
রাজউকের ডেপুটি ডিরেক্টর (এস্টেট অ্যান্ড ল্যান্ড-৩) নায়েব আলী শরীফের সই করা চূড়ান্ত বরাদ্দপত্র অনুসারে, প্রতি কাঠার মূল্য ধরা হয় ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১০ কাঠার প্রতিটি প্লটের মূল্য নির্ধারিত হয় ৩০ লাখ টাকা।
শেখ হাসিনার জন্য সেক্টর ২৭-এর রোড ২০৩-এর প্লট ৯ বরাদ্দ করা হয়। বরাদ্দপত্রটি তার নামে ইস্যু হয় ২০২২ সালের ৩ আগস্ট।