ভ্যাকসিনের জন্য সেরাম-কোভ্যাক্সেই ভরসা বাংলাদেশের
করোনাভাইরাস টিকার জন্য এখনও সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কৃত টিকা এবং জাতিসংঘের কোভ্যাক্স (COVAX) জোটের প্রতিশ্রুত সরবরাহের ওপর নির্ভর করে আছে বাংলাদেশ। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন সময়মত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও, তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না, বলে আশা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অক্সফোর্ড প্রতিষেধক ঘিরে সরকারের টিকাদানের প্রস্তুতিও অব্যাহত আছে। এদিকে সেরামের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টিকা দেশে আনবে তারা।
এব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ড/ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ছাড়া অন্যকোন টিকার জন্য কোনো কোম্পানির সাথে আমাদের চুক্তি হয়নি, তবে সবার সাথেই আলোচনা চলছে। রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি ও চীনের একটি কোম্পানির ভ্যাকসিনের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে, তবে এখনো কোন চুক্তি হয়নি।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, দেশের ২০ শতাংশ জনগণের জন্য কোভ্যাক্সের টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। কোভ্যাক্সের প্রতিষেধক পর্যায়ক্রমে পাওয়া যাবে। এবছরের জুনের মধ্যে প্রথম ধাপের কোভ্যাক্সের মাধ্যমে টিকার ডোজ পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশের জন্য সমতার ভিত্তিতে টিকার চালান নিশ্চিত করতে গঠিত হয় কোভ্যাক্স। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাইন্ডেশনের বৈশ্বিক টিকা কার্যক্রম গ্যাভি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- হু'র যৌথ অংশীদারিত্বে এটি পরিচালিত হচ্ছে। এর সহযোগী হিসেবে আছে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের বেশকিছু বৃহৎ টিকা উৎপাদক সংস্থা।
লাইসেন্সের ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক ভারতের পুনেভিত্তিক সেরাম ইনস্টিটিউট-ও কোভ্যাক্সে যুক্ত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সেব্রিনা কোভিড-১৯ টিকাদানে গঠিত 'জাতীয় টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটি'র প্রধান রূপেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, 'আমাদের ভ্যাকসিনেশনের প্রস্তুতি অব্যাহত আছে। একদিনের জন্য আমাদের কাজ থেমে নেই। এখন আমরা স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষিত করছি।'
চলতি বছরের ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশের বৃহৎ ওষুধ উৎপাদক বেক্সিমকো ফার্মা এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউডের সঙ্গে একটি ত্রিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। এর আওতায় সেরামের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা'র টিকা বাংলাদেশে আমদানির লক্ষ্য নেওয়া হয়।
ওই সমঝোতা চুক্তির আওতায়মোট তিন কোটি ডোজ প্রথমে পাওয়ার কথা। জনপ্রতি দুই ডোজ হিসেবে এর মাধ্যমে মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশ বা দেড় কোটি নাগরিককে টিকাদান করা যাবে। সরবরাহের প্রথম ছয় মাসে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে এই তিন কোটি ডোজের চালান বিক্রি করবে সেরাম।
ইতোমধ্যেই,ভ্যাকসিনের মূল্য বাবদ সিরাম ইনস্টিটিউটকে অগ্রিম ৫শ' ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
তবে ভ্যাকসিন রপ্তানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গত ২ জানুয়ারি সেরাম ইনস্টিটিউটের মুখ্য নির্বাহীর বক্তব্যকে ঘিরে সৃষ্ট জটিলতায় দ্রুত ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যদিও পরে ভারত জানিয়েছে ভ্যাকসিন রপ্তানিতে কোনো বাধা নেই। তবুও ভ্যাকসিন দেশে না আসা পর্যন্ত অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে, বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিনের জন্য সরকারকে এখনই বিকল্প উৎস খোঁজা উচিৎ।
এব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের উপদেষ্টা অধ্যাপক মুজাহেরুল হক টিবিএস'কে বলেন, 'বেশিরভাগ দেশ এখন একাধিক উৎস থেকে টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের উচিৎ অবিলম্বে অন্যান্য উৎস আমদানির চিন্তা করা। এক্ষেত্রে চীন বা ইন্দোনেশিয়া হতে পারে সবচেয়ে ভালো উৎস।'
দেশের প্রখ্যাত জীবাণু বিশেষজ্ঞ (ভায়রোলজিস্ট) অধ্যাপক নজরুল ইসলাম টিবিএস'কে বলেন, "ভ্যাকসিনের জন্য একটি উৎসের ওপর নির্ভর না করে সরকারকে একাধিক উৎসের সঙ্গে চুক্তি করতে হতো। দেশে চীনের সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করতে দিলে আজ একটি বিকল্প উৎস থাকতো আমাদের হাতে। আর সময় নষ্ট না করে ভ্যাকসিনের একাধিক সোর্স এখনই খোঁজা উচিৎ।''
তবে বেক্সিমকো জানিয়েছে বিদ্যমান চুক্তি অনুযায়ী-ই তারা নির্দিষ্ট সময়ে ভ্যাকসিন দেশে আনবে।
ওষুধ খাতের স্থানীয় জায়ান্টটির প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (সিওও) রাব্বুর রেজা টিবিএস'কে জানান, "আমরা এখনো রেগুলেটারি অথরিটির স্বীকৃতি পাইনি। শুধু ভ্যাকসিন আনার এনওসি পেয়েছি। আজ বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) এক্সপার্ট কমিটির মিটিং হয়েছে। তারা সব কাগজপত্র দেখে যখন সবুজ সংকেত দেবেন- তার এক মাসের মধ্যে আমরা ভ্যাকসিন আনবো।''
আমরা এখনো বিশ্বাস করি সঠিক সময়েই আমরা ভ্যাকসিন আনতে পারবো, রাব্বুর রেজা যোগ করেন।