মানসিক সমস্যায় ভুগছেন কোভিড-১৯ সম্মুখ যোদ্ধারা
দেশে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা দেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীরা স্লিপ ডিজওর্ডার, অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশনসহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগ বিভাগের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
সম্মুখ যোদ্ধাদের মধ্যে নার্স, ওয়ার্ডবয়দের তুলনায় চিকিৎসকদের মধ্যে অ্যাংজাইটি, স্লিপ ডিসঅর্ডার ও ডিপ্রেশনে ভোগার হার বেশি।
'মেন্টাল হেলথ ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯ প্যানডেমিক অন হেলথ কেয়ার প্রফেশনালস ইন বাংলাদেশ: অ্যা ক্রস সেকশনাল স্টাডি' শিরোনামের ওই গবেষণায় দেখা যায়, ২১.১ শতাংশ চিকিৎসক ও ৬ শতাংশ স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট পেশাজীবী অ্যাংজাইটিতে এবং ১৮ শতাংশ চিকিৎসক ও ৬.৮ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী ডিপ্রেশনে ভুগছেন। অ্যাংজাইটি ও ডিপ্রেশনের এই হার ২০১৮-২০১৯ সময়কালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সবচেয়ে সাম্প্রতিক জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে উঠে আসা হারের চেয়ে অনেক বেশি।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে ডিপ্রেশনের হার ছিল ৬.৭ ও অ্যাংজাইটির হার ৪.৫ শতাংশ।
গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসকেরা স্লিপ ডিজঅর্ডারে ভুগছেন। করোনাকালে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে স্লিপ ডিজঅর্ডারে ভোগার হার ৫.৯ শতাংশ, কোভিড আসার আগে সেটি ছিল মাত্র ০.৯ শতাংশ।
গবেষণায় বলা হয়, প্রাথমিক সেবা কেন্দ্রে (থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) যারা চিকিৎসা দেন, তাদের তুলনায় কোভিড হাসপাতাল শাখাগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে অ্যাংজাইটি তুলনামূলক কম। অন্যদিকে, নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের তুলনায় চিকিৎসকরা অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন ও স্লিপ ডিসঅর্ডারে বেশি ভোগেন।
এই গবেষণায় ৪৭৯ জন স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবী অংশ নেন। এদের মধ্যে ৩৬৬ জন চিকিৎসক এবং ১১৩ জন নার্স, ওয়ার্ড বয়, ল্যাব টেকনিশিয়ান-সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, যারা কোভিড ডেডিকেটেড ইউনিটে কাজ করেছেন। ২০২০ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালনা করা হয় গবেষণাটি।
দেশে করোনাভাইরাসের শুরু থেকে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা দেওয়া একাধিক চিকিৎসক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তারদের কোয়ারেন্টিনের কারণে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়, কাজ করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে, এছাড়া প্রতিনিয়ত কাছের সহকর্মীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এছাড়া টানা কাজ করার ও অনিশ্চয়তার কারণে মানসিক সমস্যার ভুগছেন তারা।