যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে বিক্ষোভ 'ওয়ার্ল্ড মাস্টারপিস': চীনা গণমাধ্যম
গত ৭ তারিখ থেকেই টুইটারের সমতুল্য চীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবো-তে 'কী চমৎকার দৃশ্য' চলমান ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। ২০১৯ সালের জুনে হংকং-এ গণতন্ত্রপন্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলসি হাজার হাজার মানুষের রাস্তায় নেমে আন্দোলনের দৃশ্যকেই সেসময় 'কী চমৎকার দৃশ্য' বলে মন্তব্য করেছিলেন।
২০১৯ সালের জুলাইতে হংকং এর আইন সভার বাইরে বিক্ষোভকারীদের জমায়েতের ছবি ও মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষোভের ছবি পাশাপাশি প্রকাশ করেছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমস।
ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের প্রবেশের ছবি পোস্ট করে একই উক্তি ব্যবহার করেছে চীনের কমিউনিস্ট ইয়ুথ লিগও। এ ঘটনাকে 'ওয়ার্ল্ড মাস্টারপিস' হিসবেও অভিহিত করা হয়। ওয়েইবোর এসব পোস্টগুলোতে হাজার হাজার মানুষ মন্তব্য করছেন, শেয়ারও হয়েছে হাজার হাজার বার।
বিগত বছরে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে চীনে অর্থনৈতিক ও প্রবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়ে। সেইসাথে দেশটির একটি সম্পূর্ণ প্রজন্মের মধ্যে অন্যান্য দেশ ও বিদেশিদের প্রতি বিতৃষ্ণার জন্ম হয়।
চীনা সরকার সবসময়ই জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদ টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। যখন বিদেশি গণমাধ্যমগুলো চীনের বিদ্যমান সমস্যাগুলো তুলে ধরে, চীনে একে শত্রুভাবাপন্ন বিদেশি শক্তি হিসেবেই গণ্য করা হয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের গজণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েলে চীনের অধিবাসীদের উদযাপন শুরু হয়।
এই উদযাপনকেই আরও চাঙ্গা করে তুলতে সাংবাদিকদের প্রতিবেদন লিখতে বলা হচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংবাদ মাধ্যমের একজন সাংবাদিক তাকে কীভাবে প্রতিবেদন লেখার নির্দেশনা দেয়া হয় তা সামনে নিয়ে এসেছেন।
কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে তা তুলে ধরতে বলা হয় তার প্রতিবেদনে। ক্যাপিটলে সহিংসতার ঘটনায় বৈশ্বিক নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেশগুলোর বন্ধুত্বের ব্যাপারে তারা চিন্তিত- তার প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়। একদল 'অশিক্ষিত' মানুষ কীভাবে গণতন্ত্র ছিনিয়ে নিতে পারে, কোনো দেশের জনগোষ্ঠী উচ্চশিক্ষিত হলেই কেবল 'গণতন্ত্র' তাদের জন্য জুতসই এবং চীনের জনগণ এখনো গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য উপযুক্ত নয়- এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ঘটনাগুলো ব্যখ্যা করার নির্দেশনা দেয়া হয় তাকে।
চীনের গণমাধ্যম ফিনিক্স মিডিয়া-তে ট্রাম্পের টুইটার ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধের ব্যাপারটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোতে 'মত প্রকাশের স্বাধীনতা' নেই বলে উল্লেখ ক্লরা হয়। এসংক্রান্ত আলোচনার ঝড়ও বইছে অনলাইনে।
চীনা সরকারের বিভিন্ন ওইয়েবসাইট কন্টেন্ট মুছে দেয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরোধী মতামত মুছে দেয়া ও অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়ার সমালোচকারী পাশ্চাত্য গণমাধ্যমের ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ রাখার ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গিকে দ্বিচারিতা বলেও সমালোচনা শুরু হয়েছে।