রডের দাম বৃদ্ধিতে সরকারি নির্মাণ প্রকল্প গতি হারানোর শঙ্কায় ঠিকাদাররা
এমএস (মাইল্ড স্টিল) রডের দাম বৃদ্ধির ফলে সরকারের চলমান নির্মাণ প্রকল্পগুলো গতি হারাতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএসিআই)।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এমএস রডের দাম বাড়ানোর ফলে এই পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে বলে মনে করছে সংগঠনটির নেতারা। এই অবস্থায় বিএসিআইয়ের পক্ষ থেকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত নিয়মের বিধান অনুযায়ী সকল নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে মূল্য সমন্বয় বা রেট এসকেলেশনের দাবি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জানায়, সিন্ডিকেট করে বর্তমান বাজারে এমএস রডের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে নির্মাণ খাত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তাদের দাবি, এর ফলে ইতোমধ্যে সরকারের অনেক নির্মাণ প্রকল্পের গতি হারিয়েছে। যে দামে টেন্ডার বিট করা হয়েছিল তার সাথে সমন্বয়ের সুযোগ তৈরি না করা হলে এবং বাজারে রডের দাম অপরিবর্তিত থাকলে, এই অবস্থা আরো জটিল হবে দাবি তাদের।
সংগঠনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এসএম খোরশেদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যার্ন্ডাডকে বলেন, গত এক দশকে এখাত বেশ ভালো করছে। এখন অতিরিক্ত মুনাফার জন্য ওনারা দাম বাড়ানোর ফলে নির্মাণ শিল্পের সংশ্লিষ্ট আরো বেশ কিছু পণ্যেরও দাম বাড়তে শুরু করেছে।
ইতোমধ্যে সিমেন্ট ব্যবসায়ীরা ক্লিংকারের দাম বাড়ছে এমন ইংগিত দিয়ে কথা বলছে। যেহেতু রডের দাম এখন চড়া, তারাও দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া বাজারে পাথরেরও সংকট আছে। সেটারও দাম বাড়তির দিকে।
এভাবে সব পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে আমাদের পক্ষে সরকারি- বেসরকারি সব ধরনের নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না।
বিশ্ব বাজারে কাঁচামালের (স্ক্র্যাপ) দাম বাড়ার যে কথা মিল মালিকরা বলছে সেটা অনেকাংশে যৌক্তিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, এব্যাপারে দ্রুত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে সরকারের আলোচনা হওয়া জরুরী।
এভাবে চলতে থাকলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে সংগঠনটির পরিচালক হাসাব মাহমুদ বাবু দ্য বিজনেস স্ট্যার্ন্ডাডকে বলেন, করোনার ক্ষতি কাটিয়ে যখন নির্মাণ খাত ঘুরে দাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখনই মিল মালিকরা এসব পণ্যের অযাচিত দাম বৃদ্ধি করছে।
তিনি বলেন, ২০২০ এর নভেম্বর মাসে আমরা প্রতিটন এমএস রড কিনেছি ৫০ হাজার টাকায়। সেটার আজকের (শুক্রবার) বাজার দর ৬৯ হাজার ৯০০ টাকা। গত ডিসেম্বরে এটা ৬৫ হাজার পর্যন্ত উঠেছিল।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর কথা অস্বীকার করে বাংলাদেশে স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ মাসুদুল আলম মাসুদ দ্য বিজনেস স্ট্যার্ন্ডাডকে বলেন, কোভিডের কারণে আর্ন্তজাতিক বাজারে কাঁচামালের (স্ক্র্যাপ) দাম বাড়ার ফলে দেশে রডের দাম বেড়েছে। এছাড়া গত বছর পুরোনো জাহাজ আমদানি কম হওয়ায় কাঁচামালের সংকট আছে।
তিনি বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমরা প্রতিটন স্ক্র্যাপ আমদানি করেছিলাম ২৭০ ডলারে। এখন সেটা আমদানি করতে হচ্ছে ৫০০ ডলারের বেশি। শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণ কাজ বেশি হওয়ায় আগামী দুই এক মাসে দেশের বাজারে রডের দাম বেড়ে প্রতিটন ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে ট্রেডিং ইকোনোমিক্স বলছে, বিশ্ব বাজারে প্রতিটন ফিনিশড রডের দাম গত নভেম্বরে ছিল ৫০ হাজার ৫০০ টাকা। ডিসেম্বরে তা একটু বেড়ে গিয়ে হয় ৫১ হাজার। তবে চলতি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ শেষে প্রতিটন ফিনিশড রড বিক্রি হচ্ছে ৫৫ হাজার টাকায়।
সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পাশপাশি বেসরকারিভাবে দেশে লোহাজাত পণ্যের বাজার বাড়ায় প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি ও বিশ্ব বাজারের সাথে সংগতিপূর্ণ দাম নির্ধারণে উদ্যোগী হওয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, এসব ব্যবসা হাইলি প্রফিটেবল হওয়ায় ভোক্তারা ঠকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সুতরাং ফিনিশড পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোগ্য পণ্যের মতো এখানেও বাজার মনিটরিং হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরির জন্য আমদানি শুল্ক কমায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন তিনি।