ভ্যাকসিন কূটনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনকে ঠেকাচ্ছে ভারত
আগামী কয়েক সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোকে কোভিড-১৯ টিকার লাখ লাখ ডোজ সরবরাহ করবে ভারত। দেশটির সরকারি সূত্র আজ বৃহস্পতিবার একথা জানায়। এই সিদ্ধান্ত প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে প্রশংসিত হয়েছে। আবার, তাতে এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে নয়াদিল্লি।
আজ বৃহস্পতিবার থেকেই সেরাম ইনস্টিটিউড উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ফ্রি চালান প্রতিবেশী বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটানে সরবরাহ করেছে ভারত।
পরবর্তী পর্যায়ে বিনামূল্যের সরবরাহ পাবে মিয়ানমার ও সিচেলেস। এভাবেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ লাইসেন্সকৃত ওষুধ উৎপাদক হওয়ার শক্তিকে বন্ধুত্ব জোরদারে কাজে লাগাচ্ছে দেশটি।
ভারতের প্রশংসা করে নেপালের জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী হৃদয়েশ ত্রিপাঠি বলেন, "উপহার হিসেবে টিকার চালান পাঠিয়ে ভারত সরকার তাদের সদিচ্ছা দেখিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সরাসরি জনগণকে সহায়তা করার ইচ্ছা, কারণ কোভিড-১৯ সংক্রমণে তাদের দুর্ভোগই সবচেয়ে বেশি।"
ভারত-নেপাল সম্পর্কে সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্কিত অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। এছাড়া, হিমালয় পর্বতমালা বেষ্টিত দেশটিতে চীনের ক্রমশ বেড়ে চলা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়েও উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি। এসব ঘটনার মধ্যেই সেখানে টিকার ডোজ উপহার পাঠানো হলো।
নেপালের অপর বৃহৎ প্রতিবেশী এবং ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনও মহামারী মোকাবিলায় দেশটিকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু, নেপাল এখনও চীনের সিনোফার্মের তৈরি প্রতিষেধকের অনুমোদন দেয়নি।
নেপালের ওষুধ প্রশাসনের মুখপাত্র কে.সি. সন্তোষ বলেন, "অনুমোদনের আগে আমরা সিনোফার্মকে আরও নথিপত্র এবং তথ্য দেওয়ার অনুরোধ করেছি।"
এর আগে বাংলাদেশেও এক লাখ ১০ হাজার বিনামূল্যের ডোজ সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিল চীনের আরেক টিকা উৎপাদক সিনোভ্যাক বায়োটেক। তবে দ্বিপাক্ষিক তহবিলের সহায়তায় ট্রায়াল চালানোর ওই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সায় দেয়নি। ফলে পরিবর্তীতে এ উদ্যোগ বাতিল হয়ে যায়।
তার বদলে টিকা পেতে ভারতমুখী হয় বাংলাদেশ। আর আজ বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও ভারতের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ এসে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশের এক শীর্ষ জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, "ভারত অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথভাবে উদ্ভাবিত টিকা উৎপাদন করছে। এর ফলে তাদের উপর ভরসা রাখা যায়। প্রতিষেধকটি সাধারণ ফ্রিজারের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ও পরিবহন করা সম্ভব। বাংলাদেশের মতো দেশের প্রচলিত অবকাঠামোর জন্য যা খুবই উপযুক্ত।"
বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশ; যেমন শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপে চীনের বিপুল বিনিয়োগ মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে নয়াদিল্লি। এসব দেশে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে শত শত কটি ডলার ব্যয়ে বন্দর, মহাসড়ক, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করেছে চীন।
দেশ তিনটির অর্থনীতি অনেকাংশে পর্যটন নির্ভর। তাই দ্রুত টিকাদানের মাধ্যমে তারা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে মরিয়া। সেই সুযোগেই হারানো প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার। ভারতীয় কূটনীতিক সূত্র এমন ইঙ্গিত-ই দেয়।
ভারতের সরকারি একটি সূত্র জানায়, আগামী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রথম ধাপের সহায়তার অংশ হিসেবে প্রতিবেশীদের এক কোটি ২০ লাখ থেকে ২ কোটি টিকার ডোজ উপহার হিসেবে দেওয়া হবে।
এছাড়া, প্রতিবেশী কিছু দেশে স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং টিকাকেন্দ্র স্থাপনে সহায়তাও দিচ্ছে ভারত।
ভারতের প্রাক্তন এক রাষ্ট্রদূত রাজীব ভাটিয়ার মতে, "খুব সতর্কতার সঙ্গে এবং একটির সঙ্গে অন্যটির সঙ্গতি রেখে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে আমাদের 'প্রতিবেশী প্রথম' নীতিটি যে বাস্তব তা সবার কাছে স্পষ্ট হয়েছে।"
"বিজ্ঞান ও ওষুধ শিল্পের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রভাব বিস্তারে এটাই ভারতের উজ্জ্বলতম মুহূর্ত," তিনি যোগ করেন।
- সূত্র: রয়টার্স