দাপুটে জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
নিয়মিত দলের ১৩ জন নেই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলটিকে দ্বিতীয় সারির বলতে একবারও ভাবেনি কেউ। এমন দলের বিপক্ষে দাপুটে জয় আসবে, সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ; এটা প্রত্যাশিতই ছিল। মাঠের লড়াইয়ে হলোও তাই। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের বিপক্ষে লড়াই করতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে তামিম ইকবালের দল।
শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের।
ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের টানা তৃতীয় ও সব মিলিয়ে পঞ্চম ওয়ানডে সিরিজ জয়। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো উইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। এরপর ঘরের মাটিতে ২০১২ সালে একটি এবং ২০১৮ সালে দুটি ওয়ানডে সিরিজ জেতেন তামিম-মুশফিকরা।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে এদিনও ধুঁকেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচসেরা মিরাজ, সাকিব, মুস্তাফিজদের বোলিং তোপে ৪৩.৪ ওভারে ১৪৮ রানে অলআউট হয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও সফরকারীদের কোনো ব্যাটসম্যান ৫০ পেরোতে পারেননি। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটা তাদের তৃতীয় সর্বনিম্ম দলীয় সংগ্রহ।
জবাবে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে কোনো ঝক্কি পোহাতে হয়নি বাংলাদেশকে। অধিনায়ক তামিম ইকবালের হাফ সেঞ্চুরি ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটে ৩৩.২ ওভারে তিন উইকেটেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের টানা সপ্তম জয়।
লক্ষ্য ছোট হলেও বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। দলীয় ৩০ রানে আকিল হোসেনের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন লিটন দাস। আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিং করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ২৪ বলে ৪টি চারে ২২ রান করে আউট হন তিনি।
সাকিব আল হাসানের বদলে তিনে জায়গা পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে এগোতে থাকেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এই জুটিতে ৪৭ রান পায় বাংলাদেশ। শান্ত ১৭ রান করে ফেরেন। সাকিবকে নিয়ে আরও কিছুটা পথ পাড়ি দেন তামিম। এ সময় ৭৫ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। ঘরের মাটিতে শততম ওয়ানডে খেলতে নেমে সাকিবকে পেছনে ফেলেছেন তামিম। ওয়ানডেতে সাকিবের হাফ সেঞ্চুরি ৪৭টি।
হাফ সেঞ্চুরি করে তামিম ফেরার পর জয় তুলে নেওয়ার বাকি কাজটুকু সারেন সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। সাকিব ৪৩ ও মুশফিক ৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকিল হোসেন, জেসন মোহাম্মদ ও রেমন রেফার একটি করে উইকেট পান।
এরআগে অতি সাবধানি শুরু করেও উদ্বোধনী জুটিতে ভালো কিছু করতে পারেননি সুনীল আমব্রিস ও কেয়র্ন ওটলি। দলীয় ১০ রানেই আমব্রিসকে সাজঘর দেখিয়ে দেন আগের ম্যাচে প্রথম দুই উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজুর রহমান। ওটলি অনেকক্ষণ উইকেটে থেকেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২৪ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার হন তিনি।
কিছুক্ষণ পর মিরাজের আরও একটি আঘাত। এবার তার শিকার জশুয়া ডা সিলভা। ৩৭ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ক্যারিবীয়রা যখন মাঝ দরিয়ায়, তখন স্পিন ভেল্কি নিয়ে হাজির সাকিব। প্রথম ওয়ানডেতে মাত্র ৮ রানে ৪ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি এই স্পিনার ফিরিয়ে দেন আন্দ্রে ম্যাকার্থিকে।
দলের দুঃসময়ে হাল ধরার চেষ্টা করে কাইল মেয়ার্সও কিছু করতে পারেননি। রান আউট হয়ে ফিরতে হয় তাকে। শেষের দিকে গিয়ে কিছুটা লড়াই করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এনক্রুমাহ বোনার ২০ রান করেন। ১৭ রান করেন আলজারি জোসেফ। দীর্ঘক্ষণ উইকেটে থেকে ৬৬ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৪১ রানের ইনিংস খেলেন রভম্যান পাওয়েল।
দারুণ বোলিং করা মিরাজ ২৫ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন, যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ছন্দ ফিরে পাওয়া সাকিব ৩০ রানে নেন ২ উইকেট। মুস্তাফিজের শিকারও ২ উইকেট। ৭.৫ ওভারে তার খরচা মাত্র ১৫ রান। একটি উইকেট নেন আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়া হাসান মাহমুদ। আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও উইকেটশূন্য থেকে গেছেন রুবেল হোসেন।