ঝলমলে প্রত্যাবর্তনে লিটনের অনুপ্রেরণা টিমবয় শাহিন
দুঃস্বপ্নের এক অধ্যায় পেছনে ফেলে রানে ফিরেছেন লিটন কুমার দাস। বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে আগের ম্যাচে ৭৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলা উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান রোববার দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে হয়ে উঠলেন দুর্দান্ত। তাক লাগিয়ে দেওয়া ব্যাটিংয়ে রান খরাকে পাঠালেন ছুটিতে, তুলে নিলেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ফেরার পর্বে কৃতজ্ঞতা জানালেন লিটন, তবে এও বলে রাখলেন, কৃতজ্ঞতা জানানো ব্যক্তিকে যেন কোচ বানিয়ে ফেলা না হয়।
জাতীয় দলে লম্বা সময় ধরে রানের দেখা পাননি লিটন, কোনো ফরম্যাটেই হাসছিল না তার ব্যাট। চলমান বিপিএলেও আটকে ছিলেন ব্যর্থতার বৃত্তে, এক ম্যাচে একাদশ থেকে বাদও পড়েছেন। ঢাকা ক্যাপিটালসে নিজের প্রথম চার ম্যাচে করেন মাত্র ৪২ রান। পঞ্চম ম্যাচ দিয়ে রানে ফিরলেও পরের দিন খবর পেলেন বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বাদ পড়ার। এদিনই কিনা তার ব্যাট হয়ে উঠলো তরবারি, সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ৫৫ বলে ১০টি চার ও ৯টি ছক্কায় খেললেন ১২৫ রানের হার না মানা অসাধারণ এক ইনিংস। ম্যাচের পর রানে ফেরার গল্প শোনাতে গিয়ে স্ত্রী সঞ্চিতা দাসকে দিলেন কৃতিত্ব, উল্লেখ করলেন ঢাকা ক্যাপিটালসের টিমবয় শাহিনের পরামর্শের কথাও।
কেবল পরামর্শই নয়, খারাপ সময়ে শাহিন যেভাবে সাহস যুগিয়েছেন; তা নিজেকে খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে লিটনকে। ঢাকা ক্যাপিটালসের এই টিমবয় গত তিন-চার বছর কাজ করেছেন এবারের আসরে অংশ না নেওয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে। বিপিএলের সর্বশেষ তিন আসরে লিটন এই দলটিতে খেলায় তার আশেপাশে থেকেছেন শাহিন। লিটনের অনুশীলন, খেলার ধরন সবই দেখা তার। দীর্ঘ সময়ে সম্পর্ক গড়ে ওঠার কারণেই হয়তো সাহস যোগানোর পাশাপাশি আরেকটু সাহস দেখিয়ে প্রিয় ক্রিকেটারকে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন শাহিন।
সংবাদ সম্মেলনে এসে শ্রদ্ধার সঙ্গেই শাহিনের নামটি উচ্চারণ করেন লিটন, তবে সংবাদমাধ্যমকে বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান জানিয়ে রাখেন 'বাড়াবাড়ি' না করার অনুরোধও। লিটন বলেন, 'সবার স্ত্রী তো সবাইকে সাপোর্ট করে। এদিক থেকে কমতি কখনই ছিল না। শাহিনের কথাটা যেটা আমি বলব, সে দলে কাজ করছে আমাদের হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে। সে শেষ তিন-চার বছর কুমিল্লার সঙ্গে ছিল। সে আমার খেলাটাও দেখছে। জিনিসটা এমন না যে বয় দেখে খেলাটা বুঝবে না।'
'যারা নিয়মিত অনুশীলন করায়, তারাও কিন্তু ছোট ছোট ইনফরমেশন দিতে পারে। আমার কাছে মনে হয় ও ওইটুকু ক্যাপাবল যে, একটা ব্যাটসম্যানের কোথায় ভুল হচ্ছে বা কী হচ্ছে… এটা দেখে আবার নিউজ বানাবেন না যে ও কোচ হয়ে গেছে। আমি বলছি প্র্যাকটিক্যালি জিনিসটা যে, একটা মানুষ যখন অনুশীলন করায়, তখন ছোট ছোট জিনিস ধরতে পারে। আমি শেষ কয়েকদিন ধরে তার সঙ্গে অনুশীলন করেছি, সে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।' যোগ করেন লিটন।
অনুশীলনের সময় শাহিনের কথা শুনে লিটনের মনে হয়েছে, কিছু পরিবর্তন আনলে উপকৃত হতে পারেন। তার ভাষায়, 'ওর কয়েকটা কথা বার্তায় আমার মনে হয়েছে পরিবর্তন করলে আমার জন্য ভালো হতে পারে, ওইটুকুই। এর জন্য ওকে ধন্যবাদ দিলাম যে, যেকোনো ভাবেই হোক না কেন প্রতিটা কোচই যে আমাকে সাহায্য করবে, বিষয়টা তা না। যেকোনো মানুষই একটা সাহায্য করতে পারে, যদি আমার কাছে মনে হয় এটা নেওয়ার মতো… থ্যাংকস। শেষ কয়েকদিন ধরে ইনিংস খুব একটা ভালো হচ্ছিল না। ও আমাকে সমর্থক করেছে। বলেছে, "এটা কিছুই না, স্বাভাবিক অনুশীলন করলে, কী কী জিনিস হচ্ছে, এটা করলে ঠিক হয়ে যাবে।'
রান করা যেন ভুলে গিয়েছিলেন লিটন। ওয়ানডেতে সর্বশেষ সাত ম্যাচে দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি এই ডানহাতি, তিন ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। সর্বশেষ সাত ওয়ানডেতে তার রান যথাক্রমে ৬, ১*, ০, ০, ২, ৪, ০। এই ফরম্যাটে লিটন সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ১৫ মাস ও ১৩ ইনিংস আগে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৬৬ রান করেন তিনি। কেবল ওয়ানডেতেই নয়, বাকি দুই ফরম্যাট টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে ছন্দে ছিলেন না লিটন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১৭ রান করেন তিনি। তার ইনিংসগুলো যথাক্রমে ০, ৩ ও ১৪। টেস্টে কিছু রানের দেখা পেলেও সেটা উল্লেখ করার মতো নয়। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি লিটন, সর্বোচ্চ ইনিংস ৪০ রানের। রান খরা কাটিয়ে লিটন ফিরলেন দোর্দণ্ড প্রতাপে, চার-ছক্কার ফুলঝুরি সাজিয়ে করলেন সেঞ্চুরি, রঙিন কালিতে লিখে রাখলেন প্রত্যাবর্তনের গল্প।